দিল্লি: সংসদে জঙ্গি হামলার তেইশতম বার্ষিকীর দিনেই লোকসভার ফ্লোরে ‘রং বোমা’ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আতঙ্ক ছড়ালো দু’জন। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলছে। বুধবার দুপুরে সংসদের নতুন ভবনে লোকসভায় জিরো আওয়ারে যখন মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বক্তব্য পেশ করছিলেন, তখনই আচমকা ‘ভিজিটর্স গ্যালারি’ থেকে ফ্লোরে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই যুবক। তারা অধিবেশন কক্ষের ভেতরে গ্যাস জাতীয় কিছু স্প্রে করছিল, যা হলুদ রঙের ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। যুবক দুটি এক বেঞ্চ থেকে আরেক বেঞ্চে লাফিয়ে লাফিয়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছিল। নিরপত্তারক্ষীরা ওই দু’জনকে পাকড়াও করার আগেই সাংসদের মধ্যে থেকে কয়েকজন তাদের জাপটে ধরে ফেলেন। রাগে দুটিকে দু-চারটি কিল-চড়ও বসিয়ে দেন সাংসদেরা। তবে ততক্ষণে সংসদ সদস্যদের মনে গ্যাস বোমার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
লোকসভার ভেতরে ধোঁয়া স্প্রে করার সময় হামলাকারীরা ‘তানাশাহি নেহি চলে গা’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল বলে জানা গেছে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের জাপটে ধরে যখন সদন থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনও ধৃত দু’জন স্লোগান দিচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে ‘স্মোক ক্যানিস্টার্স’ উদ্ধার করেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। লোকসভার পরিবহণ ভবনের সামনে থেকে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের একজন মাঝবয়সী মহিলা। তারা হঠাৎ করেই সংসদ ভবন চত্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পুলিশ গিয়ে তাদের ধরে ফেলে।
লোকসভার ভেতরে যে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে তাদের একজনের নাম আনমল শিন্ডে। তার বাড়ি মহারাষ্ট্রে। অপরজনের নাম নীলম। এই যুবক হরিয়ানার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ভিজিটর্স পাস ছাড়া সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই। নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে বাইরের কারও পক্ষে সংসদ ভবন চত্বরে ঢোকাটাই কঠিন। সংসদ ভবন চত্বরে সাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। ‘স্মোক ক্যানিস্টার্স’ নিয়ে সংসদের নতুন ভবনের লোকসভা কক্ষে যে দুই যুবক ঢুকেছিল, তাদের ভিজিটর্স পাস ইস্যু হয়েছিল কর্নাটকের মাইশর-কোদাগু কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার দফতর থেকে। তারা জুতোর ভেতরে স্মোক ক্যানিস্টার্স লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢোকে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
ঘটনাটিকে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় গাফিলতি হিসেবেই দেখছেন সাংসদেরা। পর পর পাঁচটি নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে তবে সংসদ ভবনের ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়। প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া নজরদারি থাকে। অধিবেশন কক্ষে ঢোকার আগে ভিজিটর্সদের মোবাইল সহ যাবতীয় ডিভাইস জমা রাখতে হয়। কোনও ব্যাগ সঙ্গে নেওয়া যায় না। কার্যত খালি হাতে এবং খালি পকেটে ভেতরে ঢুকতে হয় দর্শনার্থীদের। স্মোক ক্যানিস্টার্স মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়ার কথা নয়। কিন্তু দেহ তল্লাশির সময় তা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায় কীভাবে? কেউ যে জুতোর ভেতরে করে কিছু আনতে পারে, এই ধারণাই কি ছিল না সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর আধিকারিকদের?
২০০১ সালের আজকের দিনেই সংসদভবন চত্বরে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট দুই জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা ও জইশ-ই-মহম্মদ-এর পাঁচ সদস্য। হামলায় নয় নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। পাঁচ জঙ্গিকেও নিকেশ করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। সংসদে জঙ্গি হামলার বার্ষিকীতেই লোকসভায় স্মোক ক্যানিস্টার্স নিয়ে যারা হামলা করল, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায় নি।