আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যে কোনও মুহূর্তে খতম হয়ে যেতে পারেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ৮৬ বছরের আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তো পারলে আজকের রাতটাই খামেনির জীবনের শেষ রাতে পরিণত করতে চান। কিন্তু তিনি তা ঠেকিয়ে রেখেছেন, জি-সেভেন সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি হোয়াইট হাউসে ফিরে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেহরানে ইজরায়েলের বিমান হামলার পর থেকেই গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। কিন্তু তিনি কোথায় লুকিয়েছেন, তা মোসাদের গোয়েন্দাদের এতটাই ভালভাবে জানা যে চাইলে যে কোনও মুহূর্তে খামেনির গুপ্ত আশ্রয়স্থল গুঁড়িয়ে দিতে পারে ইজরায়েল।

ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকেই খামেনিকে নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা খুব একটা গোপন রাখে নি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। নেতানিয়াহু মনে করেন, খামেনিকে সরিয়ে দিলে ইরানের ‘রেজিম চেঞ্জ’ অর্থাৎ মৌলবাদী শাসনের পতন ত্বরান্বিত হবে। প্রয়োজনে খামেনিকে লক্ষ্য করে সরাসরি হামলা যে তাদের চলতি সামরিক অভিযানেই অন্তর্ভূক্ত হতে পারে, তেমন ইঙ্গিত সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সামনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এতদিনে সবার জানা হয়ে গেছে, ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক পরিকাঠামো ধ্বংসের ব্যাপারে ইজরায়েলের পদক্ষেপে হোয়াইট হাউসের পূর্ণ সমর্থন আছে। যদিও খামেনিকে খুনের ব্যাপারে এখনও নেতানিয়াহুকে সবুজ সংকেত দেয় নি আমেরিকা। তবে কতদিন পর্যন্ত আমেরিকা খামেনিকে ইজরায়েলের রোষানল থেকে রক্ষা করবে, তা ইরানের আচরণের উপরেই নির্ভর করছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্পের মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। ট্রাম্প লিখেছেন, “তিনি (খামেনি) সহজ লক্ষ্যবস্তু। তবে যেখানে আছেন, নিরাপদেই আছেন। আমরা তাঁকে হত্যা করব না। অন্তত এখনই না।” কূটনৈতিক সূত্রে খবর, চলতি সামরিক অভিযানেই ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্তাদের পাশাপাশি খামেনিকেও খতম করতে চায় ইজরায়েল। হোয়াইট হাউসের কাছে সেই বার্তা পাঠিয়েও ছিল তেল আভিভ। কিন্তু সায় দেয় নি ট্রাম্প প্রশাসন। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে খামেনিকে নিয়ে আমেরিকার মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বেশ পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ আপাতত আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার কোনও পরিকল্পনা নেই আমেরিকার। কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে যে হোয়াইট হাউসের এই অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে, সেই ইশারাও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

বুধবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান। ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, ”ইরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে।” পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ইরানের প্রতিনিধিরা আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এখন তেহরানের জন্য দর কষাকষির রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ইরানের অনেক সমস্যা রয়েছে। ওরা আলোচনায় বসতে চায়। এটি এত দিনে সেরে নেওয়া উচিত ছিল। ওরা আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু আমি বলে দিয়েছি, এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।”
ইরানকে পর্যুদস্ত করতে আমেরিকাও ইজরায়েলের সঙ্গে হাত লাগাবে কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে বুধবার ট্রাম্প বলেন, “আমি কী করতে চলেছি, তা কেউই জানে না। আমি করতেও পারি, আবার নাও করতে পারি।” অর্থাৎ ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর প্রশ্নে ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে ইজরায়েলের ভূখণ্ড তাক করে ইরানের মিসাইল হামলা সীমিত হয়ে আসছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাত ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রথম দফায় ইজরায়েল লক্ষ্য করে ১৫ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান। এর ঠিক চল্লিশ মিনিট পর দ্বিতীয় দফায় আরও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের দিক থেকে ইজরায়েলের মাটিতে ধেয়ে আসে। প্রথম কয়েক দিনের তুলনায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে বলে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে। তবে কি ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতে টান পড়তে শুরু করেছে? ইজরায়েল লক্ষ্য করে ইরান এখনও পর্যন্ত ৪০০ ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ১০০০ ড্রোন ছুঁড়েছে বলে ইজরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন।
ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দফতর বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে বুধবার দাবি করেছেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। পঞ্চাশটির বেশি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইরানের বিভিন্ন সামরিক পরিকাঠামোর উপরে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে ইজরায়েল। ইরান-ইজরায়েল সংঘাত ছয়দিনে গড়িয়েছে। ইজরায়েলের নজর থেকে শীর্ষ নেতৃত্বকে বাঁচতে দেশের ভেতরে ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ইরান সরকার। হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপরেও নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে এসেছে। এর ফলে বহির্জগতের সঙ্গে সাধারণ ইরানিদের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
Feature graphic is representational and created by NNDC.