'শিলান্যাস আমি করেছি, উদ্বোধন‌ও করব', লালকেল্লার প্রাকারে দাঁড়িয়ে ধ্রুপদী ভঙ্গিতে ফেরার ইঙ্গিত মোদীর - nagariknewz.com

‘শিলান্যাস আমি করেছি, উদ্বোধন‌ও করব’, লালকেল্লার প্রাকারে দাঁড়িয়ে ধ্রুপদী ভঙ্গিতে ফেরার ইঙ্গিত মোদীর


বিশেষ প্রতিবেদন: রাখঢাক না করে সোমবার মমতা বলেছিলেন, এই শেষবার লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তুলবেন মোদী। মঙ্গলবার ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লার প্রাকারে দাঁড়িয়ে মোদী বোধহয় মমতাকেই জবাব দিলেন এইভাবে- “যে সব প্রকল্পের শিলান্যাস করেছি আমি, তার উদ্বোধন‌ও আমার ভাগ্যেই লেখা আছে বলে মনে হচ্ছে।” লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সৌভাগ্য একমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রীর‌ই হয়। এই নিয়ে টানা দশবার ১৫ অগাস্ট লালকেল্লায় পতাকা তুললেন নরেন্দ্র মোদী। টানা এগারোবার মোদী সেই সুযোগ পাবেন কিনা, তা ঠিক করবে জনগণ চব্বিশের এপ্রিল-মে মাসে। তবে, সাউথ ব্লকে নিজের প্রত্যাবর্তন নিয়ে তাঁর যে আত্মবিশ্বাস আছে, লাললেকল্লার প্রাকার থেকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী।

এই নিয়ে ১৫ অগাস্ট সকালে লাললেকল্লায় টানা ১০ বার ভাষণ দিলেন মোদী। ছবি- সংগৃহীত

নরেন্দ্র মোদীর বাগ্মিতা নিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ শিবিরের যোদ্ধাদের‌ মনেও সন্দেহ নেই। আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন হোক আর লালকেল্লার র‌্যামপার্ট, ‘জবরদস্ত’ ভাষণের পাশাপাশি ‘লম্বি’ ভাষণেও ওস্তাদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এবারের স্বাধীনতা দিবসে‌ মোদীর ভাষণের দৈর্ঘ্য ১ ঘন্টা ২৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড। প্রধানমন্ত্রী শুরু করেন ৭টা বেজে ৩৪ মিনিটে, থামেন ৯টা বেজে ৩ মিনিটে। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী সবথেকে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন ২০১৬-র ১৫ অগাস্ট সকালে। ৯৬ মিনিট বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। লালকেল্লায় মোদীর সবথেকে ছোট্ট ভাষণ ২০১৭-য়। সেবারের ১৫ অগাস্ট মাত্র ৫৬ মিনিট ভাষণ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

ভারত জলদি তৃতীয় হবে

মঙ্গলবার সকালে লালকেল্লা থেকে দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ ভাষণে সরকারের সাফল্যের কথাই তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আগের জামানার সঙ্গে তাঁর এক দশকের জামানার পার্থক্য কোথায়, তা উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতবর্ষ পাল্টে গেছে এবং এই ভারতবর্ষ আগের ভারতবর্ষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী- দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় একাই ছিল মোদীর ভাষণের মূল সুর। মোদীর স্পষ্ট দাবি, “১০ বছর‌ আগে ভাজপা সরকার গঠন করার আগে দেশের অর্থনীতির হাল ভাল ছিল না। কিন্তু এই দশ বছর ধরে বর্তমান সরকারের চেষ্টায় দেশ আজ বিশ্ব দরবারে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে।” মোদীর বিশ্বাস, “খুব জলদি ভারত তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে।”

লালকেল্লায় জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি- সংগৃহীত

মোদীর দশ বছরের শাসনে দেশের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কোভিড অতিমারি। কোভিডের টিকাকরণে ভারত সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এ’দিন লালকেল্লায় তিনি বলেন, “করোনার সময় ভারত যে কাজ করেছে, তা সারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।‌ ২০০ কোটি টিকাকরণের কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছে বিশ্ববাসী।” অতিমারির আঘাত দ্রুত সামলে নিয়ে দেশের অর্থনীতি কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে।

তিন অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র এবং তোষণ- এই তিনকে দেশের অগ্রগতির পথে অপশক্তি বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।‌ লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “দেশের উন্নয়নের জন্য এই তিন অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে। দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কিছু দল আছে, যারা পরিবারের দ্বারা, পরিবারের জন্য এবং পরিবারের স্বার্থে চালিত।” তোষণের রাজনীতি ও পরিবারতন্ত্রের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সুর চড়ান মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে দেশ ভ্রষ্টাচারে ডুবে গিয়েছিল।‌ বহু বছরের দুর্নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল।”

লালকেল্লার প্রাকার থেকে নেমে জনতার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি- সংগৃহীত

তাঁর আমলে জনকল্যাণ খাতে সরকারের ব্যয় ও ভর্তুকি আগের আমলের চাইতে বহুগুণ বেড়েছে বলে ভাষণে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আগের সরকারের আমলে কেন্দ্র থেকে রাজ‌্যগুলিকে বছরে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা পাঠানো হত। এখন তা বেড়ে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। পুরসভাগুলির বরাদ্দ ৭০ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে।” নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, “এখন কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের হাতে সুলভে ইউরিয়া পৌঁছে দিতে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে।‌ মুদ্রা যোজনায় আত্মনির্ভর কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজের হাতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রায় ৮ কোটি মানুষ ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁরাও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন।”

নতুন বিশ্বকর্মা যোজনার ঘোষণা

লালকেল্লা থেকে কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প ‘বিশ্বকর্মা যোজনা’র কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বকর্মা পূজার দিন থেকে এই প্রকল্প চালু হবে। তিনি জানান, “এই যোজনার আওতায় স্বর্ণকার, ধোপা, নাপিত এবং কুম্ভকারের মতো বৃত্তিতে নিযুক্ত মানুষদের সাহায্য করতে ১৩-১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে।” মোদী দাবি করেন, “গত দশ বছরে সাড়ে তেরো কোটি নাগরিককে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে এনেছে সরকার।”

এই ভারত অপরাজেয়

লালকেল্লা থেকে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারতে ৩০ বছরের কমবয়সীদের সংখ্যা বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় অনেক বেশি। আর এই যুবসমাজ‌ই ভারতের শক্তি। যুব প্রজন্মের হাত ধরে যে নতুন ভারত উঠে আসছে, তাকে কেউ হারাতে পারবে না।” তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পরিকাঠামো, সড়ক থেকে রেল যোগাযোগ, বিদ্যুত থেকে জলশক্তি- এই এক দশকে দেশের প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

মণিপুরে শান্তি ফিরেছে

এই মুহূর্তে কেন্দ্রের মোদী সরকারের জন্য সবথেকে বেশি অস্বস্তির মণিপুরের হিংসা, নারী নির্যাতন ও রক্তাক্ত জাতিদাঙ্গা। লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে মণিপুর প্রসঙ্গ যে আসবেই, সে ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত ছিল রাজনৈতিক মহল। মোদী মণিপুর নিয়ে কী বলেন,‌ সেই দিকে লক্ষ্য ছিল সবার। মণিপুরের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মণিপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। মণিপুরের মহিলাদের উপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক দিনে সেখানে শান্তি ফিরেছে। দেশ মণিপুরের সঙ্গে আছে। কেন্দ্র ও রাজ্য- দুই সরকার মিলেই মণিপুরে শান্তি রক্ষা করবে।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *