জীবের মধ্যেই শিবের নিত্যলীলা - nagariknewz.com

জীবের মধ্যেই শিবের নিত্যলীলা


                                          উ ত্ত ম   দে ব

ড়ের মধ্যে চেতন বা চৈতন্যের বিকাশ হলে‌ সেই অবস্থাকেই বলে প্রাণ । যে চৈতন্যের সংশ্লেষে জড়ের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার তার উৎস সন্ধান ভারতীয় তন্ত্রের মূল কথা । তন্ত্র‌ই হল ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের ভরকেন্দ্র । আবার তন্ত্রের ভরকেন্দ্রে যেই পরম সত্ত্বা স্থিত তাঁর নাম‌ই হল ‘ শিব ‘। আমাদের তন্ত্রের অভীষ্ট হল জীব চৈতন্যের সঙ্গে পরম চৈতন্যের যোগসূত্র স্থাপন । শিব কে ? শিব কী ? অজস্র রূপক , বিভিন্ন পুরাণ , শতশত লোককথা , পৌরাণিক নানা কাহিনী এবং বিপুল‌ শাস্ত্রাদির জটিল সব অলিগলি পার করে শিবের কোন‌ও একক ন্যারেটিভে পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব । সেই চেষ্টার দরকার‌ও নেই । ভক্তের চোখে ভগবান শিবের সহস্র রূপ আর অনন্ত মহিমা । সনাতন ধর্মে জ্ঞানমার্গে সাধন যতটা কঠিন ভক্তিমার্গে ততটাই সহজ । আমাদের শাস্ত্র ইষ্টকে ভালোবাসার প্রশ্নে ভক্তকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা দিয়ে বসে আছে । ভক্তের আব্দার মেটানোয় বিষ্ণুর চাইতে শিব কিছু কম নন । তিনি তো আবার আশুতোষ । অল্পতেই তুষ্ট । স্রেফ ভক্তের কথাতেই ভুলে গিয়ে তাঁর সকল ইচ্ছা পূরণ করেন বলেই তো তিনি ‘ ভোলেবাবা ‘। 

ব্রহ্মকেই জগতের আদি কারণ , উৎস ও পরম চৈতন্য বা সুপ্রিম কনশাসনেস হিসেবে বর্ণনা করেছে উপনিষদ । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে শিবের স্বরূপকেই পরম ব্রহ্ম বা পরম চৈতন্য বলা হয়েছে । যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ ‘– অর্থাৎ তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ । তিনি স্বরূপে বর্তমান । সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি । তিনি তুরীয়, অন্ধকারের‌ও অতীত এবং অনাদি ও অনন্ত । ভগবান শিবের ১০৮টি নাম । তন্মধ্যে ‘ শিব ‘ নামের তাৎপর্য‌ই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । শিব মানেই জীবের চৈতন্যের আধার , অনাদি‌, অনন্ত , শাশ্বত পরমব্রহ্ম। শিবকে বলা হয় জগতের পরম মঙ্গলময় পরমেশ্বর । যে শক্তি থেকে জগতের সমস্ত জীব চৈতন্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ তার অধিক মঙ্গলময় আর কে হতে পারেন ? 

জীবকে জড় জগতের ঊর্ধ্বে চিৎ জগতে উত্তরণ ঘটান ভগবান শিব

স্থূল জগতকে সঞ্চালনা করেন শিবের‌ই অধীনস্থ শক্তি মহামায়া । স্থূল জগতের ঊর্ধ্বে যে চিৎ জগত , মায়ার বন্ধন কাটিয়ে জীবাত্মাকে তাতে উত্তরণ ঘটানো‌ই শিবের লক্ষ্য । সৃষ্টি-স্থিতি-লয় কালের ত্রি অবস্থা । কালকে নিয়ন্ত্রণ করেন বলে তিনি কালাতীত । সত্ত্ব-রজ-তম প্রকৃতির ত্রি গুণ । তিনি সকল গুণের ঊর্ধ্বে । তাই তিনি গুণাতীত । তিনি মহাযোগী । কারণ জীবনের সুরের সঙ্গে তিনি জগতের সুরকে যুক্ত করেন । শিব নিত্য ধ্যানমগ্ন । কারণ তিনিই সৎ- চিৎ- আনন্দ – সচ্চিদানন্দ । শিব ও শক্তি এক , অভেদ ও অবিভাজ্য । শিব স্থির , অচঞ্চল , ধ্রুব । শক্তি অস্থির , চঞ্চল ও গতিময় । যুগপৎ স্থিতি ও গতি নিয়েই জগৎ । চৈতন্য এক‌ই সঙ্গে ধ্রুব ও চঞ্চল । জগতের হেতু বা আদি যে পরম চৈতন্য তাঁকে অনুভব করার রাত্রিই মহাশিবরাত্রি । ওম নমহঃ শিবায় । 

জীবনের সুরের সঙ্গে  জগতের সুরকে যুক্ত  করেন মহাযোগী শিব


Images Credit – Pinterest 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *