৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০: ব্রিটিশ সিংহের ক্ষমতার অলিন্দে তিন বাঙালি শার্দুলের গর্জন

৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০: ব্রিটিশ সিংহের ক্ষমতার অলিন্দে তিন বাঙালি শার্দুলের গর্জন


ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধ বা ‘দ্য ব্যাটেল অফ ভারান্ধা’-র তিন বিপ্লবী নায়ক ‘বিবাদী‘র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি-

৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০। শীতের কলকাতায় সবে দুপুর গড়িয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা। ডালহৌসি স্কয়ার। সামনেই বিশাল লাল বাড়ি। রাইটার্স বিল্ডিং। অবিভক্ত বাংলায় ব্রিটিশ প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। ব্রিটিশ সিংহ ! কিন্তু দেশটা যে বাঙালি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। সিংহের গুহায় ঢুকেই সিংহের কেশর উপড়ে ফেলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিন বাঙালি শার্দুল দৃপ্ত পদে নামলেন ট্যাক্সি থেকে। আর কিছুক্ষণ পরেই রচিত হবে রক্তেলেখা ইতিহাস। সেই ইতিহাসের তিন নায়ককে বাঙালি ভালবেসে ডাকে ‘বিবাদী’। বিনয়-বাদল-দীনেশ। বিপ্লবের তিনটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। বিনয় বসু। বাদল গুপ্ত। দীনেশ গুপ্ত। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ব্রিটিশের প্রহরীরা বাঙালি যোদ্ধাত্রয়কে সেদিন চিনতেই পারে নি।‌ চিনবে কী করে! পুরোদস্তুর সাহেবি পোশাকে আচ্ছাদিত তিন বাঙালি যুবক। দেখে বরং ম্যাজিস্ট্রেট ভেবে লম্বা সেলাম ঠুকেছিল দ্বাররক্ষী। সিঁড়ি ভেঙে গটগট করে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দোতলায় উঠে যান যুবক তিনটি। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দোতলার বারান্দা। ব্রিটিশ রাজের ক্ষমতার অলিন্দ। মাত্র তিনজন বাঙালি যুবক সেই অলিন্দ কাঁপিয়ে দেবেন সেদিন। ইতিহাস ঘটনাটিকে লিপিবদ্ধ করবে অলিন্দ যুদ্ধ নামে। দ্য বারান্দা ব্যাটেল।

মহাকরণের সামনে বিপ্লবীত্রয়ী বিনয়-বাদল-দীনেশের পূণাবয়ব মূর্তি। ছবি- এন‌এনডিসি

তিন বিপ্লবী রাইটার্সের অলিন্দে অ্যাকশন শুরু করেন বেলা বারোটা বেজে পাঁচ মিনিটে। তিন সেনাদলের সেনাপতি বিনয় বসু। মাত্র বাইশ বছরের যুবক। পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের ছেলে। ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। মেধাবী। মৃদুভাষী। রাজপুত্রের মতো দেখতে। কিন্তু ভেতরে আগুন। অলিন্দ যুদ্ধ ছিল বিনয়ের নাতিদীর্ঘ বিপ্লবী জীবনের সেকেন্ড অ্যাকশন। মাত্র ৯৯ দিন আগেই ১৯৩০-এর ২৯ অগাস্ট ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল চত্বরে বেঙ্গল পুলিশের আইজিপি এফ জে লোম্যানকে গুলি করে মারেন বিনয় বসু। বিনয়ের রিভলবারের তিন নম্বর বুলেটে গুরুতর জখম হন ঢাকার পুলিশ সুপার ই হডসন। ইংরেজের পুলিশ তাঁকে খাঁচাবন্দী করার আগেই ইংরেজের ঘরে ঢুকে ইংরেজকে মারার দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অভিযানে সামিল হয়ে যান বিনয় বসু। অনেক ভেবেই বিনয়কে অলিন্দ যুদ্ধের ক্যাপ্টেন বেছে নিয়ে ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের শীর্ষ নেতৃত্ব। মেধাবী বিনয় বসু ছিলেন দায়িত্ব পালনে ধীর,স্থির এবং চরম বিপদের মুহূর্তেও অচঞ্চল। বিনয়ের‌ দুই যোগ্য সহযোদ্ধার একজন বাদল গুপ্ত। বাদলের ভাল নাম সুধীর। বাদলের‌ও বাড়ি ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার পূর্ব শিমূলিয়া গ্রামে। দুই কাকা ছিলেন অগ্নি যুগের বিপ্লবী, আলিপুর বোমার মামলার আসামি। রক্তেই দেশপ্রেমের বীজ । মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে নাম লেখান বাদল। অলিন্দ যুদ্ধ শেষে যখন গলায় সায়ানাইড ঢেলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন তখন বিপ্লবী বাদল গুপ্তের বয়স মাত্র আঠার। অলিন্দ যুদ্ধের যোদ্ধাত্রয়ের মধ্যে সবার শেষে বীরের‌ মৃত্যু বরণ করেন দীনেশ গুপ্ত। ঘটনার সাত মাস পরে অকুতোভয় সেই বিপ্লবীর মহান মৃত্যু লেখা হয়েছিল ইংরেজের ফাঁসির রজ্জুতে। ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্ব বঙ্গের মুন্সিগঞ্জের যশোলঙ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। অলিন্দ যুদ্ধে যোগ দেওয়ার দু’দিন আগেই ঊনিশ পূর্ণ করেন দীনেশ। ঢাকা কলেজে পাঠরত অবস্থাতেই ১৯২৮’য়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে সামিল হয়েছিলেন তিনি।

চাইলে সেদিন অবিভক্ত বঙ্গে ইংরেজ সরকারের ‌সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের লাল বাড়ি তছনছ করে দিতে পারতেন তিন বিপ্লবী। কিন্তু বেলাগাম সন্ত্রাস দ্বারা নিরীহ মানুষের রক্তপাত ঘটানো নয় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের লক্ষ্য ছিল অত্যাচারী উচ্চ পদস্থ ব্রিটিশ আধিকারিকদের উচিত শিক্ষা দেওয়া। বেছে বেছে উৎপীড়ক অফিসারদের টার্গেট করতেন বিপ্লবীরা। সেই সময় পুলিশের কারা বিভাগের আইজি ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এন এস সিম্পসন। রাজবন্দীরা একটু দাবিদাওয়া জানালেই তাঁদের উপর রক্ষীদের লেলিয়ে দিত কারা কর্তৃপক্ষ। বেধড়ক মারধর করা হত বন্দী স্বদেশী আন্দোলনকারী ও বিপ্লবীদের। জেলে সুভাষচন্দ্র বসু পর্যন্ত নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পান নি। জেলখানায় রাজবন্দী পীড়নে উস্কানি দিতেন খোদ আই জি প্রিজন কর্নেল সিম্পসন। প্রেসিডেন্সি জেলে সুভাষচন্দ্র বসুর নিগ্রহ সিম্পসন সাহেবকে তৃপ্তি দিয়েছিল। কাজেই সিম্পসনকে বাঁচিয়ে রাখা আর মোটেই উচিত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় বিভির হাই কমান্ড। ১৯৩০ এর ৮ ডিসেম্বর দুপুর বারোটা পাঁচ মিনিট- রাইটার্সে সটান আইজি প্রিজনের কক্ষে ঢুকে পড়েন বিনয়-বাদল-দীনেশ । কর্নেল সিম্পসন তখন কোনও একটি ফাইলে চোখ বোলাচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন একান্ত সচিব জ্ঞান গুহ। আগত তিনজনের দিকে সিম্পসন সাহেব চোখ তুলে চাইতেই এক সাথে গর্জে উঠল তিনটি রিভলবার। দ্রিম! দ্রিম ! দ্রিম ! চেয়ারেই এলিয়ে পড়ল কর্নেল সিম্পসনের রক্তাক্ত দেহ। ততক্ষণে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে অলিন্দ যুদ্ধ। রাইটার্স বিল্ডিং জুড়ে হ‌ইচ‌ই, ত্রাস। ভয়ে থরহরি কম্প যাকে বলে‌, সেই‌ অবস্থা অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ প্রশাসনের সদর দফতরে। রাইটার্সের বারান্দা দিয়ে উদ্যত রিভলবার হাতে ছুটে চলছেন তিন বিপ্লবী। বিপ্লবীত্রয়ের পরবর্তী টার্গেট হোম সেক্রেটারি আলবিয়ান মার। আলবিয়ান মারের ঘরের দিকে ছুটলেন তিনজন। পথ রোধ করতে গিয়ে বিপ্লবীদের গুলিতে আহত হলেন এক ইংরেজ সেক্রেটারি।

মুহূর্তে কলকাতায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবর- সাহেবদের লাল বাড়িতে ‌হানা দিয়েছে বিপ্লবীরা। চাপা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল বাঙালি। কলকাতা পুলিশের কমিশনার তখন স্যার চার্লস টেগার্ট- বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন দমনে ব্রিটিশ প্রশাসনের সবথেকে নির্ভরযোগ্য অফিসার। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন সশস্ত্র বাঙালি, আইজি প্রিজন এন এস সিম্পসনের ভবলীলা সাঙ্গ- এই খবর লালবাজারে পৌঁছানো মাত্র‌ই নিজের চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন টেগার্ট। বাঙালির স্পর্ধা দেখে হতভম্ব অভিজাত দাম্ভিক ইংরেজ। তিন বাঙালি শার্দুলকে ঘায়েল করতে বিশাল বাহিনী নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দিকে ছুটলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার স্যার চার্লস টেগার্ট। শুধু পুলিশে ভরসা নেই। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে আনা হল গোর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যদের। রাইটার্সের ভেতরে তখন হোম সেক্রেটারি আলবিয়ান মারের কক্ষে গুলির আওয়াজ। তিন বিপ্লবীর সামনে এসে দাঁড়ালেন বেঙ্গল পুলিশের আইজি ক্রেগ। ক্রেগের পিস্তল গর্জে উঠল। জবাব দিলেন বিনয়-বাদল-দীনেশ‌ও। ক্রেগ সাহেব পিস্তল ফেলে পালিয়ে বাঁচেন। ক্রেগের পিস্তল মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে আসেন মিঃ ফোর্ড। কিন্তু কে রুখবে তিন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে। পালালেন ফোর্ড‌ও। এবার বিপ্লবীদের মুখোমুখি হলেন পুলিশের ডেপুটি ইনিস্পেক্টার জেনারেল জোন্স। কোমর থেকে সার্ভিস রিভলবার বের করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালালেন। কিন্তু তিন বিপ্লবীর বুলেটের সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না জোন্স সাহেব। রণেভঙ্গ দিলেন তিনিও। বিপ্লবীদের গুলিতে আহত হলেন জুডিশিয়াল সেক্রেটারি নেলসন।

তিন বাঙালিকে তিনি হেলায় ধরাশায়ী করতে পারবেন ভেবে সিঁড়ি বেয়ে রাইটার্সের দোতালায় উঠে পড়েছিলেন পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট। কিন্তু বেগতিক বুঝে পিছিয়ে আসেন টেগার্টের মতো সাহসী ব্রিটিশ অফিসার‌ও। মাত্র তিনজন বাঙালি বিপ্লবীকে শেষ করার জন্য শেষে ডাক পড়ে গোর্খা বাহিনীর‌ই। রাইটার্স বিল্ডিং ঘিরে ফেলে গোর্খা রেজিমেন্টের অসংখ্য সৈনিক। অগুনতি রাইফেলের মুখ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসতে থাকে তপ্ত বুলেট। তিন বিপ্লবীর হাতিয়ার তিনটি মাত্র রিভলবার। রাইটার্স বিল্ডিং জুড়ে জায়গা পাল্টে পাল্টে ইংরেজের বিশাল বাহিনীকে জবাব দিতে থাকেন বিনয়-বাদল-দীনেশ। শেষ বুলেটটি খরচ করে না ফেলা পর্যন্ত রণেভঙ্গ দেন নি একজন‌ও। অসম যুদ্ধে যখন থামার ক্ষণটি এল তখন একটি ঘরে ঢুকে পড়লেন তিন যোদ্ধা। সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া ছিল। ধরা দেবে না কেউ। যুদ্ধ করতে করতে বাদলের সব বুলেট শেষ। বন্দেমাতরম বলে গলায় সায়নাইডের পুরিয়া ঢেলে দিলেন বিপ্লবী বাদল গুপ্ত। রণাঙ্গনে‌ই মৃত্যু বরণ করলেন বাদল। তাঁর লাশটুকু মাত্র ছোঁয়ার সুযোগ পেল ইংরেজের পুলিশ। বন্দেমাতরম বলে রিভলবারের ‌নল মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপলেন বিনয় ও দীনেশ । তিন বিপ্লবী ভূলুণ্ঠিত হ‌ওয়ার আগে পর্যন্ত রাইটার্স বিল্ডিংয়ের উপরে ওঠার সাহস পায় নি ইংরেজের বিশাল বাহিনী। অলিন্দ যখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ এবং প্রতিরোধের মুখোমুখি হ‌ওয়ার শঙ্কা যখন সম্পূর্ণ কেটে গেছে তখন‌ই কেবল সসৈন্যে উপরে উঠলেন চার্লস টেগার্ট। রক্তে ভেসে যাওয়া ঘর থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বিনয় ও দীনেশকে। দীনেশের গুলি লেগেছিল গলায়। বিনয়ের কপালের দু’দিকে।

ভারতের সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে এক‌ই বছরে দুটি বিরাট ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বাঙালি বিপ্লবীরা। একটি , ১৯৩০ এর ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ। আরেকটি এক‌ই বছরের ৮ ডিসেম্বর ইংরেজ প্রশাসনের সদর দফতর রাইটার্স বিল্ডিংয়ে হামলা। দুই অভিযানের পেছনেই ছিল নেতৃত্বের নিখুঁত পরিকল্পনা। ইংরেজ শাসকের‌ অহমিকাকে চূর্ণ করার পাশাপাশি দুই অভিযান প্রমাণ করেছিল বাঙালি পদাঘাত খাওয়া ভীরু কাপুরুষের জাত নয়। বাঙালি মরতে জানে । বাঙালি মারতেও জানে। ব্রিটিশ প্রশাসনের হৃদপিন্ডে বিনয়-বাদল-দীনেশের যুদ্ধ মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধ ব্রিটিশ প্রশাসনকে এতটাই ব্যতিব্যস্ত করেছিল যে ইংরেজের পেপার দ্য স্টেটসম্যান পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল- হ্যাঁ এটা একটা যুদ্ধ‌ই। ১৯৩০-এর ৯ ডিসেম্বরের স্টেটসম্যান ঘটনাটিকে আখ্যা দিল the battle of verandah , অলিন্দ যুদ্ধ বলে।

অলিন্দ যুদ্ধের ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় ১৯৩০-এর ১৩ ডিসেম্বর বিদায় নিলেন যুদ্ধের সেনাপতি বিনয়কৃষ্ণ বসু। বিনয়কে বাঁচিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করেছিলেন টেগার্ট। কিন্তু মুক্ত পাখি যে ধরা দেবে না ব্রিটিশের খাঁচায়।‌ পাছে সুস্থ হয়ে ওঠেন এই ভয়ে মাথার ক্ষতস্থানে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে সেপটিক করে দেন জায়গাটা। ডাক্তারির ছাত্র। জানতেন দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেহে ।‌ হল‌ও তাই । টেগার্টকে কলা দেখিয়ে পালালেন নিঃশঙ্ক চিত্ত বাঙালি বিপ্লবী। গভীর রাতে দাদা বিজয় বসুর হাতে বিনয়ের‌ নশ্বর দেহ তুলে দেয় পুলিশ। দিনে শেষকৃত্য হলে জনতার ঢল নামব , এই ছিল পুলিশের ভয়। গভীর রাতে মেডিকেল কলেজ থেকে ভাইয়ের দেহ নিয়ে রাজপথে ‌নেমে বিজয় বসু দেখেন রাস্তা লোকে লোকারণ্য। হাজার হাজার মানুষ শেষবারের মতো একবার দেখতে চায় তাঁদের নায়ককে। রাতের অন্ধকার কাঁপিয়ে সেদিন নগর কলকাতা গর্জে উঠেছিল বিপ্লবী বিনয় বসুর জয়ধ্বনিতে।

ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। যুদ্ধের সাত মাস পরে ১৯৩১-এর ৭ জুলাই ভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি হয় দীনেশের। আপিল আদালত ফাঁসির রায়‌ই বহাল রেখেছে- এই কথা শোনার পর বৌদিকে চিঠি লিখতে বসেন দীনেশ। অকুতোভয় বিপ্লবী বৌদিকে লিখছেন- “কীসে তোমাদের মনে শান্তি আসিতে পারে , তুমি তাহার উপায় আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছ। আমি কী আর বলিতে পারি ! তবে আমার মনে হয় মরণকে আমরা বড় ভয় করি, তাই মরণের কাছে আমরা পরাজিত হ‌ই। এই ভয় যদি জয় করিতে পারি,তবে মরণ আমাদের কাছে তুচ্ছ হ‌ইয়া দাঁড়াইবে। মরণকে আমাদের ভয় না করিয়া নির্ভয়ে প্রশান্ত চিত্তে বরণ করিয়া ল‌ইতে হ‌ইবে। মরণকে ভয় করিলে ধর্মের প্রধান সোপান‌ই যে আমরা উত্তীর্ণ হ‌ইতে পারিব না। আমরা জানি মরণ আমাদের হয় না, হয় এই নশ্বর দেহের। আত্মা অবিনশ্বর। সেই আত্মাই আমি- আর সেই আত্মাই ভগবান । মানুষের যখন সেই উপলব্ধি হয়, তখন‌ই সে বলিতে পারে আমিই সে …।“ জীবন-মৃত্যুর সীমান্তে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনকে এমন চিঠি লিখতে পারেন একমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী পুরুষ‌ই।

Feature graphic is representational.

  • ঋণ স্বীকার– বিনয় বাদল দীনেশ,শৈলেশ দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *