তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনে দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে ফের নির্বাচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের একলা চলার ঘোষণা দিলেন মমতা। একলা লড়ে কীভাবে বিজেপিকে হারাবেন মমতা ? জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
কলকাতা : তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনে প্রত্যাশা মতোই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন পদে পুনঃনির্বাচিত হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মমতা পৌঁছান বেলা বারোটা দশ মিনিট নাগাদ। এর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই তাঁকে চেয়ারপার্সন পদে বিজয়ী বলে ঘোষণা করেন তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সকলেরই জানা ছিল তৃণমূলের সুপ্রিমো পদে মমতার নির্বাচিত হওয়া একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। চেয়ারপার্সন পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও দ্বিতীয় কেউ মনোনয়ন জমা দেন নি।
দলের কান্ডারী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নেতাকর্মীদের মমতা বলেন, ” তৃণমূল এখন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল। আপনারা বাংলা সামলান। আর আমাকে বলুন দেশ থেকে বিজেপিকে হটিয়ে দিতে। “ তৃণমূল বিজেপিকে হঠাতে চাইলেও কারও সঙ্গে সমঝোতায় যাবে না বলে স্পষ্ট এদিন স্পষ্ট করে দেন মমতা। মমতার কথায় – “একলা চলেই ভারত জয় করবে তৃণমূল। “ এটা কীভাবে সম্ভব তা রাজনৈতিক মহলের কাছে একটা বিস্ময়। কিন্তু মমতার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। তিনি বলেন,“তৃণমূল যদি বাংলা থেকে সিপিএমকে তাড়াতে পারে,তবে কেন্দ্রেও পারবে। ” কিন্তু তা কীভাবে? মমতা বলেন, “তৃণমূল স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে বিশ্বাসী। আন্দোলনে বিশ্বাসী। আন্দোলন করেই কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হটিয়ে দেবে তৃণমূল। “
![](https://nagariknewz.com/wp-content/uploads/2022/02/IMG_20220202_160602_441.jpg)
সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চ থেকেও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার অভিযোগ, ” কংগ্রেস বিজেপির হয়ে ভোট করে দেয়। ” ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস জুড়ে উত্তরপ্রদেশ সহ চারটি রাজ্যে নির্বাচন। দেশের ক্ষুদ্রতম রাজ্য গোয়া ছাড়া আর কোথাও লড়াইয়েই নেই তৃণমূল। গোয়াতেও জোড়াফুল শিবিরের ভাল কোনও ফলের সম্ভাবনা দেখছে না রাজনৈতিক মহল। অপিনিয়ন পোলেও তৃণমূলের জন্য আশার কোনও ইঙ্গিত নেই। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশে তৃণমূল কীভাবে একা বিজেপির সঙ্গে টক্কর দেবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে সর্বভারতীয় স্তরে দলের দুর্বলতার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ওয়াকিবহাল নন তেমন নয়। এদিন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঘর সামলানোরও পরামর্শ দেন মমতা। তিনি বলেন, ” আগে ঘরকে মজবুত করুন। বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে হটাতে হলে আগে নিজেদের ঘর সামলান। দু’বছরে নিজেদের এত শক্তিশালী করুন যে ৪২টি আসনই দল পায়। “ কিন্তু ৪২ এ ৪২ করলেও তো ৫৪৩ আসনের লোকসভায় তৃণমূলের একার জোরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন – তারপরেও কেন লোকসভা নির্বাচনে একলা চলার ইঙ্গিত দিচ্ছেন মমতা? এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস ও বামেদের অভিযোগ – বিজেপির হাত শক্ত করতেই বিরোধী জোট ভেস্তে দিতে উদগ্রীব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার দলের গোষ্ঠী কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও নেতাদের সতর্ক করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মধ্যে দ্বিতীয় একটি ভরকেন্দ্র গড়ে উঠেছে বলেই ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের প্রবীণ নেতাদের অনেকেরই বিষয়টি মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। অন্যরা ক্ষোভ চেপে রাখলেও প্রকাশ্যেই অভিষেকের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করেন কল্যাণ। এই নিয়ে কল্যাণ-কুণালের বিতন্ডা বহু দূর পর্যন্ত গড়ায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরে বলেন,” দলে কেউ কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াবেন না। দলই শেষ কথা। জোর করে কাউকে দলে ঢোকাবেন না। দলের ভেতরে কোনও গ্রুপ করবেন না। দলে একটাই গ্রুপ থাকবে। “
Photo Credit- TMC Official FB page.