ডেস্ক রিপোর্ট: মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় বেছে বেছে ‘হিন্দু’ পর্যটকদের খুন করে সন্ত্রাসবাদীরা। ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে যারা খুন করল, তারা ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’! এমনটাই মনে করেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ইশাক দার। ইনি শাহবাজ শরিফ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও দায়িত্ব সামলান। বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন ইশাক দার। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পাকিস্তানের কোনও হাত নেই, এই দাবি করার পাশাপাশি দার মন্তব্য করেন, “২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা হয়তো স্বাধীনতা সংগ্রামী।”
দারের এই মন্তব্য প্রমাণ করল, পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় পাকিস্তানের প্রশাসনিক মহলে আসলে চাপা আনন্দ। মুখে দুঃখ প্রকাশ করলেও সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক খুন হওয়ায় তারা বেশ উৎফুল্ল। হিন্দু পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুরুষদের বুকে গুলি চালিয়েছে জঙ্গিরা। এই তথ্যই কি পাকিস্তানের মন্ত্রীদের আরও বেশি সন্তুষ্টির কারণ? পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফও মনের ভাব গোপন করেন নি। খোয়াজা জানিয়েছেন, “পহেলগাঁওয়ের ঘটনা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বিদ্রোহের অংশ।”
উপত্যকার সচল হয়ে ওঠা অর্থনীতিকে ফের অচল করতে চায় কারা?
ধীরে ধীরে কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। ভোটে জিতে সরকার গঠন করেছে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন ন্যাশানাল কনফারেন্স সরকার। সারা ভারত থেকে পর্যটকেরা ছুটে যাচ্ছেন ভূস্বর্গে। বিদেশীদের জন্যও কাশ্মীরের দরজা খুলে দিয়েছে ভারত সরকার। কাশ্মীরিদের আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন। কাশ্মীরের পর্যটন খাত যখন দীর্ঘদিন পর চাঙ্গা হয়ে উঠছিল, তখন কার মদতে পর্যটকদের উপরে এমন নৃশংস হামলা চালাল সন্ত্রাসবাদীরা? কাশ্মীরের ক্রমেই সচল হয়ে ওঠা অর্থনীতিকে ফের খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে উপত্যকাকে আরও একবার টালমাটাল করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। হামলার নেপথ্যে ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র আছে, এ’কথা জানান দিতে দ্বিধা নেই সাউথ ব্লকের।
এদিকে পাকিস্তান সরকার পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করতে চাইছে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ ইশাক দার বলেছেন, “ভারতের হাতে যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ থাকে, তবে বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরুক।” যদিও ঘটনার রাতেই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। কে না জানে, ‘লশকর-এ-ত্যায়বা’ আইএসআই-এর মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম।
ইশাকের মন্তব্য প্রমাণ করে পাকিস্তান আসলেই জঙ্গিরাষ্ট্র
পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’র সার্টিফিকেট দেওয়া হামলাকে সমর্থন করার সামিল। পাক উপপ্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া ভারতের শক্ত পদক্ষেপের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। ভারতের উচিত মহম্মদ ইশাক দারের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে আরও কোনঠাসা করে ফেলা। পাকিস্তানকে আরও একবার ‘জঙ্গিরাষ্ট্র’ প্রতিপন্ন করার এমন সুযোগ কেন হাতছাড়া করবে সাউথ ব্লক। পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত সহ পাঁচ দফা পদক্ষেপ করায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার চোখে সর্ষেফুল দেখছে। পাকিস্তানের দিক থেকে একই রকমের শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু ভারতের তরফে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণায় পাকিস্তান যে ইতিমধ্যেই ঘাবড়ে গেছে পাক উপপ্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াই তার প্রমাণ।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জল প্রয়োজন। আপনারা এটা বন্ধ করতে পারেন না। এটা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। সিন্ধু জল চুক্তির যে কোনও ধরনের স্থগিতকরণ বা এতে হস্তক্ষেপ আমরা বরদাস্ত করব না।” ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের হত্যাকারীদের যারা সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি না বলে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ বলে প্রশংসিত করতে পারে, সেই জঙ্গিরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার কিন্তু ভারতের আছে।
Feature graphic is representational and designed by NNDC.