সোনিয়া-রাহুল-সীতারাম-মমতা এক ফ্রেমে! ছবি তো না ছুরি অধীর-সেলিমের বুকে - nagariknewz.com

সোনিয়া-রাহুল-সীতারাম-মমতা এক ফ্রেমে! ছবি তো না ছুরি অধীর-সেলিমের বুকে


সোনিয়া-রাহুল-সীতারামের সঙ্গে এক ফ্রেমে মমতার ছবি বিজেপিকে সেটিংয়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। আর‌ও যা লিখলেন নির্বাণ রায়-

ভারী বিপদে অধীর-সেলিম! ‘বাংলায় কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি’- এই কটাক্ষ এতদিন বঙ্গ বিজেপিকে বিঁধতে মঞ্চে অহরহ ব্যবহার করেছে বাম-কংগ্রেস। কিন্তু কপালের কী ফের! এখন এক‌ই শ্লেষ অধীর-সেলিমকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন শুভেন্দু-সুকান্ত। বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দলকে নিয়ে গঠিত নতুন জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেস। জোটের মধ্যমণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে সোনিয়া ও রাহুলের পাশেই তাঁর স্থান। এক‌ই সারিতে সীতারাম ইয়েচুরিও উপবিষ্ট। একে ছবি না বলে বাঁশ বলাই ভাল; মানে অধীর-সেলিমদের জন্য। ছবি এডিট করে ছাপতে গণশক্তি জেরবার। কিন্তু এইসব ছেলেমানুষি করে কি আর এই বাজারে মুখ লুকোনো যায়। সামাজিক মাধ্যম সহাস্য ইয়েচুরি-মমতা-সোনিয়া-রাহুলের ছবিতে ছয়লাপ। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে বাংলার বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ফোঁপানি-গোঙানি-বিলাপ, ”এ কি হোলো, কেন হোলো/ কবে হোলো জানি না/ শুরু হোলো, শেষ হোলো/ কী যে হোলো জানি না তো/ হুঁ..এ কি হোলো…।”

বাংলায় সদ্য পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে। বলা ভাল, মিটেও মিটে নি। কোর্ট-কাছারি চলছে। বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের পিঠে তৃণমূলের মারের দাগ এখনও শুকোয় নি। ফল বেরোনোর পর, শরীরে ব্যথা নিয়েও হাওয়া ঘুরছে ভেবে মুখে একটু একটু হাসি সবে যখন এসেছে সিপিএম-কংগ্রেসের ফুট সোলজারদের মুখে, তখনই বেঙ্গালুরুতে কী অশৈলী কাণ্ড! দেশ থেকে মোদিকে তাড়াতে সোনিয়া-রাহুলের প্রধান ভরসা মমতা। নতুন জোটের অদ্ভুত নামকরণেও নাকি আছে মমতার অনুপ্রেরণা। বেঙ্গালুরুর মহোৎসবে সোনিয়া-রাহুল-খাড়্গে মমতাকে নিয়ে গদগদ। টগবগ করে ফুটছেন মমতা। তাই দেখে হাসছেন সীতারাম। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখার পর বাংলার বাম-কংগ্রেসের কর্মীরা ভগন্দরের জ্বালায় জ্বলছেন। তাদের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে চলেছেন বিজেপির লোকেরা।

অধীরের সামনে তিন রাস্তা

বেঙ্গালুরুতে সোনিয়া-রাহুলের সভা মমতা-অভিষেক আলো করার পর থেকেই অধীর চৌধুরী বাকরুদ্ধ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কষ্টটা সবাই বোঝে। মমতার প্রশ্নে অধীরের রাজনৈতিক অবস্থান সমস্ত রকম সংশয়ের ঊর্ধ্বে। অধীরের প্রশ্নে মমতার‌ও। বিরোধী জোটের বৈঠকে আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ফর্মূলা দিয়েছেন, সোনিয়া-রাহুল তা মেনে নিলে অধীর চৌধুরীর সামনে তিনটা রাস্তা খোলা থাকে। এক, নীরবে অপমান মেনে নিয়ে চুপচাপ দলে থাকা। দুই, রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে আপাতত বানপ্রস্থে গমন। তিন, কংগ্রেস ত্যাগ করে অন্যত্র ভাগ্যান্বেষণ অথবা নিজের অনুগামীদের নিয়ে পৃথক দল গঠন।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মমতার কট্টর বিরোধী অধীর চৌধুরীর আয়ু আর কতদিন? ছবি- সংগৃহীত

অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিকভাবে শেষ করতে পারলে বাংলায় সবথেকে বেশি খুশি কে হবেন, এই প্রশ্নে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে দ্বিমত নেই। ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ গঠনের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অধীর চৌধুরীর আয়ু কদ্দিন, এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গেছে। অধীরের মতো কট্টর মমতা বিরোধীকে সরিয়ে মমতার সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া আছে, এমন কোনও কংগ্রেস নেতাকে প্রদেশ সভাপতি করার সম্ভাবনা জোরদার। সোনিয়া-রাহুল যে জোটে তৃণমূলকে পেতে মরীয়া, তা পাটনার পর বেঙ্গালুরুতে আরও স্পষ্ট করে প্রমাণিত।‌ মমতা বাংলায় কংগ্রেসকে দুই-তিনটির বেশি আসন ছাড়তে আগ্রহী নন বলে তৃণমূল সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মমতার শর্তে আসন সমঝোতা মসৃণ করতে অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি থেকে অপসারণ জরুরী।

কিন্তু লালের কী হ‌ইবে?

কংগ্রেস জাতীয় পার্টি। টানা দশ বছর দলটি কেন্দ্রে ক্ষমতার বাইরে। চব্বিশে যে কোনও মূল্যে দিল্লি দখলে কংগ্রেস মরীয়া। দিল্লির মসনদ পেতে বাংলার স্বার্থ যমুনায় জলাঞ্জলি দিতে রাহুল গান্ধীর আটকাবে না। কিন্তু সিপিএমের কী হ‌ইবে? ‘ফেরাতে হাল,‌ ফিরুক লাল’- কিন্তু সে তো কেবল বাংলায়।‌ জোটসঙ্গী কংগ্রেস তৃণমূলের হাত ধরার পর বাংলার গ্রামেগঞ্জে লাল পতাকা তোলার লোক পাওয়া যাবে তো? তৃণমূলের কাছ থেকে প্রসাদ হিসেবে দু-তিনটি আসন পাওয়ার পর প্রদেশ কংগ্রেস যখন বামেদের ত্যাগ করবে তখন কী করবে অনাথ আলিমুদ্দিন? বামেরা রাজ্যে নতুন বন্ধু আইএস‌এফ-কে সঙ্গে নিয়ে পৃথক লড়বে নাকি দুটো আসন পেতে মমতার পায়ে গিয়ে পড়বে? এইসব প্রশ্ন সিপিএম-এর সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ভাবাচ্ছে। নেতৃত্বের কাছে উত্তর চাইছেন তারা। কিন্তু উত্তর নেই অপ্রস্তুত সেলিম-সুজনদের কাছে। উল্টে ভুলভাল বুঝ দিতে গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ আর‌ও বাড়িয়ে দিচ্ছেন নেতারা।

বেঙ্গালুরু থেকে লাড্ডু এল বঙ্গে বিজেপির জন্যে

এ দিকে বহুদিন পর সেটিং ইস্যুতে স্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি। স্বচ্ছতার প্রশ্নে চরম বিতর্কিত পঞ্চায়েত ভোটে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখে বিজেপি নেতাদের মনোবল এমনিতেই চাঙ্গা। বামেদের ভোট খানিকটা বেড়েছে, সেই সুবাদে লোকসভা নির্বাচনে মমতা বিরোধী ভোটের বিভাজন নিয়ে মিডিয়ায় চর্চা শুরু হতেই শুভেন্দু অধিকারীদের হাতে যেন লাড্ডু তুলে দিল বেঙ্গালুরু। এখন সেলিমের জবান শুভেন্দুর মুখে- ‘বাংলায় কুস্তি দিল্লিতে দোস্তি চলবে না।’ নির্বাচনটা লোকসভার হলেও পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি কী হবে, তা এখন থেকেই পরিস্কার। যাঁরা ছাব্বিশে বাংলায় তৃণমূল সরকারের অবসান চান, তাঁরা চব্বিশেই তার মহড়া দেবেন। শুভেন্দু অধিকারী- সুকান্ত মজুমদারেরা চাইছেন‌ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের সুরটা সে’ভাবেই বেঁধে দিতে। এই জন্যই ‘নো ভোট টু মমতা’ মন্ত্রের মতো রিপিট করে চলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সোনিয়া-রাহুল-সীতারামের সঙ্গে এক ফ্রেমে মমতার ছবি বিজেপিকে সেটিংয়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। আড়ালে হয়তো সোনিয়া-রাহুল-সীতারামকে ধন্যবাদ‌ই দিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *