ডেস্ক রিপোর্ট: ফের ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত গাড়োয়াল হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হিমাচল। উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতিও ভাল নয়। পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি মানেই ধস। ধস নেমে গত ২৪ ঘন্টায় হিমাচল প্রদেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী শিমলায় একটি শিবমন্দির ধসে পড়লে ন’জন পুণ্যার্থী মারা যান। আরও ২০-২২ জন ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে স্থানীয় প্রশাসনের আশঙ্কা।
সোমবার সকালে যখন শিমলার সামার হিলে শিবমন্দিরটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে, তখন সেখানে পূজাপাঠ চলছিল। গর্ভগৃহে সেবাইত পূজার কাজ সারছিলেন। বাইরে জনা পঞ্চাশেক পুণ্যার্থী বসেছিলেন। অঝোরে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই মন্দিরের একাংশ ধসে পড়ে। কংক্রিটের নিচে অনেকেই চাপা পড়ে যান। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে এসে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নটি দেহ বের করে আনে। কয়েকজন আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও ২০-২২জন চাপা পড়ে আছে বলে উদ্ধারকর্মীদের আশঙ্কা। তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ত্যাগ করেছে প্রশাসন।
রবিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে। হিমাচল প্রদেশের সোলান এলাকার জাডোন গ্রাম মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে। কয়েকটি বাড়ি ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেলে সেখানে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গোটা হিমাচল জুড়েই সমানে ধসের খবর আসছে। একাধিক পাহাড়ি গ্রাম মাটি চাপা পড়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও অনেক গ্রাম ধসে চাপা পড়তে পারে বলে হিমাচল সরকারের আশঙ্কা। ধস পড়ে ও বন্যায় ভেসে গিয়ে ৭৫২টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। খরস্রোতা পাহাড়ি নদীগুলি ফুঁসছে। গিলে খাচ্ছে দুই পাশের জনপদ।
এবারে বর্ষার শুরু থেকেই প্রকৃতি উত্তরাখণ্ড-হিমাচলের প্রতি বিরূপ। দফায় দফায় প্রবল বর্ষণ, বন্যা ও ধসে এই দুই হিমালয় রাজ্য বিপর্যস্ত। এখনও পর্যন্ত হিমাচলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বলি ২৫৭জন। ক্ষয়ক্ষতি ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। গাড়োয়াল হিমালয় জুড়ে আরও কয়েক দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে। এই পরিস্থিতিতে ধসপ্রবণ এলাকাগুলি থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দার সিং সুখু। পরিস্থিতি না শুধরানো পর্যন্ত পর্যটকদের রাজ্যে না আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
দেরাদুন, পাউরি, তেহরি, নৈনিতাল, চম্পাওয়াত এবং উদম সিং নগর- উত্তরাখণ্ডের এই ছয়টি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পিপলকোটি এলাকায় ধস পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে চামোলি থেকে বদ্রিনাথগামী জাতীয় সড়ক। দেরাদুনের মালদেবতা এলাকায় দেরাদুন ডিফেন্স কলেজের তিনতলা নান্দনিক ভবন তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়েছে। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে যাওয়াতেই ভবনটি ধসে পড়েছে। মন্দাকিনী, অলকানন্দার জল বিপদসীমার উপরে। ঋষিকেশের গঙ্গাও ফুঁসছে। চার ধাম যাত্রা স্থগিত করে দিয়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার
Feature image taken from video.