শিরদাঁড়ায় শিরদাঁড়ায় তফাত আছে, পিএসি-র উদাহরণ টেনে বোঝালেন মান্নান - nagariknewz.com

শিরদাঁড়ায় শিরদাঁড়ায় তফাত আছে, পিএসি-র উদাহরণ টেনে বোঝালেন মান্নান


খারাপ নজির তৈরি করে সংসদীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে তৃণমূল- পিএসির ইতিহাস তুলে ব্যাখ্যা রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতার ।

ডেস্ক রিপোর্ট :সংসদ বা বিধানসভার অধীনে একাধিক কমিটি থাকে। তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসি। সংসদীয় বা পরিষদীয় ব্যবস্থা ব্রিটিশদের দান, যেখানে লিখিত আইনের থেকে রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব বেশি। তৃণমূলের জামানায় রাজ্য বিধানসভার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটি নিয়েই বেনজির সব কান্ডকারখানা চলছে বলে অভিযোগ করলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

কবে থেকে পিএসি-র চেয়ারম্যান বিরোধীদের দেওয়া শুরু ?

পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কাজ হল সরকারের রাজস্ব আদায় ও খরচের হিসেব রাখা এবং অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের রিপোর্ট গুলি খতিয়ে দেখা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই পিএসি-র গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। পরিষদীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পিএসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটির মাথায় বিরোধী পক্ষের সাংসদ বা বিধায়ককে বসানোই রেওয়াজ। সরকারি আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও কড়া নজরদারি আনতেই এই ব্যবস্থা বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারণা। কিন্তু তৃণমূলের আমলে সরকার পক্ষ পরিষদীয় রীতিনীতি গুলিকে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনে না বলে অভিযোগ। নিজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি বিবৃতিতে এই দিকটিতেই আঙুল তুলেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। বর্তমান লোকসভায় পিএসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী।

ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় তৃতীয় লোকসভা পর্যন্ত ট্রেজারি বেঞ্চের‌ থেকেই কোন‌ও সদস্য পিএসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হতেন। কিন্তু চতুর্থ লোকসভা থেকে বিরোধী দলের কোন‌ও সাংসদকেই এই পদটি দেওয়ার নিয়ম চালু হয়। সপ্তদশ লোকসভা পর্যন্ত কোন‌ও সরকার‌ই এই রেওয়াজের ব্যতিক্রম ঘটায় নি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের রাজত্বে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কীভাবে ছলেবলে কৌশলে পরিষদীয় রেওয়াজকে জলাঞ্জলি ‌দেওয়া হয়েছে নিজের বিবৃতিতে তা তুলে ধরেন আব্দুল মান্নান।‌

২০১৬ থেকে সংসদীয় রেওয়াজ লঙ্ঘিত রাজ্য বিধানসভায়

২০১৬র বিধানসভা নির্বাচনের পর মানস ভুঁইয়ার তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হ‌ওয়ার পরেই তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের আপত্তি জানালেও তা কানে তোলেন নি অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।  তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে পিএসি-র চেয়ারম্যান থেকে যান মানস ভুঁইয়া। দলত্যাগ বিরোধী ‌আইনে কংগ্রেস মানসের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানালেও মুকুলের মতোই মানসকেও কাগজপত্রে কংগ্রেসের বিধায়ক‌ই রেখে দেওয়া হয়। রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হ‌ওয়ার পর মানস ভুঁইয়া বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার পর পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে আরেক দলত্যাগী কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর সিংহকে বসিয়ে দেন অধ্যক্ষ।

মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরেও এক‌ই খেলা খেলেছে শাসক তৃণমূল। ভোটের দেড় মাসের মাথায় মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপি দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানায়। বিজেপি মুকুলের নাম প্রস্তাব না করলেও মুকুলকে‌ই পিএসি-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নির্দেশেই স্পিকার পরিষদীয় রীতিনীতি লঙ্ঘন করে মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান করেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ‌।  পিএসি-র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষদীয় কমিটি নিয়ে সরকার পক্ষ এইভাবে খেয়াল-খুশি মতো কাজ করে চলায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা। তিনি লিখেছেন,” ওই পদে নিয়োগ নিয়ে যে সব বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তা সব‌ই সাম্প্রতিক। এর ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী হচ্ছে তা ভবিষ্যৎ বলবে।”

হালিম যেভাবে সংসদীয় রীতি রক্ষা করেছিলেন

বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে প্রয়াত হাসিম আব্দুল হালিম বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে কত দৃঢ়চেতা ও দল নিরপেক্ষ ছিলেন তা দৃষ্টান্ত সহকারে তুলে ধরেন মান্নান সাহেব। ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধীদলের মর্যাদা পায় তৃণমূল কংগ্রেস। হালিম সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ দিতে চাইলেও বেঁকে বসে তৃণমূল পরিষদীয় দল। ঢাকুরিয়ার বিধায়ক সৌগত রায়কে চেয়ারম্যান পদে ‌বসানোর প্রস্তাব দেয় তৃণমূল। কমিটির সদস্য নির্বাচনের সময়  সুব্রতর নাম‌ই প্রস্তাব বা সমর্থন করেন নি তৃণমূলের কোনও বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বামফ্রন্টের বিধায়কদের সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হয়ে প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে বললে  তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেন অধ্যক্ষ হালিম‌। পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে আসীন হন সৌগত‌ই।

পরিষদীর গরিমা রক্ষায় আপোষ করেন নি হাসিম আব্দুল হালিম।

আব্দুল মান্নান লিখেছেন,”তৎকালীন স্পিকার চাইলে পারতেন কোনও একজন বামফ্রন্টের বিধায়ককে পিএসি-র কমিটি থেকে পদত্যাগ করিয়ে সেই  শূন্য আসনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে মনোনয়ন দিয়ে পিএসি-র চেয়ারম্যান করতে। কিন্তু তিনি তা করেন নি।” তৃণমূলের আমলে এমন ঘটনা সম্ভব? পরিষদীয় ব্যবস্থার পবিত্রতা রক্ষায় বর্তমান তৃণমূল সরকারের কোনও আন্তরিকতা নেই – এটা বোঝাতেই আব্দুল মান্নানের এই বিবৃতি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এক‌ই সঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলেন মান্নান।

Photo Credit- Facebook.



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *