মূলস্রোতে ফিরছে উপত্যকা! স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে তেরঙ্গা, পথে পথে ঢল মানুষের - nagariknewz.com

মূলস্রোতে ফিরছে উপত্যকা! স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে তেরঙ্গা, পথে পথে ঢল মানুষের


বিশেষ প্রতিবেদন: দেশের স্বাধীনতা দিবসে তেরঙ্গা পতাকায় সেজে শেষ কবে শ্রীনগর এ’ভাবে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেছিল, শহরটির প্রবীণেরাও মনে করতে পারছেন না।‌ জম্মু-কাশ্মীরে ১৫ অগাস্ট, ২৬ জানুয়ারি মানেই ছিল বনধ, কারফিউ, কালো পতাকা, বিক্ষোভ নয়তো শুনশান রাস্তায় আর্মি ট্রাকের টহল। মঙ্গলবার ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে শ্রীনগর সহ জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার যে ছবি দেখল গোটা ভারত, তাতে পুলকিত সবাই। যারা গলার রগ ফুলিয়ে কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি, মণিপুর মাঙ্গে আজাদি বলে স্লোগান তোলে, সেই টুকরে টুকরে গ্যাঙের কথা অবশ্য আলাদা।‌ স্বাধীনতা দিবসের সকালে শ্রীনগরের রাস্তায় জাতীয় পতাকা হাতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নেমেছিল।‌ জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যত্র‌ও এক‌ই ছবি। স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে তেরঙ্গা, পথে পথে মানুষ।‌

স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে তেরঙ্গা, পথে পথে মানুষ।‌ উপরে জম্মু নীচে কাশ্মীরের দৃশ্য।

শ্রীনগরের বক্সি স্টেডিয়ামের সংস্কার শেষে পাঁচবছর পর সেখানে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানটি হয়েছে। স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জম্মু-কাশ্মীর ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। আগে ফাঁকা স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উঠতো। উপস্থিত থাকতেন কেবল পুলিশ, আধা সামরিক ও সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানেরা। এবার বক্সি স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ দেখতে উৎসবের মেজাজে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। বক্সি স্টেডিয়াম থেকে লালচক পর্যন্ত জাতীয় পতাকা হাতে মানুষের দীর্ঘ পদযাত্রা ছিল নজরকাড়া। মঙ্গলবার শ্রীনগরে কেউ বনধ ডাকে নি। ভারতের স্বাধীনতা দিবস বয়কটের‌ও ডাক দেয় নি কোনও সংগঠন। দিনভর দোকান-বাজার ছিল খোলা। ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক। সরকারি-বেসরকারি দফতরে তো বটেই এমনকি সাধারণ মানুষের বাড়ির ছাদেও উড়তে দেখা গেছে অশোকচক্র খোচিত তেরঙ্গা পতাকা।

এ’বারের স্বাধীনতা দিবসে দেশে সব থেকে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গেল কাশ্মীরেই। উপত্যকার পাহাড়ি পথে মানুষের ঢল।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ভূস্বর্গে এখন পর্যটকদের আনাগোনাও সন্তোষজনক। হোটেলগুলিতে জায়গা নেই। ডাল লেকের শিকারা মাঝিদের মুখে হাসি। শিকারাগুলির মাথার উপর পতপত করে উড়ছে তেরঙ্গা নিশান। বাজারে বেচাকেনার ধূম।মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এন কোটেশ্বর সিংহ‌ও। স্বাধীনতা দিবসের সকালে শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় জাতীয় পতাকা হাতে মানুষের ঢল দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেন নি প্রধান বিচারপতিও। তিনি বলেন, “পদযাত্রায় বিপুল সংখ্যায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, কাশ্মীর উপত্যকা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে।”

ছিল না কারফিউ। ছিল না বনধ। স্বাধীনতা দিবসে উপত্যকার সর্বত্র ছিল উৎসবের মেজাজ।‌

২০১৯-এর অগাস্টে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেয় কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় সে’সময়। চার বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। লাদাখ পৃথক প্রশাসনিক ক্ষেত্র। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হ্রাস উপত্যকার পরিস্থিতি আর‌ও খারাপ করে তুলবে বলে তখন সরব হয়েছিল‌ বিরোধীরা। কিন্তু তেইশের ১৫ অগাস্টের চিত্র বলছে, কাশ্মীর উপত্যকা দেশের মূলস্রোতে মিশতে উদগ্রীব।

ভয় ও সন্ত্রাস মুক্ত শ্রীনগরের ডাল লেকে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা‌ হাতে রোয়িং।

একদিন আগে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে আজাদ কাশ্মীরে উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটাও ছিল না। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণের নাগালের বাইরে। ক্ষুধার জ্বালায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ এখন ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে চান। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ ঠেকে বুঝেছেন ভারতের সঙ্গে জুড়ে থাকলেই তাদের মঙ্গল। কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া অনুশাসন‌ও যে বেশ কাজে এসেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Images including feature are collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *