অস্তিত্বের সংকটে পাওয়ারের এনসিপি! শিবসেনা-বিজেপি সরকারে যোগ দিয়ে উপ মুখ্যমন্ত্রী পিতৃব্যদ্রোহী অজিত - nagariknewz.com

অস্তিত্বের সংকটে পাওয়ারের এনসিপি! শিবসেনা-বিজেপি সরকারে যোগ দিয়ে উপ মুখ্যমন্ত্রী পিতৃব্যদ্রোহী অজিত


ডেস্ক রিপোর্ট: মারাঠা মুলুকে ভাইপো বিদ্রোহ! ভেঙে গেল শরদ পাওয়ারের এনসিপি। শরদের ভাইপো অজিত পাওয়ার দলের ৯ বিধায়ক সহ রবিবার দুপুরে যোগ দিলেন শিবসেনা-বিজেপি মন্ত্রিসভায়। মুম্বাইয়ের রাজভবনে অজিত ও ছগন ভুজবল সহ নয়জনের শপথ নেওয়াও সারা। শিন্ডের মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন অজিত পাওয়ার। ছগন ভুজবল, দিলীপ ওয়ালসে পাতিল ও হাসান মুর্শেদ ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অদিতি ঠাকরে, ধনঞ্জয় মুন্ডে, সঞ্জয় বাঁসোদে, ধরমরাওবাবা আতরাম এবং অনিল ভাইদাস পাতিল প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শিবসেনা-বিজেপি সরকারে জায়গা পেয়েছেন। প্রবীণ মারাঠা নেতা ছগন‌কেও শিন্ডে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দফতর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস জোট সরকারে উপ মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। অজিত এক‌ই পদে আসায় ডবল উপ মুখ্যমন্ত্রী পেল মহারাষ্ট্র। শরদ পাওয়ারের এনসিপি-র ৫৩ জন বিধায়ক রয়েছে মহারাষ্ট্র বিধানসভায়। দলের ৪০ বিধায়ক তাঁর সঙ্গে আছেন বলে দাবি করেছেন অজিত। অজিতের দাবি সত্যি হলে শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি-র পরিণতিও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মতোই হবে বলে আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক মহল।

শিবসেনা নিয়েছেন শিন্ডে, এনসিপি কি অজিতের?

শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক সহ বেরিয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেন ২০২২-এর ৩০ জুন। একনাথ শিন্ডে ও উদ্ধব ঠাকরে- এই দুই গোষ্ঠীতে আড়াআড়ি ভেঙে যায় বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনা। নির্বাচন কমিশনের কাছে শিবসেনার প্রকৃত স্বত্বাধিকারী দাবি করেন শিন্ডে। কে প্রকৃত শিবসেনা- এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার নির্বাচন কমিশনের উপরেই ছেড়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনাকেই প্রকৃত শিবসেনা হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ‘শিবসেনা’ নাম ও শিবসেনার প্রতীক ‘তির-ধনুক’ ব্যবহার করার অধিকার পায় শিন্ডের গোষ্ঠীই। তিনিও যে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রকৃত ‘এনসিপি’-র স্বত্ব দাবি করে নির্বাচন কমিশনে যাবেন, সেই ইঙ্গিত রবিবার‌ই সংবাদ মাধ্যমকে দিয়েছেন শরদ ভাইপো অজিত পাওয়ার।

ভাইপোকে ফেলে কন্যাকেই দল সঁপেছেন শরদ

শরদ পাওয়ারকে এককালে বলা হত ‘মারাঠা স্ট্রংম্যান। ৮২ বছরের পাওয়ারের রাজনৈতিক জীবন নিঃসন্দেহে বর্ণময়।‌ বয়সের ভারে ন্যুব্জ পাওয়ার দলের দায়িত্ব কন্যা সুপ্রিয়া সুলের হাতে দেওয়ার পর থেকেই কাকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী অজিত। বহুদিন থেকেই এনসিপি-তে কোনঠাসা অজিত পাওয়ার। দলের দায়িত্ব যে শেষ পর্যন্ত মেয়ের হাতেই ছেড়ে যাবেন শরদ, এই চিত্র স্পষ্ট হ‌ওয়ার পর থেকেই দলে স্বস্তিতে ছিলেন না অজিত। ভাই-বোনে বনিবনা নেই। শরদ পাওয়ারের অবর্তমানে সুপ্রিয়া এনসিপির কান্ডারী হলে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার, বুঝতে অসুবিধা হয় নি অজিতের। এনসিপি-তে যে ভাঙন অনিবার্য, তা স্পষ্ট হয়ে যায় গত ১০ জুন, যেদিন দলের কার্যকরী সভাপতি পদে কন্যা সুপ্রিয়া ও প্রফুল পটেলকে অভিষিক্ত করেন শরদ পাওয়ার। তাঁকে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদ দিয়ে দলের সংগঠনে ব্রাত্য করে ফেলা হয়েছে, বুঝতে পারেন শরদের ভাইপো। অজিত পাওয়ারের ধারণা, বার্ধক্য পীড়িত অসুস্থ কাকা মেয়ের অঙ্গুলিহেলনে চলছেন।

সুপ্রিয়া সুলে ও অজিত পাওয়ার: ভাই-বোনের সম্পর্ক ছবিতে যেমন দেখাচ্ছে, বাস্তবে তেমনটি নয়। ফটো ক্রেডিট- এনডি টিভি

২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরেও শরদ পাওয়ার ও সুপ্রিয়া সুলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন অজিত। দেবেন্দ্র ফডণবীস মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। অজিত উপ মুখ্যমন্ত্রী। তবে সে যাত্রায় এনসিপি পরিষদীয় দলে ভাঙন ধরাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় দেবেন্দ্র ফডণবীস ইস্তফা দেন। অজিত‌ও পদে ইস্তফা দিয়ে মাথা নিচু করে কাকার কাছে ফিরে যান। বিদ্রোহী ভাইপোকে ক্ষমাও করে দেন কাকা। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকার গঠিত হলে উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ ফিরে পান অজিত।

আঞ্চলিক দল মানেই পারিবারিক কোম্পানি!

সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বিরোধের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৯৯ সালের ১০ জুন ‘ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি’ নামে পৃথক দল গঠন করেছিলেন শরদ পাওয়ার, পিএ সাংমা ও তারিক আনোয়ার। পিএ সাংমা প্রয়াত। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসে ফিরে গেছেন তারিক। শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি মূলতঃ মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেও আর কংগ্রেসে ফেরেন নি শরদ। শরদের অবর্তমানে কন্যা সুপ্রিয়া দল কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন, সেই বিষয়ে সংশয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভারতের রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলি শেষ পর্যন্ত পারিবারিক কোম্পানিতে পরিণত হয়। পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে এই পলিটিক্যাল কোম্পানিগুলির অস্তিত্ব যে বিপন্ন হতে পারে, উদ্ধব ঠাকরে তার বড় উদাহরণ।

Feature Image is Representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *