হিমবাহ নিয়ে হাড় হিম করা রিপোর্ট ইউনেস্কোর! কী আছে রিপোর্টে?

হিমবাহ নিয়ে হাড় হিম করা রিপোর্ট ইউনেস্কোর! কী আছে রিপোর্টে?


ডেস্ক রিপোর্ট: হিমবাহ নিয়ে হাড় হিম করা তথ্য সামনে আনল ইউনেস্কো। অবশ্য উন্নয়নের নেশায় বুঁদ মানবজাতির শিরদাঁড়া দিয়ে আদৌ তাতে ঠান্ডা স্রোত ব‌ইবে কিনা সন্দেহ। সদ্য প্রকাশিত ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর ‘গ্লেসিয়ার’ বা হিমবাহগুলি। শেষ তিন বছর পৃথিবী জুড়ে হিমবাহগুলি যে রেকর্ড গতিতে গলেছে, তা দেখে রীতিমতো প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা।

‘ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিস’- সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এই সংস্থাটির কাজ পৃথিবী জুড়ে হিমবাহগুলির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। জেনেভায় ইউনেস্কোর সদর দফতরে হিমবাহ বিষয়ক প্রতিবেদন পেশ করার সময় সংস্থাটির পরিচালক মাইকেল জেম্প যা জানিয়েছেন, তা এক কথায় মারাত্মক! ১৯৭৫ থেকে এই পর্যন্ত বিশ্বের হিমবাহগুলি থেকে মোট বরফ গলার পরিমাণ ৯ হাজার গিগাটন। যত বরফ গলেছে, তা একত্রিত করলে জার্মানির আয়তনের সমান ২৫ মিটার পুরু একটি হিমখন্ড তৈরি করা যাবে। শুধু ২০২৪ সালেই হিমবাহগুলি থেকে ৪৫০ গিগাটন বরফ গলেছে।

দ্রুত গলছে হিমবাহগুলি। শুধু ২০২৪-এই হিমবাহগুলি থেকে ৪৫০ গিগাটন বরফ গলেছে। সংগৃহীত ছবি

পৃথিবীর মোট মিষ্টি জলের প্রায় ৭০ শতাংশ হিমবাহগুলিতে সঞ্চিত আছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ হিমবাহের তিনভাগের একভাগ বরফ গলে যাবে। গোটা পৃথিবী জুড়ে যে হারে হিমবাহগুলি গলছে, তাতে একশ বছর পরে নদীতে স্নান তো দূরের কথা, ঘটি ডোবানোর মতো জল‌ও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত হিমবাহ গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৮ মিলিমিটার। বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১ মিলিমিটার করে বাড়ছে। ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত যে হারে হিমবাহগুলি গলেছে, ২০১২ থেকে ২০২৩-পর্যন্ত তার থেকে ৩৬ শতাংশ বেশি হারে গলেছে হিমবাহগুলি। অর্থাৎ পরিস্থিতি উত্তরোত্তর খারাপের দিকে। প্রতি বছর গড়ে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টন বরফ গলছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। পৃথিবীবাসী ৩০ বছরে যা জল ব্যবহার করে, গলে যাওয়া বরফ তার সমান।

জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ধরিত্রীর তাপমাত্রা বাড়ছে। মানুষের কৃতকর্মের ফলেই পৃথিবী আজ জ্বরে আক্রান্ত। বিশ্ব উষ্ণায়নের অনিবার্য পরিণাম হিমবাহগুলির দ্রুত গলন। হিমবাহগুলি যত গলবে পৃথিবী জুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তত‌ই বাড়তে থাকবে। গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিলিমিটার বাড়লে বছরে তিন লক্ষ মানুষের বন্যাকবলিত হ‌ওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ হিমবাহের এক-তৃতীয়াংশ বরফ গলে যাবে। সংগৃহীত ছবি

আন্টার্কটিকা থেকে আর্কটিক, আল্পস থেকে হিমালয়, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে তিব্বতের মালভূমি, পূর্ব আফ্রিকা- সর্বত্র হিমবাহগুলির উদ্বেগজনক হারে গলছে। পরিণামে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পৃথিবীর উপকূলবর্তী এলাকাগুলি ডুবে গেলে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। নদীগুলি শুকিয়ে মরে যাবে। কৃষি উৎপাদনে ধ্বস নামবে আর পানীয় জলের জন্য হাহাকার করতে হবে মানুষকে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে ২০২৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ২১ মার্চ দিনটিকে ‘বিশ্ব হিমবাহ দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দূষণের জেরে হিমবাহ গলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে মানব সভ্যতা। আমাদের হুঁশ কি এখনও ফিরবে না?

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *