'জেআর‌এম' রিপোর্টে অভিযোগ: ১৬ কোটি ভুয়ো মিড ডে মিল থেকে ১০০ কোটি সরিয়েছে রাজ্য! - nagariknewz.com

‘জেআর‌এম’ রিপোর্টে অভিযোগ: ১৬ কোটি ভুয়ো মিড ডে মিল থেকে ১০০ কোটি সরিয়েছে রাজ্য!


শেষে বাচ্চাদের খাবার‌ও চুরি! মিড ডে মিলের টাকা সরিয়ে খয়রাতি!

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজ্যে যেন দুর্নীতিটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। নীতিটা ব্যতিক্রম। তাই এক নিয়োগ দুর্নীতিতে রক্ষে নেই। দোসর একশ দিনের কাজ থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল প্রকল্প ‘আম্রুত’ নিয়েও এক‌ই অভিযোগ এমনকি বাচ্চাদের মিড ডে মিলেও ঘাপলা করতে ছাড়ে নি। মিড ডে মিলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ‌ও বাংলায় নয়ছয় হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল- মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল, ২০২৩) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন‌টাই দাবি করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। মাত্র ছয় মাসের মিড ডে মিলের হিসেবেই ১০০ কোটি টাকা গরমিল ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের চোখে!

১০ দিনের মিশনে ১০০ কোটির পর্দাফাঁস!

দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। অনেক আগেই তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সত্যাসত্য যাচাইয়ে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের একটি অনুসন্ধানী দল পাঠায় দিল্লি। ফিরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্ট‌‌ও পেশ করেছে দলটি। মিডিয়ায় রিপোর্ট নিয়ে যা দাবি করা হয়েছে, তা রীতিমতো বিস্ফোরক। প্রধানমন্ত্রী (পিএম) পোষণ প্রকল্পের অধীনে ক্লাস ফোর থেকে এইট- দেশের বারো কোটির বেশি পড়ুয়াকে দুপুরের খাবার প্রদান করা হয়। প্রকল্পের ৬০ শতাংশ ব্যয় করে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকিটা রাজ্যগুলি। খাদ্য দ্রব্যের পুরো খরচটাই বহন করে কেন্দ্র। পিএম পোষণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি ‘জয়েন্ট রিভিউ মিশন’ গঠন করে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক অনুরাধা দত্তের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় দলটি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে মিড ডে মিলের হিসেব পরীক্ষা করে। অধ্যাপক অনুরাধা দত্ত জিবি পন্থ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান।

বাচ্চাদের খাওয়ার মাপেও চুরি!

জয়েন্ট রিভিউ মিশনের পেশ করা রিপোর্ট বলছে, রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেবের ১৬ কোটি মিড ডে মিল‌ই ভুয়ো। ১৬ কোটি ভুয়ো হিসেব দেখিয়ে ১০০ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ। জেআর‌এম-এর আরও একটি অভিযোগ-
পড়ুয়াদের যে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে, তা নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম। বাইশের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর- মাত্র ছয়মাসে ১০০ কোটির গরমিল ধরা পড়েছে। মিড ডে মিলের ভুয়ো হিসেব দেখিয়ে এই টাকা অন্যত্র সরানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে দুপুরের খাবারের টাকা স্থানীয় পর্যায়ে আত্মসাতের পাশাপাশি অন্য খাতে খরচ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বিরোধীদের তরফে। বগটুই গণহত্যা কান্ডে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্য সরকার মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি।

নবান্নের নির্দেশেই মিড ডে মিলে চুরি?

বিরোধীদের অভিযোগের সত্যতা জেআর‌এম-এর পেশ করা রিপোর্ট পাওয়া গেছে বলে সূত্রের খবর। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রথম ছয়মাসে ১৪০ কোটি ২৫ লক্ষ মিড মিলের হিসেব দেখায় রাজ্য সরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যখন স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া হিসেব খতিয়ে দেখতে শুরু করে, তখন দুই হিসেবের মধ্যে গরমিল তাদের নজর এড়িয়ে যায় নি। স্থানীয় পর্যায় থেকে পাঠানো যাবতীয় হিসেব মিলিয়ে দেখা যায় মিড ডে মিলের সংখ্যা ১২৪ কোটি ২২ লক্ষ। দুই হিসেবে ১৬ কোটি ৩ লক্ষের ফারাক!

শুভেন্দু অধিকারীর টুইট।

১৬ কোটি ভুয়ো মিড ডে মিলের টাকা কোথায় গেল? এই টাকা দিয়েই কি অন্য কাজ সেরেছে নবান্ন? জয়েন্ট রিভিউ মিশনের প্রতিবেদনের কথা জানাজানি হতেই বিরোধীরা সরব। টুইট করে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু লিখেছেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম বাচ্চাদের খাবারের টাকা চুরি করতেও এরা দ্বিধা করে না।” তৃণমূল যদিও দোষ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলা বিরোধী মনোভাবকেই। ‘জয়েন্ট রিভিউ মিশনে’ রাজ্যের কোন‌ও প্রতিনিধিকে রাখা হয় নি বলে শাসকদলের অভিযোগ। জেআর‌এম-এর রিপোর্টে রাজ্যের তরফে কার‌ও স্বাক্ষর নেই বলে জানা গেছে। যদিও একটি মহলের দাবি, হিসেবে গরমিল ধরা পড়বে অনুমান করেই কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতার রাস্তায় হাঁটে নি রাজ্য সরকার। জয়েন্ট রিভিউ মিশনের প্রতিবেদনে রাজ্যের প্রতিনিধির স্বাক্ষর নেওয়া হয় নি বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রিপোর্টের বিষয়বস্তু জেনে যাওয়ার রাজ‌্যর তরফে কেউ তাতে স‌ই দেন নি বলে বিরোধীদের কটাক্ষ।

Feature Image is Representatinal.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *