নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্তের কামাল! এখন সমুদ্রের গভীর থেকেও মিসাইল আক্রমণে কামিয়াব ভারত - nagariknewz.com

নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্তের কামাল! এখন সমুদ্রের গভীর থেকেও মিসাইল আক্রমণে কামিয়াব ভারত


এই সাফল্য ভারতীয় নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করল। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা নৌবহরের মোকাবিলায় ভারতের এটা একটা বড় পদক্ষেপ।

ডেস্ক রিপোর্ট : এখন‌ জলভাগ থেকেও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যোগ্যতা অর্জন করল ভারত। স্থল এবং অন্তরীক্ষের পাশাপাশি সমুদ্র থেকে‌ও শত্রুর ভূখন্ডে আণবিক অস্ত্র তাক করার ক্ষমতা একটি‌ শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরী। আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং চিনের পর এই ক্ষমতা অর্জন করল ভারত‌ও। শুক্রবার ( ১৪ অক্টোবর,২০২২) বঙ্গোপসাগরে পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন থেকে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষায় সফল হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বলা বাহুল্য, আকাশ, স্থল এবং জল থেকে পরমাণু অস্ত্র প্রহারে সক্ষম দেশকে সমঝে চলে সবাই।

সমুদ্রের জল ফুঁড়ে বেরোচ্ছে মিসাইল। ভারত এখন সাবমেরিন থেকে মিসাইল আক্রমণে সক্ষম।

ভারতের উপকূলভাগ ৭,৫১৭ কিলোমিটার ‌দীর্ঘ এবং ভারত দুটি সাগর এবং একটি মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এহেন সমুদ্র বেষ্টিত ভারতের‌ নৌ প্রতিরক্ষা যতটা শক্তিশালী হ‌ওয়া দরকার, ততটা নয়।‌এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে গত বিশ-বাইশ বছর ধরেই একের পর এক বড় পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে নৌ বাহিনী। এদিকে মোদী সরকারের প্রতিরক্ষা নীতির অন্যতম লক্ষ্য- যত ‌দ্রুত সম্ভব ভারতের নৌ প্রতিরক্ষাকে চিনের সমকক্ষ করে তোলা। সেই দিক থেকে দেখলে শুক্রবারের সাফল্য দেশের প্রতিরক্ষার ইতিহাসে একটা মাইল ফলক। যে পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ বা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন থেকে কে-ফোর ও কে-ফিফটিন নামের মিসাইল দুটি ছোড়া হয়েছে, তার নাম ‘আইএনএস অরিহন্ত’। ভারতে তৈরি প্রথম পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ এটি। সংস্কৃতে ‘অরিহন্ত’ শব্দের অর্থ শত্রুদের ধংসকারী।

আইএনএস অরিহন্ত: ভারতে তৈরি প্রথম পরমাণু শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ।

২০০৯-এর ২৬ জুলাই বিশাখাপত্তনমে আইএনএস অরিহন্ত জলে নামে। ভারতীয় নৌবাহিনীর Advanced Technology Vessel (ATV)- প্রকল্পের সাফল্যের একটি অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ আইএনএস অরিহন্ত। সাড়ে ছয় বছর ট্রায়াল শেষে ২০১৬-র ২৩ ফেব্রুয়ারি আইএনএস অরিহন্তকে নৌবাহিনীর কাজে যোগ দেওয়ার উপযুক্ত বলে ছাড়পত্র দেন এটিভি প্রোজেক্টের ইঞ্জিনিয়ারেরা। ওই বছরের অগাস্ট মাসে আইএনএস অরিহন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের নৌবহরের সঙ্গে যুক্ত হয়। যদিও পরমাণু শক্তি চালিত ৬ হাজার টনের এই ডুবোজাহাজটিকে নিয়মিতভাবে টহলদারির কাজে মোতায়েন করা হয় আরও ‌দুই বছর পরে, ২০১৮ থেকে।

আইএনএস অরিহন্ত থেকে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা সফল হয়েছে।

সাবমেরিন লঞ্চড্ ব্যালেস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম) সমুদ্রের জল ফুঁড়ে বেরোয়। এই ক্ষেত্রে জলের গভীরে থাকা সাবমেরিনকেই মিসাইলের লঞ্চিং প্যাড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুক্রবার বঙ্গোপসাগরের কোন‌ও গোপন জায়গা থেকে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে নির্দিষ্ট নিশানায় নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হয়েছে আইএনএস অরিহন্ত। কে-ফোর ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। প্রায় ১৯ টনের এই মিসাইলটি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। চিনের যে কোনও বড় শহর এর পাল্লার মধ্যে এসে যায়। ১২ মিটার লম্বা কঠিন জ্বালানি চালিত কে-ফোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ৭.৫ ম্যাক গতিবেগে শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পারদর্শী।

বঙ্গোপসাগরের যেই অঞ্চল থেকে এস‌এলবিএম পরীক্ষা করা হয়েছে।

আইএনএস অরিহন্ত থেকে উৎক্ষেপিত কে সিরিজের দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম কে-ফিফটিন। কে-ফিফটিনের পাল্লা ৭৫০ কিলোমিটার। পাকিস্তানের যে কোনও শহরে পরমাণু অস্ত্রের হামলা চালাতে কামিয়াব এই মিসাইল। কে-ফিফটিন ক্ষেপণাস্ত্র ১ হাজার কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম এবং এর গতিবেগ‌ও কে-ফোরের অনুরূপ। সমুদ্রের তলদেশে সংগোপনে চলাচল করতে পারে আইএনএস অরিহন্ত এবং সমুদ্রের যে কোনও জায়গায় লুকিয়ে থেকে শত্রুর উপর আঘাত ‌হানতে এর জুড়ি নেই। দেশে তৈরি পরমাণু শক্তি চালিত এই ডুবোজাহাজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ায় পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জন করায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সন্তুষ্ট।

সাবমেরিন থেকে কে-ফোর ও কে-ফিফটিন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সফল হয়েছে। প্রতীকি ছবি।

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা নৌবাহিনীর দৌরাত্ম্য দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টি ভারতকে উদ্বেগে রাখার জন্য যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে চিনকে জবাব দিতে নিজের নৌবাহিনীর দ্রুত শক্তিবৃদ্ধি চায় কেন্দ্রীয় সরকার। একমাত্র ‌শক্তিশালী ভারতীয় নৌবহর‌ই চিনকে চাপে রাখতে পারে। চিনের সঙ্গে স্নায়ু ও শক্তি প্রদর্শনের টক্করে ভারত যে আর একটুও পিছিয়ে থাকবে না, আইএনএস অরিহন্ত থেকে শনিবারের সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তার প্রমাণ।

Photo credit- Naval News, Indian Navy verified FB page, twitter and TOI.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *