বিশেষ প্রতিবেদন: শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাকি মুখ্যমন্ত্রীরা জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেও সেই পথে হাঁটছেন না মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে মমতা শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করেন, এই দিকেই তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল। মঙ্গলবার সংসদে বাজেট অধিবেশনের দিনেই নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল কংগ্রেস। দলের তিন মুখ্যমন্ত্রী কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি ও হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিংহ সুখু নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না বলে কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কংগ্রেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, পাঞ্জাবের আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মান এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের পিনরাই বিজয়নও নীতি আয়োগের বৈঠক বর্জনের কথা জানিয়ে দেন। কিন্তু কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিক থেকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেই অবশ্য মমতার মনোভাব আঁচ করতে পেরেছিল জোটের বাকি শরিকেরা। বৈঠকে তৃণমূলের তরফে উপস্থিত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়ে দেন, নীতি আয়োগের বৈঠককে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই মমতার মতিগতি নিয়ে খটকা লাগে কংগ্রেস সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাকি শরিকদের।

মমতার মনের কথা জানতে মমতার দলের ও ঘরের লোকেরাই হিমশিম খান শরিকরা তো অনেক দূরের জগতের বাসিন্দা। তবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও থাকতে পারেন, এমন ইঙ্গিত দলের ভেতরে মমতা আগেই দিয়ে রেখেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন বুঝতে পেরেই তাঁকে খোশামোদ করতে নেমে পড়ে কংগ্রেস। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ না দিতে মমতাকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পর্যন্ত করেন কংগ্রেস নেতা কেসি বেনুগোপাল। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ ও দিল্লি যাত্রা- দুটি কর্মসূচি নিয়েই মঙ্গলবার থেকে সবাইকে ধোঁয়াশায় রেখে শুক্রবার নিজের সিদ্ধান্ত খোলাসা করে দিলেন মমতা। বৃহস্পতিবার দিল্লি যাওয়ার কথা থাকলেও যে কোনও উদ্দেশ্যে দিল্লি সফর একদিন পিছিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার দিল্লিতে রওনা দেওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা সাংবাদিকদের জানান, তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির থাকছেন।
কেন তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন, সেই কারণও কলকাতা ও দিল্লিতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চনা করছে। বাংলা ভাগেরও চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি। এর প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবো আমি।” তিনি বলেন, “বৈঠকে থাকব কিছুক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব। বাংলার হয়ে কথা বলব। আর বলতে না দিলে প্রতিবাদ জানিয়ে বেরিয়ে আসব।” ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নীতি আয়োগের বৈঠক বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা মনে করেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। দিল্লিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাজেট অধিবেশনের আগেই নিয়ে ফেলেছিলাম। তারপরেও সবাই মিলে আলোচনা করে যদি সিদ্ধান্ত হত, তা হলে অন্য কিছু ভাবতাম।”
অর্থাৎ নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের হয়ে কংগ্রেস একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল ও মমতার। জোটের অন্য শরিকরা কংগ্রেসের দিকে আঙুল না তুললেও মমতা তুলেছেন। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের দলও ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আছে। সদ্য জামিনে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া হেমন্ত নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন বলেন মমতা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে মমতাই বৈঠকে যোগ দিতে হেমন্তকে রাজি করিয়ে থাকতে পারেন। হেমন্ত সোরেন বৈঠকে থাকলে মমতা প্রমাণ করতে পারবেন, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে তাঁর মতের অনুসারী আরও একজন মুখ্যমন্ত্রীও আছেন।
নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের ভিন্ন অবস্থান আরও একবার প্রমাণ করল, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মমতা একান্তই নিজের মর্জির মালিক। নীতি আয়োগের বৈঠক বিরোধী দল শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বয়কট করলে নিঃসন্দেহে তা প্রধানমন্ত্রীর জন্য অস্বস্তির হত। মমতা ও হেমন্তের উপস্থিতি মোদীর সেই অস্বস্তি অনেকটাই কাটিয়ে দিতে পারবে। এ নিয়ে দুই তরফে ভেতরে ভেতরে কোনও কথা চালাচালি হয়েছে কিনা বাইরে থেকে জানা সম্ভব নয়। তবে বাংলার বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই কটাক্ষের সুরে বলতে শুরু করেছেন, মোদীকে মান্য না করে দিদি যাবেন কই!
Feature graphic is representational and designed by NNDC.