ডেস্ক রিপোর্ট: অসমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কিন্তু ইতিমধ্যেই কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও ব্র্যাঘ্র প্রকল্পে বন্যপ্রাণের বড় রকমের ক্ষতি হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত বন্যায় ২১২টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে বলে হিসেব দিয়েছে জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। যদিও মৃত বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অসমের বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। ‘ভারতীয় এক শৃঙ্গ গন্ডার’ (ইন্ডিয়ান ওয়ান হর্নড রাইনোসারাস)-এর দুই-তৃতীয়াংশের বাস এই পৃথিবী বিখ্যাত বনাঞ্চলে। সর্বশেষ গন্ডার সুমারি অনুযায়ী কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে ২,৬১৩টি এক শিংয়ের গন্ডারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বন্যায় অন্তত ১০টি গন্ডার মারা গেছে বলে অসমের বন দফতর স্বীকার করেছে।
অসমের গোলাঘাট ও নওগাঁ জেলার মোট ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও ব্যাঘ্র প্রকল্প। ২০০৬ সাল থেকে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানকে ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এখানে ১৩৫টি ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ রয়েছে। পূর্ব হিমালয়ের ঠিক পাদদেশে অবস্থিত কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানকে জীব বৈচিত্র্যের এক অনবদ্য সম্ভার বলা চলে। ১৯৮৫ সালে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এবারের বন্যায় এখানে বিলুপ্তপ্রায় ১৭৯টি ‘ইন্ডিয়ান হগ’ প্রজাতির হরিণ মারা গিয়েছে। মারা পড়েছে ২৭টি বারশিঙ্গা (সোয়াম্প) হরিণও। দুটি সম্বর হরিণের দেহ খুঁজে পেয়েছেন বনকর্মীরা। বন্যায় রক্ষা পায় নি পাখিরাও। একটি ম্যাকাও, একটি প্যাঁচা ও দুটি অন্য প্রজাতির পাখির মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বন দফতর।
মরশুমি বন্যা অসমের মানুষের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের জন্য একটা বড় হুমকি। প্রায় প্রত্যেক বছর ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যায় বিপর্যস্ত হয় কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের জীবনচক্র। গত এক দশকে সমস্যাটা বেড়েছে। গত দশ বছরে বন্যায় কাজিরাঙার জঙ্গলে ৮৫টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালের বন্যা অসমের বন দফতরের কাছে আতঙ্কের স্মৃতি হয়ে আছে। সে’বছর বানভাসিতে ২৪টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছিল। এটাই বন্যার কারণে অসমে গন্ডার মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। এ’বারের বন্যায় যাতে সতেরোর পরিস্থিতি ফিরে না আসে, সেই লক্ষ্যে রাতদিন সতর্ক থাকছেন বন দফতরের কর্মী থেকে সর্বোচ্চ আধিকারিক সকলেই।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও ব্র্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতরে নজরদারি চালানোর জন্য মোট ২৩৩টি শিবির রয়েছে বনকর্মীদের। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরেও এখনও ২৬টি শিবির জলের তলায়। জল না নামা পর্যন্ত বনকর্মীদের পক্ষে শিবিরগুলিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের একটি অংশ নিচু জমিতে, আরেকটি অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু। জঙ্গলের উঁচু জায়গাগুলি বন্যার জলে ডুবে যায় নি। নিচু এলাকা থেকে গন্ডার সহ অন্যান্য প্রাণীদের উঁচু এলাকায় পাঠানোর কাজটি করে চলেছেন বনকর্মীরা। বাঘের বাসস্থান জঙ্গলের উঁচু এলাকাগুলিতে। ফলে বন্যায় কাজিরাঙারা বাঘেরা নিরাপদেই আছে।
বন্যার জলে জঙ্গলের ভেতরে যে প্রাণীরা আটকা পড়ে আছে, তাদের উদ্ধার করার তৎপরতা চলছে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রাণ বাঁচাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বহু প্রাণী জাতীয় সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। গাড়ির ধাক্কায় হতাহতও হয়েছে কয়েকটি প্রাণী। জাতীয় সড়কে উঠে পড়া বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে দিনরাত টহল দিচ্ছেন বন দফতরের কর্মীরা। এখনও পর্যন্ত দুটি গন্ডারশাবক, দুটি হস্তিশাবক সহ ১৪৩টি বন্যপ্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ও ব্র্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর ড. সোনালী ঘোষ জানিয়েছেন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চোরাশিকারিরা যাতে বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি না করতে পারে, সেই দিকেও সমান নজর রাখতে হচ্ছে বনরক্ষীদের।
Feature Image Source: X handle.