'অভিন্ন দেওয়ানি বিধি' নিয়ে কেজরিওয়ালের দলের অবস্থান বাকি বিরোধীদের থেকে ভিন্ন - nagariknewz.com

‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ নিয়ে কেজরিওয়ালের দলের অবস্থান বাকি বিরোধীদের থেকে ভিন্ন


ডেস্ক রিপোর্ট: এক সংসারে এক আইন চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।‌ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশ‌টাই সংসার। মঙ্গলবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধির হয়ে স‌ওয়াল করে মোদী বলেছিলেন, “প্রতি সদস্যের জন্য আলাদা আইন থাকলে সংসার চালানো যায় না।” অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনেই কেন্দ্রীয় সরকার বিল আনতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিকে বিরোধী শিবির যখন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন্দ্র ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব তখন ভিন্ন সুর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গলায়।

কেজরিওয়াল নিজে কিছু না বললেও‌ আম আদমি পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সন্দীপ পাঠকের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে একটি সাক্ষাৎকারে সন্দীপ বলেছেন, “দেশের সকলের জন্য অভিন্ন আইনের পক্ষে আমরা। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা দরকার।” স্বাধীন হ‌ওয়ার পর থেকে দেশে যখন‌ই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার দাবি উঠেছে, নানা ছুতোয় পিছিয়ে গেছে সরকার। যদিও সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা বরাবরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির তীব্র বিরোধী। এদের চাপে আশীর দশকে রাজীব গান্ধী অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে আসেন।

বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম এক দেশ এক আইন বলবৎ। কেন্দ্রীয় সরকারের আইন কমিশন ইতিমধ্যেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ব্যাপারে দেশের নাগরিকদের মতামত জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে যে বিরোধী দলগুলি এক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে, তাদের মধ্যে কংগ্রেস, বাম, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, জেডিইউ এবং তৃণমূলের অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে সায় নেই। এই দলগুলির অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা করার কারণটা খুব স্পষ্ট। সংখ্যালঘুদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে, এই রকম আইনের বিরোধিতা করা এদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেজরিওয়াল যে ভিন্ন পথের পথিক, তা স্পষ্ট হয়ে গেল তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর কথায়। আম আদমি পার্টির বক্তব্য, যে হেতু দেশের সংবিধানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলা আছে, তাই সংবিধান মেনেই তারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে চায়।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আপ কেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বাকি বিরোধী দলগুলি থেকে ভিন্ন অবস্থানে? অনেকেই মনে করছেন, কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির একটা আলাদা ভোটব্যাঙ্ক আছে। আপকে যারা ভোট দিয়ে বারে বারে দিল্লিতে ক্ষমতায় ফেরাচ্ছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু হলে রুষ্ট না হয়ে তুষ্ট‌ই হবে তারা। তাই ভোটের দিকে তাকিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা না করলেও কেজরিওয়ালের চলবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কারণেই আপ ও কংগ্রেসের দূরত্ব ঘোচার নয়। আপের উত্থানে দিল্লিতে কংগ্রেসের জনভিত্তি তছনছ হয়ে গেছে। দিল্লি সরকারের আমলা নিয়োগে নিয়ন্ত্রণ চেয়ে অর্ডিন্যান্স এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্ডিন্যান্সটি বিল হয়ে সংসদে উত্থাপনের সময় কংগ্রেস বিরোধিতা করবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন আপ নেতৃত্ব। পাটনায় বিরোধী দলগুলির বৈঠকে এই প্রশ্ন তুললেও হালে পানি পান নি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। রাগে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের আগেই পাটনা ছাড়েন কেজরিওয়াল।

তেমন হলে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তারা একলাই চলবে, এমন ইঙ্গিত দিতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে নিজেদের অবস্থান আপ স্পষ্ট করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কংগ্রেসের অবক্ষয়ে আপের লাভ ছাড়া ক্ষতি হয় নি। তাই কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বাড়ে, এমন কোনও জোট করা থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল শেষ পর্যন্ত বিরত থাকবেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।

Feature Image is Representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *