স‌ইফের উপর হামলার ঘটনায় ধৃত বাংলাদেশী নাগরিক! পাঁচ মাস আগে ভারতে ঢুকে হিন্দু নাম নেয় শরিফুল

স‌ইফের উপর হামলার ঘটনায় ধৃত বাংলাদেশী নাগরিক! পাঁচ মাস আগে ভারতে ঢুকে হিন্দু নাম নেয় শরিফুল


ডেস্ক রিপোর্ট: শেষে বলিউড তারকা স‌ইফ আলি খানের উপর হামলার ঘটনাতেও জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের নাম! রবিবার ভোরে মহারাষ্ট্রের পশ্চিম ঠানের হিরনন্দানি এস্টেট এলাকা থেকে হামলাকারী সন্দেহে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়, সে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। মেট্রো রেলের নির্মাণ শ্রমিকদের একটি বস্তিতে লুকিয়ে ছিল সে। ধৃত প্রথমে বিজয় দাস বলে নিজের পরিচয় দিলেও জেরার মুখে আসল নাম বলে ফেলে। তার আসল নাম শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। বছর তিরিশ-পঁয়ত্রিশের শরিফুল পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে বলে প্রাথমিক তদন্ত থেকে মনে করছে পুলিশ।

বলিউড সুপারস্টার স‌ইফ আলি খানের উপর হামলার ঘটনায় ঠানে থেকে গ্রেফতার বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। ফটো: সংগৃহীত

ধৃতের কাছ থেকে একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখার ডিসিপি দীক্ষিত গেদাম সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, ডাকাতির উদ্দেশ্যে স‌ইফ আলি খানের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল শরিফুল। মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকা বান্দ্রার জোন- নাইনের ‘সৎগুরু শরণ’ আবাসনের ১২ তলায় স‌ইফ-কারিনার ফ্ল্যাট। বৃহস্পতিবার শেষ রাতে নিজের ফ্ল্যাটেই আক্রান্ত হন স‌ইফ আলি খান। কীভাবে ‘হাই সিকিউরিটি’ ভিআইপি আবাসনে বাংলাদেশী দুষ্কৃতী ঢুকে বলিউড তারকাকে ঘায়েল করল? মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, সিঁড়ি ভেঙেই ১২ তলায় উঠে স‌ইফ-কারিনার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল শরিফুল। শরিফুলকে নজরে পড়তেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন গৃহপরিচারিকা ফিলিপ লিমা।

গৃহপরিচারিকার আর্তনাদ শুনে স‌ইফ বেরিয়ে এসে বাধা দিতেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুষ্কৃতী। শরিফুলের ছুরির কোপে জখম হন স‌ইফ আলি খান। স‌ইফের দেহের একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের কোপ লাগে। এমনকি পিঠে শিরদাঁড়ার কাছেও ছুরির ফলা ভেঙে গেঁথে যায়। এই আঘাত যথেষ্ট গুরুতর হতে পারত বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। যদিও বিখ্যাত এই বলিউড তারকা এখন সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত বলে জানিয়েছে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মুম্বাইয়ের বান্দ্রার এই আবাসনের ১২ তলায় থাকেন সাইফ-কারিনা। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফ্ল্যাটে আক্রান্ত হন স‌ইফ আলি খান। ফাইল ফটো

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীতে ভারত ভরে গেছে বলে কয়েক দশক ধরেই অভিযোগ। এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্র‌ক‌ও মেনে নিয়েছে, কমপক্ষে দুই কোটি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের একটি বড় অংশ জঙ্গি নাশকতা সহ নানা অপরাধ চক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে বলে দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি সরকারের কাছে একাধিকবার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেই পুলিশের নজর এড়াতে নিজের নাম ও ধর্মীয় পরিচয় পাল্টে ফেলে ইসলাম ধর্মাবলম্বী শরিফুল ইসলাম শেহজাদ। নিজেকে বিজয় দাস সহ বিভিন্ন হিন্দু নামে পরিচয় দিতে থাকে সে।

১৫ দিন আগে মুম্বাইয়ে ঢুকেছিল শরিফুল

পাঁচ মাস আগে শরিফুল ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে শরিফুল। তবে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দিন পনেরো আগে সে মুম্বাই শহরে আসে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। রবিবার ধরা পড়ার সময় পুলিশের কাছে নিজেকে বিজয় দাস নামে পরিচয় দেয় শরিফুল। কিন্তু এই নামে ভোটার কার্ড বা আধার জাতীয় কোনও সরকারি পরিচয়পত্র দেখাতে না পারায় তদন্তকারীদের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। জেরার মুখে নিজের আসল পরিচয় আর গোপন রাখতে পারে নি এই বাংলাদেশী দুষ্কৃতী।

সাধারণ অনুপ্রবেশকারী নয় পেশাদার অপরাধী

মুম্বাইয়ের আবাসনগুলিতে ‘হাউস কিপার’ সরবরাহকারী একটি সংস্থার মাধ্যমে কাজ‌ও জুটিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশী শরিফুল। তবে শুধু কাজের খোঁজেই ভারতে অনুপ্রবেশ করে নি সে। ডাকাতি করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। ডাকাতি করার উদ্দেশ্যেই যে শরিফুল ধারালো অস্ত্র হাতে বৃহস্পতিবার রাতে স‌ইফ-করিনার আবাসনে ঢুকেছিল, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে মুম্বাই পুলিশ। শরিফুল ইসলাম শেহজাদ কোন‌ও সাধারণ অনুপ্রবেশকারী নয় বরং পেশাদার অপরাধী, এমনটাই প্রাথমিক তদন্ত থেকে মনে করছে পুলিশ। বাংলাদেশ ও ভারতে আরও কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ধৃত জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

বলিউড তারকাদের সুরক্ষিত ফ্ল্যাটে পর্যন্ত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী!

মুম্বাইয়ের পা রাখার দিন পনেরোর মধ্যেই যেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী স‌ইফ আলি খানের মতো বিখ্যাত বলিউড তারকার অভিজাত ও হাই সিকিউরিটি আবাসনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে চড়াও হতে পারে, সে যে কত বড় ভয়ঙ্কর অপরাধী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের হাতে এখন নিজের ঘরেই বলিউডের তারকারা পর্যন্ত নিরাপদ নন, এই ঘটনা তা প্রমাণ করে দিল।

Feature graphic is representational and designed by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *