দু’বার দেশের সেরা গোলরক্ষকের সম্মান লাভ করেছিলেন কল্যাণ চৌবে। বর্তমানে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করলেও ফুটবল কল্যাণের ধমনিতে।
স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসন থেকে জীবনেও ফুটবলে পা না ছোঁয়ানো পেশাদার রাজনীতিকদের মৌরসীপাট্টা অবশেষে ভাঙল। শুক্রবার ভোটাভুটিতে বাইচুং ভুটিয়াকে হারিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে। এআইএফএফ-এর ৮৫ বছরের ইতিহাসে যা এই প্রথম। এতদিন পর্যন্ত দেশের ফুটবলের নিয়ামক এই সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসতেন ফুটবলের বাইরের লোকেরা। বাংলার ফুটবলার কল্যাণ চৌবে জাতীয় দলে খেলেছেন। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের হয়ে তিনকাঠির নিচে দাঁড়িয়ে বহু গোল সেভ করেছেন এই প্রাক্তন গোলকিপার। ১৯৯৭-৯৮ এবং ২০০১-০২ সালে দেশের ‘সেরা গোলরক্ষকের’ সম্মান লাভ করেছিলেন কল্যাণ চৌবে। কল্যাণের আরও একটি পরিচয়- তিনি রাজ্য বিজেপির নেতা। উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি। ২০১৫ তে বিজেপিতে যোগ দেন এই ফুটবলার। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসনে মহুয়া মৈত্রের কাছে এবং একুশের বিধানসভায় মানিকতলা আসনে সাধন পান্ডের কাছে পরাজিত হলেও দলের কাজে উৎসাহ হারান নি কল্যাণ।
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এবং রাজ্যসভা সাংসদ প্রফুল্ল প্যাটেল ১৩ বছর ধরে এআইএফএফ-এর সভাপতি পদ আঁকড়ে ছিলেন। বেআইনিভাবে সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সর্বোচ্চ পদ দখল করে রাখার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই প্রফুল্ল প্যাটেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছিল। ২০১৭-র অক্টোবরেই প্যাটেলকে ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। তারপরেও সাড়ে চার বছর নানা কারসাজি করে পদে আসীন ছিলেন এই কংগ্রেস নেতা। অবশেষে গত ১৮ মে তাঁকে অপসারিত করে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ফেডারেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ এক্সিকিউটিভ কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের কমিটি অব অ্যাডমিনিট্রেটার্স (সিওএ) নিযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্ট। এর জেরে ১৪ অগাস্ট রাতে ফিফা এআইএফএফ-কে নির্বাসিত করলে ভারতীয় ফুটবলের উপর অন্ধকার নেমে আসে। কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে সুপ্রিম কোর্ট সিওএ নিযুক্ত করার নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলে ফিফা নরম হয়। এআইএফএফ-এ শীঘ্রই নির্বাচন হবে- ভারত সরকারের কাছ এই আশ্বাস পেয়ে ১৩ দিনের মাথায় নির্বাসন তুলে নেয় ফিফা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রফুল্ল প্যাটেল বিদায় নেওয়ার পর এআইএফএফ-এর নির্বাচনে ফুটবল জগতের বাইরের আর কারও সংস্থার সভাপতি হওয়ার সুযোগ ছিল না। কেননা, এবারে ফেডারেশনের সভাপতি পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন ছিলেন বাইচুং ভুটিয়া অপরজন কল্যাণ চৌবে। দু’জনেই জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। বাইচুং সিকিমের বাসিন্দা হলেও ছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকদের নয়ণমণি। বাঙালি কল্যাণ ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান, দু’দলের সমর্থকদেরই মনজয় করেছেন বহুবার। শুক্রবার এআইএফএফ-এর নির্বাচনে বাইচুং ভুটিয়া অবশ্য কল্যাণ চৌবের সামনে দাঁড়াতেই পারেন নি। ভোটাভুটিতে কল্যাণ পেয়েছেন ৩৩ টি ভোট, বাইচুংয়ের প্রাপ্তি মাত্র এক! কল্যাণ চৌবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন গুজরাট রাজ্য ফুটবল সংস্থার হয়ে। বাইচুং ভুটিয়া দাঁড়িয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য ফুটবল সংস্থার হয়ে। নির্বাচনে কল্যাণের জিত নিশ্চিতই ছিল। শুধু ব্যবধানের দিকে ছিল সবার নজর। ফলাফলে দেখা গেল কল্যাণের বিও দুটি ভোটও জোগাড় করতে ব্যর্থ বাইচুং।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পর আবার আরেক বাঙালিকে দেখা যাবে এআইএফএফ-এর সভাপতির চেয়ারে। প্রিয় ফুটবলের লোক ছিলেন না। স্রেফ ক্ষমতা ভোগ করতেই ফেডারেশনের মাথা হয়েছিলেন তিনি। ফুটবল জ্ঞানহীন ক্ষমতালোভী পেশাদার রাজনীতিকরা ভারতের ফুটবল প্রশাসন দখল করে রাখাতেই দেশের ফুটবলের এই দুর্দশা বলে মনে করেন অনেকে। কল্যাণ চৌবে সক্রিয়ভাবে বিজেপি করলেও ফুটবল তাঁর ধমনিতে। বাচ্চা বয়স থেকেই মাঠে। ২৫ বছরের ফুটবল জীবন কল্যাণের। এআইএফএফ-এর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কল্যাণ জানিয়েছেন- দেশের ফুটবল ও ফুটবলারদের জন্য নিজেকে আত্মোৎসর্গ করবেন তিনি।
Feature image is representational.