আদালতে ধরা পড়ে গেল অভিষেক ও রাজীব কুমারের মিথ্যাচার! শাহজাহানকে গ্রেফতারে বাধা নেই, জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ

আদালতে ধরা পড়ে গেল অভিষেক ও রাজীব কুমারের মিথ্যাচার! শাহজাহানকে গ্রেফতারে বাধা নেই, জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ


এ’দিন প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন, চাইলেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। এই ব্যাপারে আদালতের তরফে কোন‌ও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় নি। রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত ৫ জানুয়ারি শেখ শাহজাহানের সন্দেশখালির বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। তারপর থেকেই এই তৃণমূল নেতা বেপাত্তা। যদিও এরপর একাধিকবার শেখ শাহজাহানের অডিও বার্তা প্রকাশ্যে এসেছে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় মহিলাদের বিক্ষোভের জেরে সন্দেশখালি জুড়ে শেখ শাহজাহানের সাম্রাজ্যের কদর্য দিক রাজ্যের মানুষের সামনে উন্মোচিত।‌ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের মতো শাহজাহানের সাঙ্গপাঙ্গরা রোজ রাতে হিন্দু ঘরের মেয়ে-ব‌উদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে শাহজাহানকে ভেট দিত বলে অভিযোগ। জনরোষের মুখে রাজ্যের পুলিশ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারকে গ্রেফতার করলেও শেখ শাহজাহান এখনও অধরা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শেখ শাহজাহানকে রক্ষা করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সন্দেশখালির অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে বিধানসভায় বলতে উঠে খোদ মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে শেখ শাহজাহানকে আড়াল করেছেন, তাতে বিরোধীদের অভিযোগকে সম্পূর্ণ অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার জো নেই। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা নির্বাচনের মুখে সুন্দরবন অঞ্চলে তৃণমূলের অন্যতম ভোট মেশিনারি শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে রাজি নন মমতা। অনেকের আবার সন্দেহ, গ্রেফতার হলে পাছে ভেতরের সব খবর ফাঁস করে দেন শাহজাহান, এই ভয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সাহস পাচ্ছে না রাজ্য সরকার। রেশন দুর্নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হ‌ওয়ার কারণে শাহজাহানকে হাতে চায় ইডি-সিবিআই‌ও। রাজ্য পুলিশ নারী নির্যাতনের মামলায় শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাকে অচিরেই কেন্দ্রীয় দুই এজেন্সির হেফাজতে তুলে দিতে হবে। ইডি-সিবিআইয়ের হেফাজতে গেলে শেখ শাহজাহান রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলে দলের আরও বড় কোনও মাথা ফেঁসে যেতে পারেন বলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের আশঙ্কা।

হাইকোর্টের ঘাড়ে দোষ দিয়েছিলেন অভিষেক ও রাজীব কুমার

শেখ শাহজাহান উত্তর ২৪ পরগনার প্রভাবশালী নেতা হলেও তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরের নন বলেই তৃণমূলের ভেতরের খবর। শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে দলের ভেতরে অভিষেক চাপ তৈরি করেছেন বলেও জানা গেছে। কিন্তু শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশ এখন‌ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পায় নি বলেই গুঞ্জন। এই পরিস্থিতিতে মিডিয়ার সামনে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলে অভিষেক কেন বিচার বিভাগকে টেনে আনলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা রীতিমতো ধন্ধে। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে গত বৃহস্পতিবার অভিষেক বলেছেন, ‘‘শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ অভিষেক আরও বলেছেন ‘শাহজাহানকে গ্রেফতার না করার কী আছে! সন্দেশখালির দুই তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারকেও গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তা হলে শাহজাহানকে পারবে না কেন!’’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার‌ও শনিবার বলেছেন, “হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছেন না পুলিশ।”

শেখ শাহজাহানকে মামলার পার্টি করার নির্দেশ হাইকোর্টের

সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সন্দেশখালি মামলার শুনানি চলাকালে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গ ওঠে। আদালতে প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, “শুনলাম শাহজাহান শেখের আগাম জামিনের মামলা পিছিয়ে গিয়েছে। উনি তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কী ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে?” আদালত বান্ধব প্রধান বিচারপতিকে জানান, “এক সাংসদ বলছেন, আদালতের নির্দেশের কারণেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। আদালত এফআইআরের উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।” প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কোন স্থগিতাদেশ? জবাবে আদালত বান্ধব বলেন, “ইডির উপর হামলার ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তিনটি এফআইআর করেছিল। আদালত নাকি তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।” শোনা মাত্রই প্রধান বিচারপতি বলেন, “স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, পুলিশকে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে মাত্র। আমরা পুলিশকে বলিনি, যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাবে না।’’

রাজ্য পুলিশ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যাচারিতায় দৃশ্যত ক্ষুব্ধ আদালত এ’দিন নির্দেশ দিয়েছে, শেখ শাহজাহানকেও মামলার পার্টি করে নোটিশ জারি করতে হবে। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা এবং ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে নোটিস জারি করতে হবে।” আগামী ৪ মার্চ সন্দেশখালি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ততদিনে শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে কিনা, এখন এটাই দেখার।

Feature graphic is representational and created by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *