দত্ত পুকুর বিস্ফোরণকান্ডে শুভেন্দুর নিশানায় আইসি ও রাজ্যের মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরও পদত্যাগ চাইলেন বিরোধী নেতা - nagariknewz.com

দত্ত পুকুর বিস্ফোরণকান্ডে শুভেন্দুর নিশানায় আইসি ও রাজ্যের মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরও পদত্যাগ চাইলেন বিরোধী নেতা


কলকাতা: দত্তপুকুরের বেআইনি বাজি কারখানায় শুধু বাজি নয় বোমাও তৈরি হত বলে সোমবার বিধানসভায় অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর ২০২১-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে যে বোমা হামলা হয়েছিল, তার মশলা এবং স্প্লিন্টার দত্তপুকুরের এই বেআইনি বাজি কারখানা থেকেই সরবরাহ করা হয়েছিল বলে মারাত্মক অভিযোগ শুভেন্দুর। দত্তপুকুর বিস্ফোরণের উপর জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী অধিবেশনে হাজির না থাকায় এদিন প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভার কক্ষত্যাগ করেন বিজেপির বিধায়কেরা।

পরে বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় এসে এই ঘটনার উপর কী কী ব্যবস্থা তিনি নিয়েছেন, সেই অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট সভার মাধ্যমে জনগণকে জানাবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম এই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভোটসর্বস্ব রাজনীতির বাইরে বেরোতে পারেন নি। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি হয়তো আসবেন উৎসবে যোগ দিতে। ফুল নিতে, মালা নিতে। আমরা তাঁর এই নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” এগরা থেকে দত্তপুকুর- গত ছয়মাসে রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানায় একের পর এক বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, মৃতেরা সকলেই প্রান্তিক, গরীব ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিন্তু এই সরকার তাদের মৃত্যুকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।

দত্তপুকুর বিস্ফোরণ নিয়ে বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী। ছবি- নিজস্ব

কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে দত্তপুকুর। কিন্তু তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলেন না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ থেকে এসেই রাজ্যপাল দত্তপুকুরে যেতে পারেন আর মুখ্যমন্ত্রী পারেন না?” দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১১জন মারা গেছে। এতগুলি মানুষের মৃত্যুর দায় মমতার ঘাড়েই ঠেলে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। এগরার বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর সরকার কড়া পদক্ষেপ করলে এরপর রাজ্যে এই ধরণের ঘটনা আর ঘটতো না বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “এগরায় বিস্ফোরণের ১১দিন পর হেলিকপ্টারে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তখন বলেছিলেন, এখানে বাজির কারখানা আছে, আমি জানতাম না।” এগরার ঘটনার পর বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও রাজ্যে কীভাবে একের পর এক বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকে, এই প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।

রবিবার সকালে উত্তর চব্বিশ পরগনার দত্তপুকুরের ঘটনা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “কংক্রিটের পাকা বাড়ির ছাদ তুলে ফেলে দিয়েছে। এতে আরডিএক্স ব্যবহার করা হয়েছে।” ইতিমধ্যেই দত্তপুকুর বিস্ফোরণকান্ডে এন‌আইএ-সিবিআই তদন্ত দাবি করে হাইকোর্টে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি। বিধানসভায় সাংবাদিকদের সামনেও এক‌ই দাবি তোলেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আজকের মধ্যেই দত্তপুকুর বিস্ফোরণকান্ডের তদন্তভার এন‌আইএ’র হাতে তুলে দিক রাজ্য সরকার। ঘটনাস্থল থেকে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হ‌ওয়ার আগেই এন‌আইএ’র হাতে তদন্ত তুলে দিতে হবে।”

ভিডিও : বিধানসভায় শুভেন্দুর সাংবাদিক সম্মেলনের অংশ বিশেষ।

দত্ত পুকুর বিস্ফোরণে বেআইনি বাজি কারখানার মালিক কেরামত আলি ও তার ২২ বছরের ছেলে রবিউল আলির‌ও মৃত্যু ঘটেছে। দু’জনেই এলাকায় তৃণমূল করত বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু। দত্তপুকুর বিস্ফোরণকান্ডে এখনও পর্যন্ত শফিক আলি নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মৃত কেরামতের সঙ্গে শফিকের‌ও পার্টনারশিপে ওই বেআইনি বাজি কারখানার মালিকানা ছিল। ধৃত শফিক আলিও সরাসরি তৃণমূল করে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানার কথা পুলিশ ও তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক জানতেন বলে সোমবার বিধানসভায় বিস্ফোরক অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানা চালাতে দেওয়ার বিনিময়ে এলাকার প্রত্যেক দোকান পিছু মাসে ৫০ হাজার টাকা করে তোলা তুলেন স্থানীয় থানার আইসি ও রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক রথীন ঘোষ।” বেআইনি বাজির পাশাপাশি এখান থেকে তৃণমূলের জন্য বোমা ও বোমার মশলা সাপ্লাই হত বলে‌ অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা।

Feature graphic is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *