বিশেষ প্রতিবেদন: অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ভবিষ্যৎকে নাকি দেখতে পান কেউ কেউ। যেমন ষোড়শ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক নস্ট্রাদামুস। তবে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসেবে বাজারে সবথেকে হইচই ফেলে দেওয়া নাম বাবা ভাঙ্গা। না, ইনি কোনও ভারতীয় যোগীপুরুষ বা বাবাজি নন। ইনি এক বুলগেরিয়ান নারী, আসল নাম ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্ট্রোমিকাতে জন্মগ্রহণ করেন ভবিষৎদ্রষ্টা এই নারী।

বুলগেরিয়ান ভাষায় ‘বাবা’ শব্দের অর্থ ঠাকুমা। ভ্যানগেলিয়া সংক্ষেপে হয়েছে ভাঙ্গা। আর তার আগে বাবা কেন জুড়ে গেল, এতক্ষণে সবার কাছে নিশ্চয়ই তা জলের মতো পরিষ্কার। জীবদ্দশাতেই ‘মিথ’ হয়ে ওঠা বাবা ভাঙ্গা সাল ধরে ধরে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যার অনেকগুলোই নাকি ইতিমধ্যে ফলেছে। নিজে ছিলেন দৃষ্টিহীন। মানসনেত্রে যা ভেসে উঠত, তাই বলতেন। যা বলতেন, তাই ফলতো। এই কথা যখন চারদিকে জানাজানি হল, তখন তাঁর বাড়িতে মানুষের ঠেলাঠেলি পড়ে গেল। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে সাধারণ মানুষ- কে নেই লাইনে; সবাই বাবা ভাঙ্গার কাছে ছুটে যেতেন নিজের ভবিষ্যতের খোঁজে।
এমন দিব্যদৃষ্টি যাঁর, তাঁর অদৃষ্টেই অনেক দুঃখকষ্ট লিখে রেখেছিলেন বিধাতা। জন্ম থেকেই রুগ্ন। শৈশবেই মা মারা যান। সৎমায়ের কাছে অনাদরে মানুষ হতে থাকেন। ছবির মতো সুন্দর বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটি গ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠেঘাটে খেলা করেই সময় কাটত ছোট্ট ভ্যানগেলিয়ার। একদিন বিকেলে ভয়ঙ্কর ঝড় উড়িয়ে নিল তাকে। দু’দিন পর খোঁজ মিলল। বালি ও কাদা ঢুকে ভ্যানগেলিয়ার সুন্দর নীল দুটি চোখ ততক্ষণে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেন নি বাবা। ফলে চিরদিনের মতো দৃষ্টিশক্তি হারান ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা বা ‘বাবা ভাঙ্গা’।

ব্রেল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখেন দিমিত্রোভা। বাজাতে পারতেন পিয়ানো। সেলাই জানতেন। পারতেন রান্নাবান্নাও। ১৯৩৯-এ বাবা ভাঙ্গার যখন ২৮ বছর বয়স, তখন ফুসফুসের সংক্রমণে তাঁর যায়-যায় অবস্থা হয়েছিল। ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন ভাঙ্গা। এরপর থেকেই নাকি দিব্যদৃষ্টি পান তিনি। বলতে থাকেন ভবিষ্যৎ। নিজের ভবিষ্যৎ জানতে বাবার কাছে আসা-যাওয়া করতেন দিমিতার গোসতারভ নামে এক সৈনিক। আসা-যাওয়া করতে করতেই মন দেওয়ানেওয়া। ১৯৪২-এ দু’জনের বিয়ে। ১৯৯৬ সালের ১১-ই অগাস্ট ৮৫ বছর বয়সে বাবা ভাঙ্গার মৃত্যু স্তন ক্যান্সারে।
পৃথিবীতে এমন কোনও ভাষার মিডিয়া নেই, যেখানে বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে স্টোরি হয় নি। সঙ্কেতে, ইশারায় তিনি যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, তার অধিকাংশই বৃথা যায় নি বলে প্রমাণিত। পৃথিবীর ইতিহাসের কয়েকটি তোলপাড় করা ঘটনা, যা বাবা ভাঙ্গা আগেই জানিয়ে গিয়েছিলেন। যেমন, বার্লিনের প্রাচীর যে একদিন ধ্বংস হবে, তা আগেই জানিয়েছিলেন ভাঙ্গা। রাজকুমারী ডায়ানার যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজের সরকারি বাসভবনে দেহরক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৬৯ সালেই সেই ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা।
অনেকেই মনে করেন, আমেরিকায় নাইন/ইলেভেনের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার পূর্বাভাসও বহু আগেই দিয়ে গেছেন বাবা।১৯৮৯ সালে বাবা ভাঙ্গা বলেছিলেন, “ইস্পাতের পাখিদের আক্রমণে আমেরিকান ভায়েদের পতন হবে।” ২০০১-এর ১১-ই সেপ্টেম্বর আল-কায়দা জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর বিমান হামলায় নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়েছিল। বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, চুয়াল্লিশতম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ। ২০০৯-এর ২০ জানুয়ারি আমেরিকার ৪৪-তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন বারাক ওবামা। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান ওবামা।
২০২৫ থেকেই শেষের শুরু!
চলতি ২০২৫ সাল নিয়ে অনেক মারাত্মক ভবিষ্যদ্বাণী আছে বাবা ভাঙ্গার। বাবা বলে গিয়েছেন, ২০২৫-এ ইউরোপে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ লাগবে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হবে। ভাঙ্গার মতে, আগামী ৫০৭৯ সালে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে এবং যার সূত্রপাত হবে ২০২৫ থেকে। বাবা ভাঙ্গা নাকি এও বলেছেন, ২০২৫-এ বছরভর ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হবে পৃথিবী। বাবা ভাঙ্গার আরেকটি সাংঘাতিক ভবিষ্যদ্বাণী হল, ইউরোপ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং ২০৪৩ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৪৪ টি দেশে ইসলাম ধর্মের আধিপত্য কায়েম হবে। ২০৭৬ সালে বিশ্বে আবার কমিউনিস্টদের সুদিন ফিরবে বলেও নাকি দেখতে পেয়েছেন বুলগেরিয়ান এই নারী।
মোবাইল নিয়ে বাবার পূর্বাভাস মিলেছে, নামবে ভিনগ্রহীরাও?
যন্ত্রের প্রতি মানুষের আসক্তি নিয়ে বাবা ভাঙ্গার করা একটি ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু প্রায় পুরোটাই মিলে গেছে। ভাঙা বলেছিলেন, একুশ শতাব্দীতে যন্ত্রের প্রতি মানুষের আসক্তি বাড়বে ভয়ঙ্করভাবে। যন্ত্রের সঙ্গেই লেপ্টে থাকবে তারা। যন্ত্রের দাসে পরিণত হয়ে মানবিক অনুভূতিগুলো হারাবে মানুষ। মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মীয়তা, সম্পর্ক ও ভালবাসার বন্ধন কমে আসবে। আট থেকে আশি- স্মার্টফোন, এআই ও ইন্টারনেটে বুঁদ। বাবার পূর্বাভাস কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। ২০২৫-এই ভিনগ্রহ থেকে এলিয়েনরা এসে পৃথিবীতে কিছু গোল বাঁধাতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা। চলুন সবাই মিলে ভিনগ্রহীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
Feature graphic is representational and designed by UKD.