কোচবিহার: বাংলার মানুষের টাকা মেরে খেয়েছে তৃণমূল- বৃহস্পতিবার বিকেলে কোচবিহারে রাসমেলার মাঠে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে চাঁচাছোলাভাবে বলেই দিলেন মোদী। কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার হয়ে রাসমেলার মাঠে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর বারোটা নাগাদ একই জেলার মাথাভাঙায় সভা করে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ভিড়ের বহরে মোদীর সভার ধারেকাছে ছিল না মাথাভাঙার গুমানির হাটে মমতার সভা। এই দেখে কোচবিহারের রাজনৈতিক মহল বলছে, ভোটের ফল কী হবে পরের কথা, কিন্তু সভার ভিড়ে মমতাকে পাঁচ গোল দিয়ে বেরিয়ে গেলেন মোদী।
মাথাভাঙার সভায়ও মমতা অভিযোগ করেন একশ দিনের কাজ ও আবাস যোজনা সহ একাধিক প্রকল্পের প্রাপ্য পাওনা থেকে রাজ্যকে বঞ্চিত করেছে কেন্দ্র। কোচবিহারের সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে দেরি করেন নি দেশের প্রধানমন্ত্রী। মমতাকে পাল্টা দিয়ে মোদী বলেন, “বাংলায় আমরা রেকর্ড পরিমাণ টাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু এখানকার সরকারের বাধায় বহু কাজ আটকে আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি কার্যকর করে না তৃণমূল সরকার। আয়ুষ্মান ভারতের মতো জাতীয় প্রকল্প বাংলায় চালু হতে দেন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আয়ুষ্মান ভারত বাংলায় চালু হতে দিলে এই রাজ্যের মানুষ দেশের যে কোনও প্রান্তে তার লাভ তুলতে পারতেন।”
বাংলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কিছুই করে নি, মমতার এই অভিযোগ কত বড় মিথ্যা, তার প্রমাণ দিতে গিয়ে এ’দিনের সভায় মোদী বলেন, “বাংলার ৪০ লক্ষ পরিবার বাড়ি পেয়েছে। কেন্দ্র বাংলায় মেডিকেল কলেজ বানাতে চায় কিন্তু রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ হয় না। টাকা ফেরত চলে যায়।” মোদী বলেন, গত দশ বছরে সারা দেশে উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাও তার সুফল পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “১০ বছরে দেশে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’। আরও অনেক কাজ বাকি। লোকে বলে আমার কোনও পরিবার নেই। আমার কাছে দেশই পরিবার।’’
দেশের টাকা মেরে খেলে ছাড় নয়
গরীবের টাকা মেরে খেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আমি বলি, ভ্রষ্টাচার হাটাও, ওরা বলে ভ্রষ্টাচার বাঁচাও। কিন্তু মোদী দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দেবেই।’’ মোদীর সাফ কথা, তৃণমূল বাংলার মানুষের টাকা মেরে খায়। তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির কারণেই বাংলা সারা দেশের মধ্যে পিছিয়ে। বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটকে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস এখানে নিজেদের মধ্যে লড়ছে। কিন্তু দিল্লিতে এক থালিতে খায়। বিরোধীদের রাজনীতি শুধু অপপ্রচারের উপরে টিকে আছে। বিরোধীদের জোট মিথ্যাচারের আরেক নাম।”
সিএএ নিয়ে মমতার কথায় ভয় পাবেন না
লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই দেশে সিএএ লাগু হয়ে গেছে। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। বৃহস্পতিবারের সভা থেকে সিএএ নিয়ে বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব দেন মোদীও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিএএ নিয়ে বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে মোদী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার সিএএ নিয়ে এসেছে। প্রতি পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদীর গ্যারান্টি। বাংলার প্রতিটি পরিবারকে বলব, তৃণমূল, বামেরা আপনাদের ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু আপনারা ১০ বছর আমার কাজ দেখেছেন। মোদীর গ্যারান্টির উপর ভরসা রেখে নাগরিকত্ব আইনের লাভ ওঠান।”
সন্দেশখালির ঘটনায় তৃণমূল পার পাবে না
সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের অনুগামীদের হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় রাজ্য তোলপাড় হয়েছিল। ধৃত শাহজাহান শেখ এখন সিবিআই হেফাজতে। কোচবিহারে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মোদী বলেন, “সন্দেশখালিতে মা-বোনেদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় একমাত্র দায়ী তৃণমূল। এর জন্য তৃণমূলকে ভুগতে হবে।” মোদী আরও বলেন, “বাংলার তিন কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানাবো আমরা। ওঁদের ড্রোন পাইলট বানাব। এতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে গতি আসবে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি এখানে তাই বিকাশের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে।’’
ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বানাতে পারে একমাত্র মোদী সরকার
১০ বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে বলে কোচবিহারে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি আরও বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, কারণ আমরা সৎ। আমরা সৎ দেখেই দেশের উন্নতি করতে পেরেছি। যেখান থেকে বাকি সকলের আশা দেওয়া শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু হয় ‘মোদীকা গ্যারান্টি’।” মোদী বলেন, “সামনে লক্ষ্য দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলা। এর জন্য কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। দুর্বল সরকারে কাজ হয় না। আর শক্তিশালী সরকার দিতে পারেন একমাত্র মোদী।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদী ভারতের জনগণের সামান্য সেবক মাত্র। ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে মোদীকে। আপনারা ‘মোদী কা গ্যারান্টি’-র উপর ভরসা রাখুন।