'জনগণের হকের টাকা তৃণমূলকে লুটতে দেব না', মমতার অভিযোগ উড়িয়ে ধূপগুড়িতে পাল্টা দিলেন মোদী

‘জনগণের হকের টাকা তৃণমূলকে লুটতে দেব না’, মমতার অভিযোগ উড়িয়ে ধূপগুড়িতে পাল্টা দিলেন মোদী


দেরিতে প্রার্থী ঘোষণা হ‌ওয়ায় জলপাইগুড়িতে প্রথম দিকে প্রচারে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। জলপাইগুড়ি এখন বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। যদিও ৭ মাস আগে ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে সামান্য ভোটে তৃণমূলের কাছে জেতা আসন হারিয়েছে পদ্ম শিবির। উপনির্বাচনে ঘাসফুল প্রতীকে জেতা ধূপগুড়ির বিধায়ক অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়কেই জলপাইগুড়ি লোকসভায় প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তবে জেলার বিজেপি কার্যকর্তারা দাবি করছেন, লোকসভায় মোদীর ভোট, হেসেখেলেই নির্মলকে হারাবেন জয়ন্ত। রবিবার বিকেল মোদীর ধূপগুড়ির সভায় যে’ভাবে মানুষের ঢল নেমেছিল, তাতে বিজয়ের আশায় বুক বাঁধতেই পারেন জলপাইগুড়ির বিজেপি নেতৃত্ব, এমনটাই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) জলপাইগুড়ির এবিপিসি গ্রাউন্ডে দলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের সমর্থনে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিড়কে মাপকাঠি হিসেবে ধরলে, মোদীর সভার ধারেকাছেও যেতে ব্যর্থ মমতার সভা।

ভিডিও: ধূপগুড়িতে মোদীর সভায় জনজোয়ার।

ধূপগুড়ির সভায় আগামী ১৯ এপ্রিল দলের প্রার্থী জয়ন্ত রায়কে রেকর্ড ভোটে বিজয়ী করতে জলপাইগুড়ির মানুষের কাছে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এবারের ভোট শক্তিশালী ভারত গড়ার জন্য শক্তিশালী সরকার গড়ার ভোট। কেন্দ্রীয় সরকার যত মজবুত হবে, তত‌ই বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং ভারতের উপর দুনিয়ার নির্ভরতা বাড়বে।” কেবল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার থাকলেই দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, বেশি বেশি শিল্পকারখানা হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামবে বলে সভায় দাবি করেন মোদী।

সভায় নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, “দশ বছরের এনডিএ জামানায় ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার উপরে উঠেছে। এসসি-এসটি সম্প্রদায়ভুক্ত তিন কোটি পরিবারের কাছে বিজলি, পানীয় জল ও গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে সরকার। ২৩ লক্ষ আদিবাসী পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে।” মোদী বলেন, “দশ বছরে দেশে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা ট্রেলার ছিল মাত্র। আসল কাজ এখনও বাকি। ভারতকে বিশ্বের তিন নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে হবে। এনডিএ সরকারের পরবর্তী বড় পরিকল্পনা, তিন কোটি গ্রামের মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানানো।”

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় অভিযোগ, একশ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা থেকে রাজ্যকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধূপগুড়িতে মমতার অভিযোগ নস্যাৎ করে মোদী বলেন, “গরীবদের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলায় প্রকল্প চালু করতে চাইলেই ব্রেক মেরে তা আটকে দেয় তৃণমূল সরকার। দরিদ্রদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা তৃণমূলের নেতারা লুটে খেয়েছে।” তৃণমূলকে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “মোদী চায় গরীব কল্যাণের টাকা সরাসরি লাভার্থীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাক। কিন্তু তৃণমূল চায়,কেন্দ্রের পাঠানো টাকা আগে তাদের পকেটে ঢুকুক।” জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণের হকের পয়সা আমি কীভাবে টিএমসিকে লুটতে দিই, আপনারাই বলেন। তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্পের লাভ উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছায় নি।”

ভূপতিনগর বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এন‌আইএ-র আধিকারিকেরা। ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাড়িতে তুলতেই এন‌আইএ-র তদন্তকারীদের উপরে হামলা করে গ্রামবাসীরা। এই ঘটনায় মমতার অভিযোগ, ভোটে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলতে এন‌আইএ-কে ব্যবহার করছে বিজেপি। যদিও ধূপগুড়িতে প্রচারে এসে মমতার অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “টিএমসি চায় তাদের তোলাবাজদের, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের এবং গুন্ডাদের সন্ত্রাস করার খোলা লাইসেন্স মিলুক। যখন‌ই কোন‌ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এই রাজ্যে তদন্ত করতে আসে, টিএমসি তাদের উপর হামলা চালায়। টিএমসি আসলে আইন ও সংবিধানকে তছনছ করা পার্টি।”

সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে ধূপগুড়িতে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সন্দেশখালিতে আপনারা দেখেছেন, কী হয়েছে। গোটা‌ দেশ সন্দেশখালির ঘটনা জেনে গেছে। এই রাজ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, প্রত্যেক ঘটনায় আদালকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।’’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। আমি পরামর্শ নিচ্ছি, কী ভাবে ওই টাকা বঞ্চিতদের ফেরত দেওয়া যায়। বেচারা শিক্ষকেরা চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন। আমি ওঁদের টাকা ফেরত দেব।’’

ভিডিও: ধূপগুড়িতে বিজেপির সভায় মোদীর ভাষণের খন্ডাংশ।

সভায় হাজির জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ভোটে তৃণমূলকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। এক-একটি বুথে টিএমসির জামানত জব্দ হ‌ওয়া দরকার। আপনারা বুথে বুথে টিএমসির জামানত জব্দ করতে পারবেন কি পারবেন না?” জনগণ গর্জন করে মোদীকে জবাব দেয়, পারব।

Feature image- NNDC. Video- Collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *