আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির আপাতত কোনও সম্ভাবনাই নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় সদ্য সমাপ্ত ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে মোদী-জিনপিংয়ের মোলাকাত দেখে দু’দেশে সম্পর্কের বরফ গলবে বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তাতে সোমবার জল ঢেলে দিল বেজিং। সে’দিন শি জিনপিংয়ের সরকার ২০২৩ সালের জন্য চিনের যে ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’ সামনে এনেছে, তাতে পূর্ব লাদাখের পাশাপাশি গোটা অরুণাচল প্রদেশ চিনের অংশ বলে দেখানো হয়েছে। তাইওয়ানের অস্তিত্বই স্বীকার করে না চিন। চিনের নতুন মানচিত্রে তাইওয়ানের অন্তর্ভূক্তিতে তাই বিস্ময়ের কিছু নেই।
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2023/08/20230829_142528.jpg)
দক্ষিণ চিন সাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও তাইওয়ানের মধ্যে জটিল বিবাদও বহু পুরোনো। দক্ষিণ চিন সাগর পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলির একটি। বছরে বিশ্ব বাণিজ্যের ২১ শতাংশ এই জলপথ দিয়ে হয়ে থাকে বলে ‘ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এই নৌপথের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েমের ব্যাপারে চিন বরাবরই অনড়। এই অঞ্চলে চিনের প্রভুত্ব আমেরিকা ও জাপানের স্বার্থ বিরোধী। তাই দক্ষিণ চিন সাগর ঘিরে বেজিংয়ের দাবিকে মানে না আমেরিকা-জাপান। দক্ষিণ চিন সাগরে সারা বছরই টহলদারি চালায় মার্কিন নৌবাহিনী। দেখা যাচ্ছে ভারত সহ বাকি প্রতিবেশীদের সঙ্গে স্থল হোক কি জল, সীমান্ত বিরোধ মেটাতে মোটেই আগ্রহী নয় চিন বরং নিজের পুরোনো দাবিতেই অনড় তারা।
ভারতের ‘অরুণাচল’ চিনের ‘জাংনান’
১৯৬২-র যুদ্ধে লাদাখের যে অংশ পিএলএ দখল করেছে, চিন তার নাম দিয়েছে আকসাই চিন। যদিও লাদাখের উপর চিনের দাবি কোনও দিনই মেনে নেয় নি ভারত। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা লাদাখে সীমান্তের আরও একাধিক জায়গার উপর মালিকানা ফলাতে মরীয়া চিনা সরকার। ১৯৬২ থেকেই অরুণাচল প্রদেশকেও ভারতের অংশ বলে মানতে নারাজ কমিউনিস্ট চিন। প্রায় গোটা অরুণাচলকেই নিজের অংশ বলে মনে করে চিনারা। চিনের সরকারি মানচিত্রে অরুণাচলকে ‘জাংনান’ বা দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দেখানো হয়ে থাকে। এই বছর এপ্রিলে অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম পাল্টে দিয়েছে শি জিনপিংয়ের সরকার। এই ঘটনায় ভারতের তরফ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছিল।
চিনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’এর এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে সোমবার চিনের ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’-এর কথা পোস্ট হতেই ক্ষুব্ধ ভারতের কূটনৈতিক মহল। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। লাদাখের উপরেও চিনের দাবি মানে না দিল্লি। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ভারতের আপত্তি না থাকলেও অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে সঙ্গত কারণেই স্পর্শকাতর দেশের মানুষ। অরুণাচল প্রদেশকে সুরক্ষিত রাখতে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুর্গম রাজ্যটিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিতেও জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জি-২০ সম্মেলনে অতিথি শি, প্রশ্ন কংগ্রেসের
২০২০-এর ১৫ জুন গালওয়ান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এরপর থেকে যখনই দুই তরফে উত্তেজনা হ্রাসের সামান্য ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে, তার কিছুদিনের মধ্যেই চিনের কোনও পদক্ষেপের জবাবে ভারতকেও কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। জোহানেসবার্গে মোদী-শি সাক্ষাতের পরপরই চিনের তরফে ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’ প্রকাশ তেমনই একটি উষ্কানীমূলক ঘটনা বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
দু’দিন বাদেই নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন। সম্মেলনে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও আমন্ত্রিত। তার ঠিক আগেই অরুণাচল ও লাদাখকে অন্তর্ভূক্ত করে চিনের মানচিত্র প্রকাশ মোদী সরকারের জন্য যথেষ্টই বিড়ম্বনার। এই পরিস্থিতিতে জিনপিংকে ডেকে এনে আতিথ্য দেওয়ার বিষয়টি দেশের জন্য কতটা আত্মসম্মানের, তা বিবেচনা করে দেখতে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি। ভারতের ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার ভূখন্ড শি জিনপিং অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ মনীশের।
Feature image is representational.