ব্রহ্মকেই জগতের আদি কারণ , উৎস ও পরম চৈতন্য বা সুপ্রিম কনশাসনেস হিসেবে বর্ণনা করেছে উপনিষদ । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে শিবের স্বরূপকেই পরম ব্রহ্ম বা পরম চৈতন্য বলা হয়েছে । ‘ যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ ‘– অর্থাৎ তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ । তিনি স্বরূপে বর্তমান । সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি । তিনি তুরীয়, অন্ধকারেরও অতীত এবং অনাদি ও অনন্ত । ভগবান শিবের ১০৮টি নাম । তন্মধ্যে ‘ শিব ‘ নামের তাৎপর্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । শিব মানেই জীবের চৈতন্যের আধার , অনাদি, অনন্ত , শাশ্বত পরমব্রহ্ম। শিবকে বলা হয় জগতের পরম মঙ্গলময় পরমেশ্বর । যে শক্তি থেকে জগতের সমস্ত জীব চৈতন্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ তার অধিক মঙ্গলময় আর কে হতে পারেন ?
জীবকে জড় জগতের ঊর্ধ্বে চিৎ জগতে উত্তরণ ঘটান ভগবান শিব |
স্থূল জগতকে সঞ্চালনা করেন শিবেরই অধীনস্থ শক্তি মহামায়া । স্থূল জগতের ঊর্ধ্বে যে চিৎ জগত , মায়ার বন্ধন কাটিয়ে জীবাত্মাকে তাতে উত্তরণ ঘটানোই শিবের লক্ষ্য । সৃষ্টি-স্থিতি-লয় কালের ত্রি অবস্থা । কালকে নিয়ন্ত্রণ করেন বলে তিনি কালাতীত । সত্ত্ব-রজ-তম প্রকৃতির ত্রি গুণ । তিনি সকল গুণের ঊর্ধ্বে । তাই তিনি গুণাতীত । তিনি মহাযোগী । কারণ জীবনের সুরের সঙ্গে তিনি জগতের সুরকে যুক্ত করেন । শিব নিত্য ধ্যানমগ্ন । কারণ তিনিই সৎ- চিৎ- আনন্দ – সচ্চিদানন্দ । শিব ও শক্তি এক , অভেদ ও অবিভাজ্য । শিব স্থির , অচঞ্চল , ধ্রুব । শক্তি অস্থির , চঞ্চল ও গতিময় । যুগপৎ স্থিতি ও গতি নিয়েই জগৎ । চৈতন্য একই সঙ্গে ধ্রুব ও চঞ্চল । জগতের হেতু বা আদি যে পরম চৈতন্য তাঁকে অনুভব করার রাত্রিই মহাশিবরাত্রি । ওম নমহঃ শিবায় ।
জীবনের সুরের সঙ্গে জগতের সুরকে যুক্ত করেন মহাযোগী শিব |
Images Credit – Pinterest