'এনকাউন্টার' ফেক বা রিয়েল যাই হোক, দুষ্কৃতীরা নিকেশ হলেই খুশি জনগণ

‘এনকাউন্টার’ ফেক বা রিয়েল যাই হোক, দুষ্কৃতীরা নিকেশ হলেই খুশি জনগণ


কঠোর হাতে দুষ্কৃতীদের দমনের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু দুষ্কৃতী দমনে পুলিশের যোগ্যতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে অনেক দিন ধরেই সংশয় দানা বেঁধেছে। দুর্বৃত্তদের তান্ডবে যে রাজ্যে থানার ভেতরেই পুলিশের টেবিলের তলায় লুকোনোর নজির আছে, সেই রাজ্যে পুলিশ সম্পর্কে এই সংশয় একেবারে অমূলক নয়। এমন নয় যে দুষ্কৃতকারীদের দমনের ব্যাপারে বাংলার পুলিশের পেশাগত দক্ষতার অভাব রয়েছে। আসলে ইচ্ছে থাকলেও নানাবিধ কারণে সমাজের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে পারে না পুলিশ। এই নানাবিধ কারণগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম কারণ হল রাজনৈতিক।

রাজনৈতিক চাপের কারণে পুলিশকে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেও পিছিয়ে আসতে হয়। পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা আর চোখে আঙুল দিয়ে কাউকে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে না। রোজ‌ই খুনোখুনি, মারামারি ও ধর্ষণের খবর শুনতে শুনতে রাজ্যবাসী ধরেই নিয়েছেন, এই অরাজকতা থেকে তাদের সহজে নিস্তার নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শাসকদলের নেতারাও আর নিরাপদ নন। যখনতখন তাঁদের লাশ পড়ে যাচ্ছে! গত বুধবার সাজ্জাক আলম নামে এক দুষ্কৃতীকে ইসলামপুর আদালত থেকে রায়গঞ্জ সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে খোদ পুলিশ আক্রান্ত। পাঞ্জিপাড়ার কাছে একটি জায়গায় শৌচকর্ম করার কথা বলে গাড়ি থেকে নেমে সাজ্জাক পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশকর্মী গুলিতে আহত হন।

খুনের মামলার আসামী সাজ্জাক আলম রায়গঞ্জ সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দী। প্রশ্ন, একজন জেলবন্দী দুষ্কৃতীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে এল? পুলিশ জানাচ্ছে, ইসলামপুর কোর্ট লক‌আপেই
সাজ্জাকের হাতে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়েছে। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে কীভাবে কোর্ট হাজতে বন্দীর কাছে বন্দুক পৌঁছায়, এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি হ‌ওয়ার আগেই শনিবার সকালে পলাতক আসামী সাজ্জাক আলম খতম! সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর থানার সাহাপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে গুলিবিদ্ধ হয় সাজ্জাক। আহত অবস্থায় সাজ্জাককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

দুষ্কৃতীরা যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই তাদের মোকাবিলা করা হলে শান্তিপ্রিয় নাগরিকেরা খুশিই হন। এনকাউন্টারের চরিত্র নিয়ে পেশাদার মানবাধিকারকর্মীদের মাথাব্যথা থাকলেও সাধারণ জনগণের কোনও মাথাব্যথা নেই। গুলিতে আহত পুলিশকর্মীদের দেখতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেছিলেন, “দুষ্কৃতীরা যদি পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি গুলি চালায়, তা হলে পুলিশ চারটি গুলি চালাবে।” এটা যদি রাজীব কুমারের মনের কথা হয়ে থাকে, তবে তা সাধুবাদযোগ্য। সাজ্জাকের মতো দুর্বৃত্ত এনকাউন্টারে খতম হ‌ওয়ায় জনগণ খুশি। কিন্তু মানুষের মনে একটা খটকা আছে; পুলিশ নিজের দোষ ঢাকতে চরম পদক্ষেপ করল না তো? সাজ্জাক আলমের মতো দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের কার‌ও কার‌ও যোগসাজশ থাকলে, তা ভাঙতেও কঠোর হতে হবে সরকারকে। সরকারের মাথায় যিনি বসে আছেন, একমাত্র তাঁর সদিচ্ছা থাকলেই সাজ্জাকের মতো সমাজবিরোধীদের দমনে ‘ফ্রিহ্যান্ড’ ক্ষমতা পাবে পুলিশ।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *