পলিটিক্যাল ডেস্ক: অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ ছিল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তবে রাজ্য বিভাজনের পর অন্ধ্রের পাশাপাশি নব গঠিত তেলেঙ্গানাতেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল কংগ্রেস। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেসের জমি খেয়েছে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। অন্য দিকে ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য তৈরি হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার বাইরে কংগ্রেস। তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কে চন্দ্রশেখর রাও। সেই সুবাদে সেখানে কেসিআরের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। রাজ্য গঠনের পর তাঁর দল টিআরএস-এর হাতেই ক্ষমতার রাশ তুলে দিয়েছিল জনগণ। পর পর দু’বার মুখ্যমন্ত্রী হন কেসিআর। তবে জনগণের মনে যে জায়গাটা দখল করতে পেরেছিলেন নিজের দোষেই ক্রমে তা হারিয়ে ফেলেন তিনি। তুঘলকি কান্ডকারখানা, সরকারি অর্থের চূড়ান্ত অপচয় ও দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ কেসিআর দল ও প্রশাসনের দায়িত্ব ছেলের হাতে দিয়ে নেশা করে নিজের প্রাসাদেই পড়ে থাকতেন দিনের পর দিন।
তেলেঙ্গানায় বিজেপির আচ্ছে দিন আসন্ন!
দক্ষিণের রাজ্য গুলির মধ্যে কর্নাটকের পর একমাত্র তেলেঙ্গানাতেই বিজেপির শক্তি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। তবে কর্নাটকের মতো তেলেঙ্গানায় জমি তৈরি করতে পদ্মের আরও একটু সময় লাগবে। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে ৬.৯৮ শতাংশ ভোটের সুবাদে বিজেপি দক্ষিণের এই রাজ্যে পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। তেইশে বিজেপির ভোট বেড়ে হয়েছে ১৩.৯০ শতাংশ। তেলেঙ্গানা বিধানসভায় পদ্ম শিবির থেকে এবার ৮ প্রতিনিধি যাচ্ছেন। এই ফল প্রমাণ করে ভবিষ্যতে তেলেঙ্গানায় বিজেপির ‘আচ্ছে দিন’ আসন্ন। কেসিআরের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি’ এখন নাম পাল্টে ‘ভারত রাষ্ট্র সমিতি’। তেলেঙ্গানা কেটে ভারত করায় অবশ্য কেসিআরের দলের আঞ্চলিক চরিত্র ঘুচে যায় নি। আঞ্চলিক দল মানেই পারিবারিক সম্পত্তি। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ভাবে কেসিআরের পার্টি যত দুর্বল হবে, বিজেপির সামনে ততই সুযোগ তৈরি হবে তেলেঙ্গানায় নিজেদের আরও শক্তিশালী করার।
দক্ষ সংগঠক রেবন্ত রেড্ডির পরিশ্রমের ফল
তেলেঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি আনুমুলা রেবন্ত রেড্ডি চৌকস নেতা। ছাত্র জীবনে এবিভিপি করা রেবন্ত টিডিপি ছেড়ে কংগ্রেসে এসেছেন ২০১৭ সালে। একুশ সালে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব পান। দলকে ক্ষমতায় আনতে দু’বছর অনেক পরিশ্রম করেছেন এই জনপ্রিয় নেতা। উত্তরের বিহার-ইউপির মতো দক্ষিণের তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের জনভিত্তি কখনোই আঞ্চলিক দলের কাছে শেষ হয়ে যায় নি। তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময় টিআরএস-কে সমর্থন দিয়েছিল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-টু সরকারের আমলেই সংসদে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিল পাশ হয়েছিল। ফলে কংগ্রেসের প্রতি তেলেঙ্গানাবাসীদের একটা সহানুভূতি ছিলই। কেসিআরের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যত বেড়েছে মানুষ ততই প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে তেলেঙ্গানায় ২৮.৪৩ শতাংশ ভোট ও ১৯টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। তেইশে কংগ্রেসের ভোট ৩৯.৩৯ শতাংশ। আসন ৬৪। ১০.৯৬ শতাংশ ভোট জাম্প করার সুবাদেই কংগ্রেসের আসন বেড়েছে ৪৫টি।
২০১৮-য় টিআরএস (বিআরএস) পেয়েছিল ৪৬.৮৭ শতাংশ ভোট ও ৮৮টি আসন। এবার বিআরএস-এর ভোটের শতাংশ ৩৭.৩৫ শতাংশ। আসন মাত্র ৩৯। কেসিআরের দলের ভোট কমেছে ৯.৫২ শতাংশ। ফলে অর্ধেকেরও বেশি আসন হারিয়ে মসনদ থেকেই ছিটকে গেছেন কে চন্দ্রশেখর রাও। তেলেঙ্গানায় আসাদুদ্দিন ওয়াইসির মিম ৭ আসন পেলেও মিমের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ২.২২ শতাংশ। হায়দ্রাবাদ-সেকেন্দ্রাবাদের বাইরে তাঁর দলের কোনও প্রভাব না থাকায় তেলেঙ্গানার ফলে সার্বিক কোনও ছাপ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন ওয়াইসি।
দাক্ষিণাত্যে জয় এলেও আর্যাবর্তে বিপর্যয়
তেলেঙ্গানায় জেতার সুবাদে কর্নাটকের পর দক্ষিণের দ্বিতীয় রাজ্যে সরকার গঠনের সুযোগ পেল কংগ্রেস। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানে কংগ্রেসের বিজয়কতেন উড়ল বটে কিন্তু রাজস্থান, ছত্তিশগড় হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ দখলের স্বপ্ন বিফলে যাওয়ায় তেলেঙ্গানা বিজয়ের স্বাদ রাহুল গান্ধীর জিভে পানসে লাগতে বাধ্য।
লোকসভা নির্বাচনের আগে পাঁচ রাজ্যের ভোটকে সেমিফাইনালের তকমা লাগিয়েছিল কংগ্রেসই। সেমিফাইনালে তেলেঙ্গানা জয় কংগ্রেসের জন্য ‘কনশোলেসন প্রাইজ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের তিনটিই বিজেপির দখলে যাওয়ার পর ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কংগ্রেসের আধিপত্য ধরে রাখাই এখন রাহুল গান্ধীর জন্য চ্যালেঞ্জের। লোকসভা ভোটের তিন মাস আগে মোটেই স্বস্তিতে নেই কংগ্রেস। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কংগ্রেসেকে দক্ষিণে ‘ডিভিডেন্ড’ দিলেও আর্যাবর্তে দলটির দুর্দশা কাটল কই!
Feature graphic is representational.