বিশেষ প্রতিবেদন: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯৯০-এর ২৫ সেপ্টেম্বর গুজরাটের সোমনাথ মন্দির থেকে রাম রথযাত্রা শুরু করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে ৩২ বছর আগে মাটিতে মিশে যাওয়া বাবরি মসজিদের জায়গায় নব নির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন ও মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীরামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। আদবানি ভাগ্যবান যে নিজের চোখে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়া আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি দেখে গেলেন। যদিও ৯৬ বছরের বৃদ্ধের পক্ষে শারীরিক কারণে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অযোধ্যায় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় নি।
রামজন্মভূমি পুনরুদ্ধার আন্দোলনের বয়স স্বাধীনতার সমসাময়িক। রাজীব গান্ধীর আমলে যা সংঘপরিবারের সংঘবদ্ধ আন্দোলনে পরিণত হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিজেপির চরম শত্রুও স্বীকার করবেন, রামমন্দির আন্দোলনের সাফল্য একশ শতাংশ। রামজন্মভূমি পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িয়ে থাকলেও বিজেপি একে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের ভরকেন্দ্রে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছে। যে হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে আজ রাহুল গান্ধীর কালঘাম ছুটে যাচ্ছে সেই হিন্দুত্ব বিজেপিকে তিন (১৯৮৪) থেকে তিনশো তিনে (২০১৯) পৌঁছে দিয়েছে মাত্র ৩৫ বছরে। ১৯৮৯-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্তি ছিল ৮৯ আসন। এরপর থেকে ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান রোখা যায় নি।
রাম! হিন্দু মানসে এর শক্তি কত প্রচন্ড, আশা করা যায় বামেদের মনেও এই নিয়ে আর সংশয়ের অবকাশ নেই। রাম শুধুই হিন্দুদের- সংঘ তা মনে করে না। বরং রামায়ণ, রামচন্দ্র- ভারতাত্মার সঙ্গে জড়িয়ে, এটাই মোহন ভাগবতদের আত্মোপলব্ধি। সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা শেষে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, “এই রামমন্দির শুধুই মন্দির নয় ভারতবর্ষের দর্শনও।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “প্রভু রামকে দেশের নিত্যতা, নিয়ন্ত্রক বলে জানতে হবে। তিনি ব্যাপক। তাঁর কৃপায় আমরা যা অনুভব করতে পারছি।” মোদী বলেন, “রামের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। আমাদের বিচার বিভাগ সমস্যার নিষ্পত্তি করেছে। আইন মেনেই রামমন্দির তৈরি হয়েছে।” রামমন্দিরের উদ্বোধনকে নিজেদের বিজয় হিসেবেই দেখছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে এই বিজয় তাদের আরও বিনয়ী করবে বলে সকলকে আশ্বস্ত করেছেন মোদী।
রামলালাকে তাঁবু থেকে নয়নাভিরাম মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার, বিজেপি এবং গোটা সংঘ পরিবার ঘটনাটিকে একটি মহোৎসবে পরিণত করেছে। হিন্দুত্ব শিবিরের জন্য ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি দিনটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। তারা বলেছিল, “মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’। এটাই ছিল তাদের সবথেকে প্রিয় স্লোগান। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত স্থানেই রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন হিন্দুত্ববাদীরা। তাঁদের কাছে এর চেয়ে পরম প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ইতিহাস প্রেরিত পুরুষ ভাবতেই পারেন। কারণ, তাঁর রাজত্বকালে তাঁর হাত দিয়েই রামমন্দিরের উদ্বোধন। যে রামমন্দিরকে হিন্দু ভারতের পুনর্জাগরণের সূচনা বলে দাবি করছে সংঘ পরিবার, লোকসভা নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে মহা সমারোহে সেই মন্দিরের উদ্বোধনের রাজনৈতিক গুরুত্ব কী হতে পারে; মোদীর শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলেই তা অনুভব করতে পারছেন।
বলা যেতেই পারে, ১৯৯০-এর ২৫ সেপ্টেম্বর সোমনাথ থেকে যে রথযাত্রা শুরু করেছিলেন আদবানি, ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় মোদীর নেতৃত্বে সেই যাত্রার সফল সমাপ্তি।
Feature graphic- NNDC.