বাংলাদেশ প্রতিনিধি: ইউনূসের বাংলাদেশে লাইব্রেরি থেকে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বই তুলে নিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের লেখা পড়ে লোকে ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগে তাঁদের বই পাঠাগার থেকে বস্তায় ভরে তুলে নিয়ে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে জমা দিয়ে এসেছে একদল যুবক। গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল, ২০২৫) ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলায়। রাতে ধনবাড়ির অভয়ারণ্য পাঠাগারে ঢুকে পাঁচশোর বেশি বই যারা তুলে নিয়ে যায়, তারা ‘খেলাফত যুব মজলিস’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে।
অভয়ারণ্য পাঠাগারের বই পড়ে এলাকার যুবক-যুবতীরা নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে বলে খেলাফত যুব মজলিসের ধনবাড়ি শাখার সম্পাদক গোলাম রব্বানী রিশাদের অভিযোগ। তার নেতৃত্বেই বৃহস্পতিবার রাতে পাঠাগারটিতে ঢুকে বই তুলে নিয়ে যায় ১০ থেকে ১৫ জন যুবক। যে পাঁচ শতাধিক বই খেলাফত যুব মজলিসের সদস্যরা বস্তায় ভরে তুলে নিয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের লেখা একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। এছাড়াও জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বাংলা ভাষার বরেণ্য সাহিত্যিকদের বইও আছে। গোলাম রব্বানী রিশাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, “ধর্ম বিরোধী হইলে আমরা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বইকেও ছাড় দিবার পারি না। সেই বাংলাদেশ আর নাই। বই পইড়া মহল্লার পোলাপান নাস্তিক হয়া যাবে, তাদের ঈমান নষ্ট হবে, আমরা তৌহিদী জনতা তা সইহ্য করব না।”

অভয়ারণ্য পাঠাগারটাই যত নষ্টের গোড়া বলে খেলাফত যুব মজলিসের অভিযোগ। মজলিসের ছেলেরা পাঁচশোর উপর বই র্যাক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পাঠাগারটি প্রায় বইশূন্য হয়ে পড়েছে। রিশাদের নেতৃত্বে মজলিসের সদস্যরা বইগুলি পাঠাগার থেকে বাইরে বের করে এনে প্রথমে পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ধনবাড়ি থানার এক আধিকারিকের হস্তক্ষেপে বই না পুড়িয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে জমা করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বটবৃক্ষ স্বরূপ। বাঙালির কাছে তিনি কবিগুরু ও বিশ্বকবি। আর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। মুহাম্মদ ইউনূসের জামানায় বাংলাদেশের লাইব্রেরি থেকে বাংলা সাহিত্যের দুই মহীরুহ রবীন্দ্র-নজরুলের বই তুলে নিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীরা!
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয়চন্দ্র ঘোষ জানান, ঘটনার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কে ভুগছেন। ২০১৫ সালে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা দেড়শোর বেশি। দূর্জয় জানান, বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ একদল যুবক লাইব্রেরিতে ঢুকে কোনও কথাবার্তা না বলেই র্যাক থেকে বই তুলে তুলে বস্তায় ভরতে থাকে। বাধা দিলে ঠেলে সরিয়ে দেয়। যাওয়ার আগে পাঠাগারের লোকদের যুবকেরা বলে, “বই তো দূরের কথা পাঠাগার পর্যন্ত এইখানে থাকতে দিবো না। নাস্তিকতা প্রচার করস! পু*কি দিয়া নাস্তিকতা ভইরা দিমু। সব বই আইজকা পুড়ায়া ফেলবো।”
খবর পেয়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও বই লুটে বাধা দেয় নি। যখন মজলিসের ছেলেরা বইগুলি পোড়ানোর তোড়জোড় করছিল, তখন থানার এক আধিকারিক শুধু বইগুলি না পুড়িয়ে ইউএনও-র কাছে জমা করতে অনুরোধ জানান। পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয়ে বইগুলি না পুড়িয়ে পরদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী আধিকারিকের কাছে জমা দেন খেলাফত যুব মজলিসের সদস্যরা। ধনবাড়ির লাইব্রেরি থেকে জোর করে বই তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের সভাপতি আবদুল ছাত্তার খান।

অভয়ারণ্য পাঠাগার কর্তৃপক্ষ ধনবাড়ি থানায় চার-পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও ঘটনায় জড়িত কারও বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেছে বলে জানা যায় নি। এমনকি বইগুলি পাঠাগারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারেও ধনবাড়ি উপজেলা প্রশাসনের কোনও আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিন মাহমুদ মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকলেও খেলাফত যুব মজলিস তাতে সাড়া দেয় নি। ধর্মবিরোধী অভিযোগে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বই পর্যন্ত লাইব্রেরি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে মৌলবাদীরা। যদিও তা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য নেই বাংলাদেশের মিডিয়ায়।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.