মানিক ইস টেকিং মানি যা-তা ভাবে! মানিক, এখন সময় তোমার সঙ্গে খেলবে যা-তা ভাবে - nagariknewz.com

মানিক ইস টেকিং মানি যা-তা ভাবে! মানিক, এখন সময় তোমার সঙ্গে খেলবে যা-তা ভাবে


প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সবার আগে যাকে গারদে ভরা উচিত ছিল তার নাম মানিক ভট্টাচার্য। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিতদের অধিকাংশ‌ই এমনটা মনে করেন। অনেক জলঘোলা করার পর সেই মানিক অবশেষে গ্রেফতার। মানিকের ওপর চাকরি বঞ্চিতদের ক্ষোভ এতটাই যে মঙ্গলবার দুপুরে যখন মানিককে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হচ্ছিল, তখন আদালতে চত্বরে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বাগে রাখতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। জুতো উঁচিয়ে মানিক ভট্টাচার্যকে লক্ষ্য করে ‘চোর চোর’ বলছিল সবাই। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশ‌ই নিয়োগ বঞ্চিত বেকার যুবক-যুবতী। পার্থ-অর্পিতা বা নিয়োগ ঘোটালায় জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত অন্যদের আদালতে তোলার সময়‌ও পরিস্থিতি এতটা উত্তপ্ত হয় নি।

রাজ্য তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেও মানিককে নিয়ে নানা কানাঘুষো শোনা যায়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পরেই রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির চেয়ারে মানিকের অভিষেক। এক যুগ ধরে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন মানিক। কোন মন্ত্রবলে এত দীর্ঘ সময় এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছিলেন মানিক? গত ২০ জুন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মানিককে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করতে বাধ্য হয় শিক্ষা দফতর। তার আগে পর্যন্ত পর্ষদের দফতরকেই নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। মানিককে হাড়ে হাড়ে চেনেন তাঁর দলের অনেকেই। দল ও সরকারে খুঁটির জোর‌ না থাকলে যে, কার‌ও পক্ষে এক পদে এক যুগ কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তা একটা দুধের শিশুও জানে। আর মানিকের সতীর্থরা জানবে না কেন।

প্রাথমিকের যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এত ঝামেলা এবং আদালতে মামলার পর মামলা, তার সবটাই মানিক ভট্টাচার্য পর্ষদের সভাপতি থাকার সময়। কাজেই খুব সাদা চোখেই এটা পরিস্কার, নিয়োগ ঘোটালার দায় কোনও না কোনও ভাবে মানিকের ওপরই বর্তায়‌। আর অন্দর কি বাত যাদের নখদর্পণে তারা ভালোই জানে, মানিক কী চিজ! গ্রেফতার হ‌ওয়ার আগে পর্যন্ত‌ মানিক অনেক ‌ধানাইপানাই করেছেন। মায় মিডিয়ার সামনে চিল্লাফাল্লা পর্যন্ত। সাধু সাজার অনেক চেষ্টা করেছেন মানুষটা। কিন্তু তাঁর এইসব নাটক দেখে হাসাহাসি করেছে ভুক্তভোগীরা। এমনকি কষে গালি দিতেও ছাড়ে নি। নিয়োগ বঞ্চিতদের অনেকের‌ই দাবি, নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা জেনেছেন, পদচ্যুত পর্ষদ সভাপতিই ছিলেন দুর্নীতি চক্রের নাটের গুরু।

আদালতের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর প্রাথমিকের ক্ষেত্রে সিবিআই যাকে সবথেকে বেশি বার জেরা করেছে তিনি মানিক ছাড়া আর কেউ নয়। রহস্যের জট কাটাতে বারেবারে মানিককে জেরা করাটাই স্বাভাবিক। কারণ ঘটনার গোটা পর্বে মানিক‌ই ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। মানিক নিজেও জানতেন, তদন্তের জাল যত বিস্তৃত হবে তত‌ই তিনি ফাঁসবেন। তাই তদন্তে সহযোগিতার নামে সিবিআই-ইডিকে বোকা বানানোর চেষ্টা থেকে শুরু করে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে ডিভিশন বেঞ্চ এমনকি সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত মামলা ঠুকেছিলেন। 

সোমবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সকালে যখন ইডি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করল, তখন তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে মানিকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণের অভাব নেই। মঙ্গলবার দুপুরে মানিককে  ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলার সময় তার কয়েকটি বিচারকের সামনেও পেশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মানিক যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সর্বোচ্চ পদে বসে চাকরি বেচে দু’হাতে টাকা কামাচ্ছে, এই খবর তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ছিল। টাকা খাওয়াখায়ি নিয়ে দু’জনের মধ্যে নিয়মিত এস‌এম‌এস চালাচালিও হতো। ইডির হাতে সেইসব প্রমাণ চলে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। পার্থর কাছে জনৈক ব্যক্তির পাঠানো একটি মেসেজের ভাষা বেশ মজার। মেসেজে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হচ্ছে-“দাদা, মানিক ইজ টেকিং মানি যা-তা ভাবে।”

দুর্নীতি করতে করতে মানিকের গায়ের চামড়া বোধ হয় বহু আগেই হয়ে গিয়েছিল গন্ডারের মতো পুরু। ন‌ইলে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারে বালুরঘাটে গিয়ে স্বশাসিত একটি পর্ষদের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হয়ে একটা মানুষ কীভাবে বলতে পারে- “প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি হবে কেবল তৃণমূল কর্মীদের ছেলেমেয়েদের‌ই। এই কথা বলার জন্য যদি জেলে যেতে হয় তো যাবো!” এটাকেই বলে ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে সরা জ্ঞান করা। পাপের কলস পূর্ণ হ‌ওয়া মাত্র‌ই যে উল্টে পড়ে, পাপীরা তা বারেবারে ভুলে যায়। মানিকের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে আদালতে ইডির আইনজীবী দাবি করেছেন, “ধৃতের ছেলের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গেছে।”

“দাদা, মানিক ইজ টেকিং মানি যা-তা ভাবে।” মানিক, তোমার যা-তা ভাবে কামানো মানিতে বেকারের ঘাম-রক্ত-কান্না আর বিধবা মায়ের  অভিশাপ লেগে আছে। এবার সময় তোমার সঙ্গে যা তা খেলা খেলবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *