পলিটিক্যাল ডেস্ক: ২৭ বছর পর দিল্লির সরকারে ফের বিজেপি। এক্সিট পোল যা ইঙ্গিত দিয়েছিল, তার অন্যথা দেশের রাজধানীর ভোটে ঘটে নি। আবগারী দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে জেলে যাওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। এবার জিতলে চতুর্থবারের মতো দিল্লির কুর্সিতে বসতেন কেজরীওয়াল। কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দিল না জনতাজনার্দন। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে বিজেপির প্রবেশ সিংহের কাছে নিজেই হেরে বসে আছেন আপ প্রধান। ৪,০৮৯ ভোটে কেজরীওয়ালকে পরাজিত করেছেন প্রবেশ।
জংপুরা কেন্দ্র থেকে পরাজিত আপের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। মাত্র ৬৭৫ ভোটে হেরে গেছেন মণীশ। জিতে দলের মুখ রেখেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা। কালকাজি কেন্দ্রে ৩,৫২১ ভোটের ব্যবধানে বিজেপির রমেশ বিধুরীকে পরাজিত করেছেন আতিশী। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় বিজেপির দখলে ৪৮। ২২টিতে জয়লাভ করেছে আম আদমি পার্টি। কংগ্রেস শূন্য। পর পর তিনবার দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলকে খালি হাতে ফেরালেন দিল্লির ভোটাররা।
আপ ইজ ডাউন নাউ, শূন্য পেয়েও স্বস্তি কংগ্রেসের!
নয়াদিল্লি আসনে জামানত জব্দ হয়েছে দিল্লির কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিতের। সন্দীপ দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩- টানা ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা দীক্ষিত। একদা গড় দিল্লি থেকে কংগ্রেসকে ঝাড়েবংশে উচ্ছেদের জন্য অরবিন্দ কেজরীওয়ালকেই দায়ী বলে মনে করেন সন্দীপ সহ দিল্লি কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা। সন্দীপ দীক্ষিতের সঙ্গে কেজরিওয়ালের মধুর সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। এ’বারের ভোটে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা ভেস্তে যেতেই কেজরিওয়ালকে শিক্ষা দিতে নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন সন্দীপ। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ পর্যন্ত জামানত হারিয়েছেন শীলাপুত্র। ২০১৩ সালে এই আসনেই সন্দীপজননীকে পরাজিত করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কেজরীওয়াল।

নয়াদিল্লি কেন্দ্রে নিজে জামানত হারালেও কেজরীর যাত্রাভঙ্গ করতে সমর্থ হয়েছেন সন্দীপ দীক্ষিত। বিজেপির প্রবেশ সিংহের কাছে কেজরী হেরেছেন ৪,০৮৯ ভোটে। সন্দীপ পেয়েছেন ৪,৫৬৮ ভোট। সমঝোতা হলে ফল যে অন্য রকম হত, তা বলাই বাহুল্য। পঁচিশের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৪৮ আসন জিতে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৪৫.৭৬ শতাংশ। ২০২০-এর নির্বাচন থেকে ৭.২৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে পদ্ম শিবির। ২৩ আসন জেতা আপের ভোট ৪৩.৭৭ শতাংশ। ৯.৮ শতাংশ ভোট হাতছাড়া হয়েছে কেজরীওয়ালের দলের। কংগ্রেস পেয়েছে ৬.৩৭ শতাংশ ভোট। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট ছিল ৪.২৬ শতাংশ। ২.১১ শতাংশ ভোট বাড়িয়েও আসন জোটাতে ব্যর্থ হাত শিবির। কংগ্রেস নিজে শূন্য পেলেও আপকে যে পথে বসিয়েছে, ভোটের হিসেবই তা বলে দিচ্ছে।
মহারাষ্ট্র-দিল্লি দখলে, মোদীর নজর বিহারে
৮ থেকে ৪৮-এ পৌঁছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দিল্লি সরকার দখল করেছে দল, স্বাভাবিকভাবেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভাসছে বিজেপি। শনিবার সকালে ইভিএম খোলার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এবার গণদেবতার রায় পদ্মের দিকে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র চমকপ্রদ বিজয়ের পরেও বিশে দিল্লি বিধানসভার ভোটে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপির। আপের নাকে ঝামা ঘষে দিল্লি দখলের জন্য তিন বছর ধরেই ঘর গুছিয়েছে পদ্ম শিবির। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছিল মোদী ম্যাজিক। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল মোদীর ক্যারিশ্মা নিয়ে। তবে সে’সব এখন অতীত। গত নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের ভোটে প্রত্যাশার অধিক বিশাল জয়ের পর ফেব্রুয়ারিতে ২৭ বছর পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লি সরকার দখল- শনিবার বিকেলের পর থেকে মোদীর নজর নিঃসন্দেহে আগামী নভেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে।
Feature image is representational.