গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে এখন ভাটার টান, মমতার হুমকিতেই বনধ প্রত্যাহার বিনয়-অজয়দের - nagariknewz.com

গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে এখন ভাটার টান, মমতার হুমকিতেই বনধ প্রত্যাহার বিনয়-অজয়দের


পাহাড়ের নেতারা যে এই মুহূর্তে জন বিচ্ছিন্ন, সেই খবর মমতা নবান্নে বসেই পান। কাজেই তিনি শিলিগুড়িতে এসে ধমকি দিয়ে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার আগেই সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তা থেকে পিছু হটেন বিনয়-অজয়রা। রাজনৈতিক প্রতিবেদন-

গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মনে আবেগ থাকলেও আন্দোলনের নামে বনধের রাস্তায় আর যাবেন না পাহাড়ের মানুষ। তাছাড়া মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবার পর এই মুহূর্তে দার্জিলিং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।  গুরুং বসে গেছেন কিন্তু পাহাড়ে এমন কোনও বিকল্প নেতার উত্থান হয় নি, যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে পথে নামবে মানুষ। অনিত থাপা, বিনয়‌ তামাং, অজয় এডোয়ার্ড- এঁদের কার‌ও পেছনেই সেই মাপের জনসমর্থন নেই, যা দিয়ে তাঁরা লাগাতার আন্দোলন করে প্রশাসনকে বিড়ম্বনায় ফেলতে সক্ষম। তাই মুখে  আস্ফালন করার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির মুখে বনধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনও পথ থাকে না তাঁদের সামনে।

বিধানসভায় সদ্য‌ই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। নিঃসন্দেহে এটা তৃণমূলের একটা রাজনৈতিক চাল। পৃথক উত্তরবঙ্গ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট নয়, কারণ দলটির ঘরেই এ নিয়ে বিবাদ আছে। এই সুযোগে বাঙালি সেন্টিমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ২৩ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে ১২ ঘন্টার বনধ ডেকেছিল বিনয় তামাং ও অজয় এডোয়ার্ডের দল। মঙ্গলবার এক‌ই ইস্যুতে অনুগামীদের নিয়ে ২৪ ঘন্টার অনশনে বসেছিলেন‌ দু’জন। তাতেও জনগণের তরফে বিশেষ সাড়া মেলে নি। জিটিএ সদস্যদের অনশনস্থলে উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। সেদিন বনধ জাতীয় কোনও কার্যসূচি থাকলে পাহাড়ের পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা ভেবে দেখেন নি বিনয়-অজয়। 

বিনয়-অজয়দের অনশন আন্দোলন, যা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণে কার্যত ব্যর্থ।

বিনয় তামাং, অজয় এডোয়ার্ডদের অনশনের দিন শিলিগুড়িতে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বনধের কথা কানে যেতেই মেজাজ দেখাতে দেরি করেন নি মুখ্যমন্ত্রী। মমতা সাফ জানিয়ে দেন, পাহাড়ে কোনও বনধ-টনধ হবে না। জোর খাটিয়ে বনধ করতে গেলে প্রশাসন বুঝে নেবে।’ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন পাহাড়ে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে চাইলে প্রশাসন তাদের রেয়াত করবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখা গেল, ওষুধ ধরেছে। মমতার হুমকির চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বনধ প্রত্যাহার করে নিলেন বিনয় তামাং ও অজয় এডোয়ার্ডরা।

বিমল গুরুং জামানায় পাহাড়ের পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। সে সময় পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হুমকি দেওয়ার আগে মমতা বার কয়েক ভাবতেন। হয়তো অনেক সুর নামিয়ে বনধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা বলতেন। কিন্তু এখন পাহাড়ের নেতাদের মুঠোর মধ্যেই রেখেছেন মমতা। মামলা-মামলায় জর্জরিত বিমল গুরুং নখদন্তহীন বাঘ মাত্র। হুমকি-ধামকি দিয়েও জিটিএ নির্বাচন আটকাতে পারেন নি গুরুং। রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনিত থাপা জিটিএ চেয়ারম্যান। তৃণমূল ত্যাগী বিনয় তামাংয়ের দৌড়ের মুরোদ কত দূর, তা ভালোই জানেন মমতা। দার্জিলিং শহরের বাইরে অজয় এডোয়ার্ডের হামরো পার্টির কোনও প্রভাব‌ই নেই। দীর্ঘ সময় পাহাড়ের রাজনীতির চাবিকাঠিটি ছিল একা সুবাস ঘিসিংয়ের হাতে। ২০০৭ থেকে সুবাসকে সরিয়ে চালকের আসনে গিয়ে বসেন বিমল গুরুং। অর্ধেক নিজের দোষে আর বাকি অর্ধেক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কূটকৌশলের সাফল্যে গুরুং আজ কার্যত গর্তে ঢুকে গেছেন।

মমতার চালের কাছে হেরে বিমল গুরুং এখন নখদন্তহীন বাঘ। ছবি- সংগৃহীত

গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নামে টানা বনধের জেরে দীর্ঘদিন দার্জিলিঙের পর্যটন শিল্প স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। সেই দুঃসময় আর ফিরিয়ে আনতে চান না পাহাড়ের মানুষ। বনধ-আন্দোলনের রাজনীতির অবসানের পর থেকেই পাহাড়ে গ্রীষ্ম-শরত-হেমন্ত-শীত, সব মরশুমেই পর্যটকদের ঢল। মাঝে কোভিড অতিমারির কারণে দু’বছর ব্যবসা মার খেয়েছে। এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সময়। পরিস্থিতির চাপেই পাহাড়ের নেতারা যে এই মুহূর্তে জন বিচ্ছিন্ন, সেই খবর মমতা নবান্নে বসেই পান। কাজেই তিনি শিলিগুড়িতে এসে ধমকি দিয়ে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার আগেই সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তা থেকে পিছু হটেন বিনয়-অজয়রা। অতি সত্বর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বড় ধরণের কোনও আন্দোলন দানা বাঁধার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না পাহাড়ে।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *