হিজাববিহীনদের ধরতে শেষে আকাশে ড্রোন ওড়াচ্ছে ইরানের পুলিশ!

হিজাববিহীনদের ধরতে শেষে আকাশে ড্রোন ওড়াচ্ছে ইরানের পুলিশ!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্ষেতে কীটনাশক ছড়ানো থেকে পণ্য পরিবহণ, চোর-বাটপার ধরা থেকে শত্রুদেশে নজরদারি- কত কাজেই না এখন লাগানো হচ্ছে ড্রোনকে। শেষমেশ হিজাব বিহীন নারীর অনুসন্ধানেও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন! দেশটির নাম ইরান। মধ্যযুগীয় পোশাকবিধিকে বলবৎ করতে অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছে মোল্লা শাসিত ইরান।

কোন মহিলা হিজাব না পরেই রাস্তায় নেমেছেন, তা খুঁজে বের করে নীতি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে জানিয়ে দেবে ড্রোন‌। এরপর অকুস্থলে পৌঁছে সেই মহিলার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ করবে পুলিশ। হিজাববিধি কঠোরভাবে কার্যকর করতে শুধু ড্রোন মারফত নজরদারিতেই ইরান থেমে নেই। আরও অনেক বৈদ্যুতিন ডিভাইসকেও কাজে লাগাচ্ছে ইরানের রক্ষণশীল সরকার। রাজধানী তেহরান সহ ইরানের প্রধান প্রধান শহরগুলির গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কিছু নজরদারি ক্যামেরা বসানো হয়েছে শুধুমাত্র নারীদের পোশাক পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

তেহরানের রাস্তায় হিজাব ও বোরখা পরিহিত নারীরা। হিজাববিধি না মানলেই শাস্তি! ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল ইরান সফরে গিয়েছিল। ধর্মাশ্রিত সরকার নিয়ন্ত্রিত দেশটিতে নারীদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখাই ছিল প্রতিনিধিদলটির উদ্দেশ্য। সেই প্রতিনিধিদলটি অনুসন্ধান করে আর‌ও সব মারাত্মক তথ্য পেয়েছে। যেমন, তেহরানের আমিরকবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার বসানো হয়েছে ছাত্রী-অধ্যাপিকা ও মহিলাকর্মীদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য। মুখ শনাক্তকরণের কথা বলে সফটওয়্যারটি বসানো হলেও এর আসল কাজ হিজাববিহীন নারীদের শনাক্ত করা।

শুধু হিজাববিহীনদের ধরতে অ্যাপ!

হিজাব নিয়ে ইরান সরকার এখনও এতটাই কঠোর যে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন‌ও তৈরি করে জনগণের ব্যবহারের জন্য তুলে দিয়েছে। ‘নাজের’ নামের এই অ্যাপটির মাধ্যমে লোকেরা রাস্তাঘাটে, ট্রেনে-বাসে হিজাববিহীন মহিলা চোখে পড়লেই ফটো তুলে লোকেশন জানিয়ে নীতি পুলিশেকে জানাতে পারবে। এমনকি নিজের প্রাইভেট কারের ভেতরেও ইরানের মহিলাদের স্বাধীনতা নেই। গাড়ির ভেতরে হিজাব না পরা নারী যাত্রী দেখলেই এই অ্যাপটির মাধ্যমে পুলিশকে জানাতে পারবে যে কেউ। গাড়ির নম্বরে প্লেটের ছবি তুলে নীতি পুলিশকে পাঠালেই পুলিশ সেই মহিলাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে।

হিজাব না পরায় তরুণীকে পিটিয়ে মেরেছিল পুলিশ

ইরানের মহিলারা হিজাব নিয়ে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভে ফুঁসছেন। ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হিজাব না পরায় বাইশ বছরের কুর্দিশ তরুণী মাহসা আমিনিকে তেহরানের রাস্তা থেকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে পুলিশ। পুলিশ হেফাজতেই মাহসার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জেরে প্রায় তিন মাস অগ্নিগর্ভ ছিল গোটা ইরান। গণবিক্ষোভ দমাতে চরম সহিংসতার রাস্তা বেছে নেয় তেহরানের মোল্লা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন। পাঁচশোর‌ও বেশি মানুষ বিক্ষোভে নিহত হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমান। বিক্ষোভে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে পরবর্তীকালে বেশ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর করে ইরান।

মাহসা আমিনি: হিজাব না পরায় বাইশ বছরের এই কুর্দিশ তরুণীকে পিটিয়ে মেরেছিল ইরানের পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

মোল্লাতন্ত্রের চরম নিপীড়নের পরেও ইরানের নারীদের দমানো যায় নি। সম্প্রতি সরকারের হিজাব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হাঁটেন তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আহু দার‌ইয়াই। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে দার‌ইয়াইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোল্লাদের চক্ষুশূল হয়ে ইরানের বহু নারীকর্মী জেলের ভেতরে। অনেকেই পালিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *