কলকাতা: উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালিতে তিন বিজেপি কর্মীকে খুনের ঘটনায় সোমবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ৮ জুন সন্দেশখালির ন্যাজাটের ভাঙ্গিপাড়া এলাকায় প্রদীপ মন্ডল, দেবদাস মন্ডল ও সুকান্ত মন্ডলকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। নিহত তিনজনই ছিলেন বিজেপির কর্মী। দুষ্কৃতীরা সবাই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। কুখ্যাত শাহজাহান শেখের নির্দেশেই সেদিন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ।
রাজ্য প্রশাসনের প্রশ্রয়ে সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাহ হয়ে ওঠা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ বর্তমানে জেলে। রেশন কেলেঙ্কারি ও সন্দেশখালিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের উপর নির্যাতনের মামলায় চব্বিশের ২৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সন্দেশখালিতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান হলে প্রমাদ গোনেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে শাহজাহান শেখকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। তার আগে জানুয়ারির গোড়ায় রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
তিন বিজেপি কর্মীকে খুনের মামলায় শাহজাহান শেখের নাম ছিল। পুলিশের চার্জশিটেও তার নাম ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে যাওয়ার পরেই চার্জশিট থেকে শাহজাহান শেখের নাম উধাও হয়ে যায়! ২০১৯-এর ৮ জুন ছিল জামাইষষ্ঠী। সেদিন তৃণমূল নেতা কাদের মোল্লার নেতৃত্বে কয়েকশত সশস্ত্র মানুষ সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়ায় বিজেপি কর্মী প্রদীপ মন্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারেন নি প্রদীপ। তাঁকে ধাওয়া করে ধরে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। এরা সকলেই ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমান ও রাজনৈতিক পরিচয়ে তৃণমূল। এরপর প্রদীপের তুতোভাই সুকান্ত মন্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। সুকান্ত পালিয়ে গেলে তাঁকেও তাড়া করে ধরে গুলি করে খুন করে শেখ শাহজাহানের বাহিনী। এলাকার আরেক বাসিন্দা দেবদাস মন্ডলকেও একইভাবে খুন করা হয়েছিল। প্রদীপ মন্ডলের মতো সুকান্ত ও দেবদাসও বিজেপি করতেন।

একই দিনে একই এলাকায় হামলা চালিয়ে তিনজনকে খুন করে একদল সশস্ত্র মানুষ। সব জেনেও সেদিন নিষ্ক্রিয় ছিল সন্দেশখালি থানা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যাকাণ্ড রোধে কোনও পদক্ষেপ করে নি পুলিশ। পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে হত্যাকাণ্ড দেখেছে বলে নিহতদের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ। পুরো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। তখন শাহজাহান শেখের হাতেই সন্দেশখালির নিয়ন্ত্রণ। নিহতদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরে শাহজাহান শেখের নাম থাকলেও সিআইডি চার্জশিট থেকে শাহজাহানের নাম বাদ দিয়ে দেয়। রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশেই চার্জশিট থেকে শাহজাহান শেখের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে বিজেপির অভিযোগ।
এই তিন হত্যার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন নিহত বিজেপি কর্মী প্রদীপ মন্ডলের স্ত্রী পদ্মা মন্ডল। সোমবার মামলার রায় দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। মামলাকারীদের দাবি মেনে নিয়ে ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তিন খুনের তদন্তে সিবিআইকে ‘সিট’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিআইডির অধীনে তদন্তের কোনও অগ্রগতিই হয় নি। তাই হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Feature graphic is representational and created by NNDC.