ওয়াশিকুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কান্ডকারখানা দেখে হতভম্ব তাঁর সহকর্মীরাও। মুহাম্মদ ইউনূসকে বেইজ্জত করার জন্য আসিফ একাই যথেষ্ট বলে ইউনূস প্রশাসনের অন্দরে কানাঘুষা চলছে। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় খানিক বিলম্বে হলেও দুঃখ, শোক, সমবেদনা ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তার আগেই গোল বাঁধিয়ে বসেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে করা আসিফের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতেই পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। যা আসিফের বরাবরের অভ্যাস।
আসিফ নজরুলের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) সকালের দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আসিফ নজরুল লেখেন- “কাশ্মীরে পর্যটক হত্যার নিন্দা জানাই। তবে এর পেছনে কারা আছে তা জানা প্রয়োজন। নিচের লেখাটা পড়তে পারেন।” এই বলে জনৈক সায়ক ঘোষ চৌধুরীর পহেলগাঁও সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেন বাংলাদেশ সরকারের আইন উপদেষ্টা।
ভারতীয় নাগরিক ও কলকাতার বাসিন্দা সায়ক ঘোষ চৌধুরী লিখেছেন-
পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করা হবে কি হবে না, আমার কাছে immaterial ! আমি simply বিশ্বাস করি না, অমিত শাহ – অজিত দোভালদের সাহায্য ছাড়া কোনো অস্ত্র বা অস্ত্র চালানোর লোক কাশ্মীরে ঢুকতে পারে। আগে তবুও অনেক জায়গা ছিল যেখান দিয়ে জঙ্গী ঢোকার সুযোগ ছিল।
এখন technology -র উন্নতির পরে সেই সব জায়গা অতি সহজেই নজরদারি করা যায়। আর আমি কার্গিল যুদ্ধের পরে কাশ্মীরে গেছি। আমি কোনোদিন শুনি নি, “পর্যটকদের জঙ্গিরা হত্যা করে”। আমাকে মিলিটারি কমান্ডার বুঝিয়েছিলেন, “জঙ্গিরাও পর্যটকদের আক্রমণ করে না। কাশ্মীর বেঁচে থাকে ট্যুরিজম এর উপরে। ওদের টার্গেট আমরা।” মানে কাশ্মীরের জঙ্গী আক্রমণের চরম পর্যায়তেও পর্যটকদের উপরে আক্রমণের ঘটনা দেখি নি।
আর পাহেলগাঁও – গুলমার্গ – শোনমার্গ মিলিটারি cover -এ মুড়ে রাখা হত। “জঙ্গিরা কোন ধর্ম সেটা জিজ্ঞাসা করে হত্যা করছিলো”, সেটাতেই বোঝা যায় যে প্ল্যানিং অনেক উপর থেকে এসেছে।
যদি পাকিস্তান দায়ী থাকে (বালোচিস্তানের বদলা), তাহলে পাকিস্তান থেকে লোকদের ঢুকতে দিয়েছে যে মোদী সরকার, তাদের দায় নিতে হবে বই কি !
“নরেন্দ্র মোদী জঙ্গি হামলা বন্ধ করে দিয়েছেন”- এই দাবিটা তাহলে মিথ্যা ছিল ?
উত্তেজনার বশে কলকাতার সায়কের পোস্ট শেয়ার করে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর বিতর্ক শুরু হতেই আসিফ নজরুল বুঝতে পারেন, কাজটি কাঁচা হয়ে গেছে। কিন্তু ততক্ষণে আসিফের পোস্ট পড়ে খোদ ইউনূস সাহেবের পাকা ভুরু কুঁচকে গেছে। ইউনূস প্রশাসনের ভেতর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, সরকারের আইন উপদেষ্টার পদে থেকে এমন ছেলেমানুষি কাজ করতে পারলেন আসিফ নজরুল? বাংলাদেশ সরকারের আইন উপদেষ্টা পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন!
৫ অগাস্টের পর থেকে এমনিতেই ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে। ব্যাঙ্ককে মোদী-ইউনূস বৈঠকের পরেও বাংলাদেশের ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করে নি ভারত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন একজন ব্যক্তি কীভাবে পহেলগাঁওয়ের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করতে পারেন? আসিফ নজরুলের বেকুবির জেরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সামাল সামাল রব ওঠে। ইউনূসের মতো ঠান্ডা মাথার মানুষও ফোন করে আসিফকে চোটপাট করেন বলে ভেতরের খবর। এমনিতেই ইউনূস সরকারের ভেতরে আসিফ নজরুলের সুহৃদের অভাব নেই। ইউনূসের মান বাঁচাতে কেউ কেউ আসিফকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি তোলেন। শেষে পোস্ট ডিলিট করে রক্ষা পান সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বুড়া জামাই।

আসিফ নজরুলের ভারত বিরোধিতা নতুন নয়। শেখ হাসিনার জামানায় কোনও এক সভায় আসিফ নজরুল বলেছিলেন, বাংলাদেশে ২৬ লক্ষ ভারতীয় অবৈধভাবে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল নিজেই এখন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা। ইউনূস সরকারের আট মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও ২৬ লক্ষ দূরের কথা, বাংলাদেশে কর্মরত ২৬ হাজার ভারতীয়র তালিকাও সামনে আনতে পারলেন না আসিফ নজরুল। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকা আসিফ নজরুল পাল্টিবাজিতে ওস্তাদ বলে বাংলাদেশের বাজারে চাউর আছে।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.