আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও নির্দলের মনোনয়নে পুলিশের বাধা, মহকুমা শাসককে তলব বিচারপতির - nagariknewz.com

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও নির্দলের মনোনয়নে পুলিশের বাধা, মহকুমা শাসককে তলব বিচারপতির


শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়ন পেশ করতে না পারার ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে হাইকোর্ট। কোন পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা গেল না তা জানতে চেয়েছেন বিচারপতি।

কলকাতা : আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও জলপাইগুড়িতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন নি নির্দল প্রার্থী। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দল প্রার্থী শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ফের আদালতের দ্বারস্থ হলে শুক্রবার মামলার শুনানিতে জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক‌ তথা পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার সুদীপ পালকে এজলাসে হাজির থাকার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর। সোমবার মহকুমা শাসককে সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

মনোনয়নপত্র পেশ করতে যাওয়ার পথে এ’ভাবেই শেখর ব্যানার্জিকে আটকেছে পুলিশ।

দলের প্রতীক না পেয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শহর জলপাইগুড়ির রাজনীতিতে যিনি শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই অধিক পরিচিত। গত মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দিতে গেলে শেখরবাবুকে কয়েক দফায় আটকে দেয় পুলিশ।
যখন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় তখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ। সেদিন‌ই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এই নির্দল প্রার্থী।

বুধবার দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানির ব্যবস্থা করে বিচারপতি রবিকিষাণ কপুরের সিঙ্গেল বেঞ্চ। বুধবার সকালে কয়েকজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে শেখরবাবু আবার মনোনয়ন জমা দিতে গেলে ফের এক‌ই কান্ড করে পুলিশ। কোভিড বিধি ভঙ্গ ও সরকারি কাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ টেনে‌ হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে র‌ওনা দেয়। দুপুরে হাইকোর্টে মামলার শুনানি শেষে আবেদনকারী যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন প্রশাসনকে তার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর।‌ উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তায় প্রার্থী সহ তিনজনকে মনোনয়ন গ্রহণকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার‌ও নির্দেশ দেন বিচারক।

হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে নিয়ে নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে বুধবার দুপুর স‌ওয়া দুটো নাগাদ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়ন জমা দিতে গেলে আবার তাঁকে পুলিশ আটকায়। দফায় দফায় প্রার্থীকে আটকাতে দেখা যায় প্রার্থীকে। এক জায়গায় ছেড়ে দিয়ে আরেক জায়গায় আটকায়। এইভাবে পঁয়ত্রিশ মিনিট ‌আটকে রাখার পর যখন ছাড়া হয় ততক্ষণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ। বুধবার‌ই ছিল পুরভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতার অভিযোগ, জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জির অঙ্গুলি হেলনেই পুলিশ এবং খোদ রিটার্নিং অফিসার ইচ্ছাকৃত তাঁকে মনোনয়নপত্র ‌পেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।

নির্দলের মনোনয়ন নিয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি।

পুরো ঘটনাটি জানিয়ে বৃহস্পতিবার ফের হাইকোর্টে আবেদন জানান শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। শুক্রবার ছিল মামলার শুনানি।‌ প্রশাসনের ভূমিকা দেখে তাজ্জব বনে যান স্বয়ং বিচারক। বিচারপতি রবিকিষাণ কপুর বলেন, আদালতের নির্দেশ অবমাননা করার এমন দুঃসাহস হয় কী করে ? ক্ষুব্ধ বিচারপতি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন নিয়ে এইসব কী চলছে? সরকার পক্ষের আইনজীবীকে বিচারক জানিয়ে দেন- ঘটনাটিকে মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না আদালত। কেন, কোন পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা গেল না তা মহকুমা শাসককে আদালতে এসেই জানাতে হবে। সোমবার জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক সুদীপ পালকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। মহকুমা শাসক‌ই পুর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সাংবিধানিক দায়িত্ব তাঁর উপরেই ন্যস্ত। তাই মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধে ওঠা আদালত অবমাননার অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন হাইকোর্টের বিচারপতি।

এই ঘটনায় নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের অযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। যেই রিটার্নিং অফিসার‌ শাসকদলের প্রভাবে উচ্চ আদালতের নির্দেশকে পর্যন্ত উপেক্ষা করতে পারেন তাঁর অধীনে জলপাইগুড়িতে কীভাবে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব এই প্রশ্ন‌ও তুলেছেন বিরোধী দলের প্রার্থীরা।

File Photos.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *