১৭৬ বছরের প্রাচীন কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। পড়িয়েছেন রামতনু লাহিড়ীর মতো সমাজসংস্কারক। পন্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো কিংবদন্তিতুল্য বিদ্বান। পড়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো প্রখ্যাত কবি। বুধবার সেই স্কুল কলঙ্কিত হল দুই শিক্ষকের তুমুল মারপিটে ! আর কী দেখা বাকি আছে বাঙালির ?
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজ্যে এখনও স্কুল খুলে নি। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলবে। রাজ্য জুড়ে স্কুল ঝাড়পোছের কাজ চলছে। কিন্তু পাঠশালা খুললে মাস্টারমশাইরা পড়ুয়াদের শেখাবেনটা কী ? কীভাবে মারামারি করতে হয়, এটাই কি ছাত্রছাত্রীদের শেখাবেন শিক্ষকেরা? বুধবার কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের চিত্র দেখার পর এটাই ধরে নেওয়া স্বাভাবিক মারপিট করাটাও মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আশু প্রয়োজন। স্কুলে স্কুলে চপলমতী পড়ুয়াদের মধ্যে হাতাহাতি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যা চিরকালই ঘটে এসেছে। বকে-বুঝিয়ে দুষ্টু ছেলেদের মানুষ করাই মাস্টারমশাইদের কাজ। কিন্তু বুধবার বাংলা দেখল কীভাবে স্কুলের মধ্যেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়লেন মানুষ গড়ার দুই কারিগর!
১৭৬ বছরের প্রাচীন কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। বাংলার প্রাচীনতম বিদ্যালয়গুলির মধে অন্যতম। ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে পড়িয়েছেন রামতনু লাহিড়ী , মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো পন্ডিত, বেণীমাধব দাসের মতো স্বদেশপ্রেমিক শিক্ষক এবং পড়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো প্রখ্যাত কবি। বাংলার অন্যতম এই বনেদী স্কুলে পড়িয়েছেন কত প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক। সারস্বত সাধনার সেই পবিত্র প্রাঙ্গণ কিনা কলুষিত হল দুই শিক্ষকের মারপিটে ! যেই দুই শিক্ষকরত্নের মধ্যে মারপিটের ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল, তাঁদের একজন স্কুলটির প্রধানশিক্ষক, অপরজন ভূগোলের সহশিক্ষক। ভূগোলের শিক্ষক নিমাই মজুমদার আর প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ভূগোল শিক্ষক নিমাইবাবু যখন প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন তখন আচমকাই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন মনোরঞ্জনবাবু। অতঃপরের ঘটনা বঙ্গবাসী দেখছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন। একে অপরের উপর যথেচ্ছ কিল-চড়-ঘুষি চালাচালি করলেন মানুষ গড়ার দুই কারিগর!
ভূগোল শিক্ষকের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই নানা দুর্নীতিতে জড়িত প্রধান শিক্ষক । তাঁর কিছু প্রয়োজনীয় নথিও প্রধান শিক্ষক আটকে রেখেছেন বলে ভূগোল শিক্ষক নিমাইবাবুর অভিযোগ। অনেকবার চেয়েও নথি পান নি নিমাইবাবু। আর এর প্রতিবাদেই বুধবার সকালে স্কুল খুলতেই প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে পোস্টার হাতে বিক্ষোভ- অবস্থানে বসে পড়েন তিনি। খবর যায় সংবাদ মাধ্যমের কাছে। এরপর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই মত্ত দুই পশুর মতো একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই হেডস্যার আর ভূগোল স্যার – ছাত্রদের আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলাই যাঁদের কাজ। কাঁদো বাংলার শিক্ষককুল।
Photo Credit – Just Dial.