শত হুমকিতেও দল ছাড়েন নি, রাগে গাছে বেঁধে পিটিয়ে খুন কংগ্রেস কর্মীকে! তৃণমূলের বুথ সভাপতি সহ গ্রেফতার পাঁচ

শত হুমকিতেও দল ছাড়েন নি, রাগে গাছে বেঁধে পিটিয়ে খুন কংগ্রেস কর্মীকে! তৃণমূলের বুথ সভাপতি সহ গ্রেফতার পাঁচ


বুধবার রাতে মানিক রায়ের বাড়িতে চড়াও হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানের সামনে থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। মানিককে যারা টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়, তারা সবাই এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে অভিযোগ করেছেন মানিকের স্ত্রী। গাছে বেঁধে সারা রাত মানিককে লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলের লোকেরা। ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় ততক্ষণে মানিকের প্রাণবায়ু প্রায় বেরিয়ে গেছে। রাতেই ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মুমূর্ষু মানিককে রেফার করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ভোরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

ভিডিও: ময়নাগুড়ির নিহত কংগ্রেস কর্মী মানিক রায়ের স্ত্রীর অভিযোগ।

পুলিশ হত্যাকান্ডটিকে অরাজনৈতিক প্রমাণ করতে প্রতিবেশীদের মধ্যে পুরোনো বিবাদের জের বলে দাবি করলেও ঘটনাক্রম কিন্তু অন্য কথা বলছে। মানিক রায় ময়নাগুড়ি ব্লকে দলের পুরোনো কর্মী বলে জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে। নিজের এলাকায় সক্রিয়ভাবে কংগ্রেস করতেন তিনি। নদী থেকে বেআইনিভাবে বালি-পাথর তুলতে বাধা দেওয়ায় গত পাঁচ বছর ধরেই তাঁর স্বামী তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের রোষের মুখে বলে অভিযোগ করেছেন মানিকের স্ত্রী স্বপ্না রায়। এলাকার শাসকদলের কর্মীরা তাঁদের জমি দখল করতেও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর। এই নিয়ে মানিক রায় ময়নাগুড়ি থানাতে অভিযোগ দায়ের করেও পুলিশের কাছ থেকে কোনও নিরাপত্তা পান নি বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে প্রাণ বাঁচাতে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে শিলিগুড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন মানিক। শিলিগুড়িতেই পরিবার নিয়ে পাঁচ বছর ছিলেন তিনি।

মানিক রায়ের কাছে এলাকার তৃণমূল নেতাদের দাবি ছিল পুলিশের কাছে করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে তৃণমূলে নাম না লেখালে গ্রামে থাকতে পারবেন না তিনি। দলত্যাগ করার চেয়ে গ্রাম ও নিজের ভিটে ত্যাগ করাই শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন এই একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে রবিবার শিলিগুড়ি থেকে হঠাৎ কলোনির বাড়িতে ফিরেছিলেন মানিক রায়। গ্রামে ফিরতেই মানিককে তৃণমূলের লোকেরা আবার হুমকি দেওয়া শুরু করে বলে তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ। হুমকির বিষয়টি মানিক পুলিশের নজরে এনেছিলেন বলেও জানা গেছে। থানা থেকে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না এই কংগ্রেস কর্মী। পুলিশ সবকিছু জানার পরেও কেন মানিক রায়কে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক মহলে।

ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের। ধৃত পাঁচজনকে দেখা যাচ্ছে। ফটো- এন‌এনডিসি

এই খুনের ঘটনায় মৃতের স্ত্রীর তরফে দুই মহিলা সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের বুথ সভাপতি সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে দলের যোগ নেই বলে দাবি করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃনমূল নেতৃত্ব। যদিও জেলার কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, শাসকদলের কর্মীদের হুমকির কাছে নত না হ‌ওয়াতেই জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হল দলের কর্মী মানিক রায়কে।

Feature image and video- NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *