বেপাত্তা সায়নী: ইডি ডাকলেই বেরিয়ে যায় হাওয়া! কীসের নেত্রী ইনি? - nagariknewz.com

বেপাত্তা সায়নী: ইডি ডাকলেই বেরিয়ে যায় হাওয়া! কীসের নেত্রী ইনি?


বিশেষ প্রতিবেদন: মঙ্গলবার রাতে সায়নী ঘোষের দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড়ের বাড়িতে নোটিশ পাঠায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর বুধবার সকাল থেকেই বেপাত্তা বেপরোয়া নেত্রী! ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বিষয়আসয় নিয়ে তাঁকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান ইডির আধিকারিকেরা। এতেই সব হাওয়া বেরিয়ে গেল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রীর! সায়নী ঘোষকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল মঙ্গলবার রাতে বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামে। পরদিন সায়নীর প্রচার করার কথা ছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর এলাকায়। সায়নী ঘোষ রাজ্য যুব তৃণমূলের কান্ডারী। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সেই পদে অভিষিক্ত করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটের ভরা বাজার। সায়নীর কাঁধে কত বড় দায়িত্ব। কিন্তু সায়নী হাওয়া! শোনা যাচ্ছে দলের লোকেরাই যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রীর হদিস পাচ্ছেন না।

শুক্রবার সকাল ১১টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দফতরে তাঁকে দেখা করতে বলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে প্রথমবার‌ই সচরাচর কাউকে গ্রেফতার করে না ইডি-সিবিআই। গরু পাচার মামলায় তৃণমূল সাংসদ তথা টলিউডের সুপারস্টার দেবকেও নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। দেব সায়নীর মতো গায়েব না হয়ে সিবিআই অফিসারদের মুখোমুখি গিয়ে বসেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ মিটলে হাসিমুখে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন দেব। সায়নীর সেই সাহস নেই কেন? সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে দেদার খিল্লি শুরু হয়ে গেছে। বিরোধীরাও কটাক্ষে ভরিয়ে দিচ্ছেন। সবার একটাই প্রশ্ন- কুন্তলের টাকা থেকে ভাগা নিয়ে গাড়ি-বাড়ি না বানিয়ে থাকলে ইডির একটি নোটিশেই বাঘিনী সায়নী ভ্যানিশ কেন?

প্রবাদ আছে খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল শেষে এঁড়ে কিনে। সায়নী ঘোষ শুধু সিনেমা নিয়ে পড়ে থাকলেই পারতেন। অভিনয়টা ভালোই জানেন। সৎপথে টলিউডে নিজের পেশায় পড়ে থাকলে রোজগার হয়তো কম হত কিন্তু এই দিন তাঁকে ও তাঁর প্রিয়জনদের দেখতে হত না। একুশে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূলে ভিড়ে যান সায়নী ঘোষ। দলের মনোনয়ন‌ও জুটে যায় আসানসোল দক্ষিণ থেকে। বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের কাছে হারলেও এক মাস যেতেই সায়নী ঘোষকে রাজ্য যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী পদে অভিষিক্ত করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টলিপাড়ার একজন অভিনেত্রী কোন জাদুতে রাতারাতি শাসকদলের যুব সংগঠনের শীর্ষে চড়ে বসেন, মানুষ কিন্তু বোঝে।

হালকা মুডে সায়নী ও কুন্তল। দু’জনের সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল বলে জানতে পেরেছে ইডি। ফাইল ফটো

কুন্তল ঘোষ কাজের ছেলে। হুগলি জেলা যুব তৃণমূলের নেতা ছিল। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে নিজের ভাগা রেখে জায়গা মতো পাঠাতো। কাঁচা টাকা থাকলে টলিউডের নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে ঢলাঢলি করার সুযোগ পাওয়া যায়।‌ কাজের ছেলে কুন্তল হাত গুটিয়ে বসে থাকবে কেন। কুন্তল‌ও সুযোগ নিয়েছিল। সায়নী ঘোষ যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী হ‌ওয়ার পরেই নাকি কুন্তলের বিরাট পদোন্নতি। হুগলি জেলা থেকে সোজা যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তলকে গত ১১ জানুয়ারি গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। টলিপাড়ার কারা কুন্তলের টাকায় ফুটানি মেরেছে, তাদের নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সায়নী ঘোষের সঙ্গে তাঁর দহরম-মহরমের কথাও ইডির আধিকারিকদের কাছে উগড়ে দেয় কুন্তল। নামে-বেনামে কুন্তলের সম্পদের পরিমাণ নেহাতই কম নয়। সেই সব সম্পদের সঙ্গে সায়নী ঘোষের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

সায়নী ঘোষ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তলের টাকায় কটা ফ্ল্যাট-গাড়ি কিনেছেন কিম্বা আদৌ কিনেছেন কিনা আমরা জানি না। কিন্তু ইডির তলব পাওয়া মাত্রই সায়নীর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাঁর দিকে আঙুল তোলার সুযোগ করে দিচ্ছে। মঞ্চে মানস ভুঁইয়ার তালে তাল মিলিয়ে তিনি যেই জোশের সঙ্গে ‘লাগাও’ বলেছিলেন, সেই জোশের সঙ্গে ইডির মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন কেন?

Feature Image is Representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *