ডেস্ক রিপোর্ট: পাটনা থেকে যাত্রা শুরু করে বেঙ্গালুরু হয়ে মুম্বাইয়ে পৌঁছানোর আগেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে ফের টানাপোড়েন শুরু। জোট প্রক্রিয়ার শুরুয়াত থেকেই আপে-কংগ্রেসে মন কষাকষি। দিল্লি সরকারের আমলাদের রাশ কেন্দ্রের হাতে নেওয়ার বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে প্রথমে কংগ্রেসের গরজ ছিল না। এই নিয়ে কড়া ‘চেতাবনি’ দিয়ে পাটনার বৈঠক মাঝপথে কেজরিওয়াল ত্যাগ করতেই বেঙ্গালুরুর বৈঠকের আগেই সুর নরম করেন রাহুল গান্ধী। বিলটি যখন ভোটাভুটির জন্য লোকসভায় পেশ হয়, তখন বিপক্ষে ভোট দেন কংগ্রেসের সাংসদেরা। বিতর্ক চলাকালীন অভব্যতার অভিযোগে সদন থেকে ‘সাসপেন্ড’ পর্যন্ত হয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। কিন্তু মুম্বাইয়ের বৈঠকের আগেই ফের আপে-হাতে খটাখটি শুরু।
অলকার ঘোষণা, প্রিয়ঙ্কার হুঁশিয়ারি
লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল- কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা এই কথা ঘোষণা করতেই ফোঁস করে উঠেছে কেজরিওয়ালের দল। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আপের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা কক্কর যা বলেছেন, তার সারমর্ম- এমন করলে তো একসাথে খেলাই মুশকিল! প্রিয়ঙ্কা বলেন, “অলকার কথা মতোই যদি কংগ্রেস দিল্লির সব আসনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে বলতেই হয় যে, ‘ইন্ডিয়া’র আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা রইল না।” এখানেই না থেমে অলকার ঘোষণায় রুষ্ট আপ মুখপাত্র হুঁশিয়ারি দেন, “কংগ্রেস নিজের অবস্থান পরিবর্তন না করলে আমরা জোটের পরবর্তী বৈঠকে যোগ দেব কিনা, তা বিবেচনা করে দেখত হবে।”
চাপে পড়ে ঢোক গিলল কংগ্রেস
বুধবার দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল। বৈঠকে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনেই কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে নেওয়া প্রস্তাবের কথা সংবাদ মাধ্যমের কাছে চেপে রাখলে এত তাড়াতাড়ি কংগ্রেসের গুমোর ফাঁস হত না। কিন্তু বৈঠক থেকে বেরিয়েই দিল্লি কংগ্রেসের নেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক অলকা লাম্বা সাংবাদিকদের ডেকে বলে ফেলেন, “তিন ঘন্টার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা দিল্লির সাতটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। লোকসভা ভোটের আর মাত্র সাতমাস বাকি। এখন থেকেই দলের নেতাকর্মীদের সাতটি আসনে লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।”
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2023/08/Picsart_23-08-17_16-28-06-039-1024x576.png)
অলকা লাম্বার কথা মুখ থেকে পড়তে না পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ধেয়ে আসে আপ শিবির থেকে। আপ মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা ফের আরেকবার জোট ছাড়ার কড়া ‘চেতাবনি’ দিতেই পিছু হটে কংগ্রেস। তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র মুখপাত্র দীপক বাবারিয়া বলেন, “অলকা লাম্বা দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র নন। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস কোথায় কয়টি আসনে লড়বে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নি। এই সিদ্ধান্ত নেবে একমাত্র দলের হাইকমান্ড।”
আপ ও কংগ্রেসে আপোষ কঠিন
আপের হুমকির মুখে বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবের কথা কংগ্রেস ঢোক গিলে অস্বীকার করলেও এতে দুই দলের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়ল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। দিল্লির রাজনীতিতে আপের আকস্মিক উত্থানে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কংগ্রেসের। মোদী বিরোধী জোটের খাতিরে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে এক টেবিলে বসতে হলেও কংগ্রেসের এই জ্বালা সহজে উপশম হওয়ার নয়। আবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মনেও সন্দেহ, মুখে মিষ্টি কথা বলে তলে তলে দিল্লিতে নিজেদের হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে ব্যস্ত কংগ্রেস।
শরদের কথায়ও ধোঁয়াশা
দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে বৈঠকে রাহুল ও খড়্গে একক শক্তিতে সাত আসনে লড়ার একটা প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে যে বক্তব্য অলকা দিয়েছেন, তাতে জল নেই বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কেবল মুখ ফস্কে গোপন পরিকল্পনা বাইরে ফাঁস করে দিয়ে দলকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন অলকা। আপ ও কংগ্রেসের সম্পর্কে যখন এমন টানাপোড়েন, তখন মারাঠা ‘স্ট্রংম্যান’ শরদ পাওয়ারের মন্তব্য নিয়েও কম জলঘোলা হচ্ছে না। শরদের মনে ঠিক কী উথালপাথাল চলছে, এটাই ঠাহর করে উঠতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। তবে মুম্বাইয়ের বৈঠকে ঘর গোছানোর আগেই ‘ইন্ডিয়া’র দুর্বলতা প্রকট হয়ে যাওয়ায় মোদীর ‘মন কি বাত’ কী হতে পারে তা অনুমান করতে অসুবিধা হচ্ছে না কারোরই।
Feature image is representational.