ডেস্ক রিপোর্ট: বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা অবসানের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের জেরে জেরবার শেখ হাসিনার সরকার। আন্দোলন দমাতে প্রথমে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি স্লো করে দিয়েছিল প্রশাসন। পরে মোবাইল ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে কেবল ব্রডব্যান্ড চালু রাখা হয়েছিল। এরপর সরকারের নির্দেশে ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও বন্ধ করে দেয় অপারেটররা। চালু ছিল শুধু মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন টেলিফোন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে মোবাইল-ল্যান্ডলাইন সহ সবধরণের টেলি যোগাযোগের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে হাসিনা সরকার।
বাংলাদেশের ভেতরে এখন কী হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। সেই দেশের জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলির ওয়েবসাইটগুলিতে কোনও আপডেট নেই। তাদের ফেসবুক পেজগুলিরও একই অবস্থা। বাংলাদেশের বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলি থেকেও সম্প্রচার বন্ধ। তাদের ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলগুলিতেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে খবরের কোনও আপডেট নেই। ইন্টারনেট ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এখনও পর্যন্ত সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও কোনও কোনও মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভির ভবনে হামলা চালানো হয়। প্রাণভয়ে ভবন থেকে পালিয়ে যান কর্মীরা। এরপর থেকেই বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ। বাংলাদেশ পুলিশ, আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইট পর্যন্ত হ্যাক করে নিয়েছে হ্যাকাররা। ২০০৮-এর ডিসেম্বরের শেষে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর এতবড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন আর হন নি শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে ভোটগ্রহণের দাবিতে সেই নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি সহ অধিকাংশ বিরোধী দল। গতবছর ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পর থেকে দলটি রাজপথে নেই। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দল সরাসরি যুক্ত না হলেও আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির নেত্রী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। খালেদার ছেলে তারেক রহমান বৃটেনে নির্বাসিত। লন্ডনে বসেই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। একাধিক মামলায় তারেককে যাবজ্জীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। যদিও সব মামলাই সাজানো বলে দাবি বিএনপির। ছাত্র বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা গণহত্যা চালাচ্ছেন বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন তারেক রহমান। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা এই সংকট কীভাবে কাটিয়ে ওঠেন, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল।
Feature image Collected from X handle.