আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আমেরিকার বিমান হামলায় ইয়েমেনে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত বলে জানা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘হুথি’ নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর শনিবার রাতে এই বিমান হামলা চালায় ইউএস এয়ারফোর্স। আক্রমণের ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই এক্স হ্যান্ডেলে হুথিদের উদ্দেশে হুঙ্কার ছাড়েন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, “সকল হুথি সন্ত্রাসবাদীদের বলছি, তোমাদের সময় শেষ।” আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের ‘সেন্ট্রাল কমান্ড’-ও হুথি জঙ্গিদের একাধিক ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে।
গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল ইরান সমর্থিত ‘হুথি’ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সানা, সাদা, ধামার ও আবস এবং পূর্ব গেরাফে প্রবল বিমান হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। সানার বিমানবন্দর চত্বর, সাদায় হুথিদের সামরিক পরিকঠামো ও বাকি দুই জায়গায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটির অস্ত্রাগার ধ্বংস হয়ে গেছে। ‘ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান’ ও ‘ইউএসএস জর্জিয়া মিসাইল সাবমেরিন’ অভিযানটিতে অংশ নিয়েছে। আমেরিকার হামলার কথা স্বীকার করে ‘হুথি’ গোষ্ঠীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এর বদলা নেবে তারা। আমেরিকার বিমান হামলায় নিরপরাধ নারী ও শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বলে ইরান সমর্থিত এই জঙ্গিগোষ্ঠীর দাবি।
হুথি জঙ্গিদের হামলায় লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছিল। ২০২৩ সাল থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের আন্তর্জাতিক নৌপথ দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজের উপর মিসাইল হামলা চালিয়ে আসছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনটি। গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযান ও অর্থনৈতিক অবরোধের প্রতিবাদে ইজরায়েলের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানিতে যুক্ত বাণিজ্যিক জাহাজগুলির চলাচলে বাধা দেওয়া হুথিদের ঘোষিত রাজনৈতিক অবস্থান। গাজায় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পরেও এই ধরণের হামলা জারি থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল হুতিরা।
সমুদ্রপথে আনসার আল্লাহ বা হুথি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপর্যুপরি হামলার জেরে আমেরিকা সহ বহু দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ’বার এর নিষ্পত্তি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুতিরা সংযত না হলে তাদের ‘নরক ভাসিয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্ববাণিজ্য ও আমেরিকার সম্পদ রক্ষায় ইয়েমেনে সামরিক অভিযান জরুরি ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, “বিশ্বের জলপথগুলি দিয়ে আমেরিকার বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজগুলি অবাধে চলাচল করবে। কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এতে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।” ইরান সমর্থিত এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজের দায়ভার ইরানকেও নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জো বাইডেনের আমলেও কয়েকবার হুথিদের উপরে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। তবে সন্ত্রাসবাদীদের উপর সেই জবাব ট্রাম্পের ভাষায় ‘প্যাথেটিকালি উইক’ ছিল। ট্রাম্পের অভিযোগ, “চারমাস আগে আমেরিকান রণতরী যখন লোহিত সাগর পার হচ্ছিল, তখন হুথি দস্যুদের দ্বারা বহুবার তা আক্রান্ত হয়েছিল। ইরানের টাকায় এই দস্যুরা আমাদের যুদ্ধজাহাজ, বাণিজ্যিক জাহাজ ও সেনাবাহিনী এবং মিত্রদের জাহাজে মিসাইল হামলা চালিয়ে আসছে। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে।” ট্রাম্পের হুমকি ও তাঁর নির্দেশে ইয়েমেনে আমেরিকার সামরিক অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, ইরানকেও যে কোনও মুহূর্তে শিক্ষা দিতে পারে হোয়াইট হাউস।
Feature graphic designed by NNDC.