ডেস্ক রিপোর্ট: লোকসভার অধ্যক্ষ পদে ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রার্থী দিলেও ধ্বনিভোটে জিতলেন এনডিএ-র ওম বিড়লাই। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার লোকসভার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পেলেন ওম। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় আগের দুই দফার মতো এ’বার সহজে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে স্পিকারের চেয়ারের বসাতে বেগ পাবেন মোদী- এমনটাই ছিল রাজনৈতিক মহলের ধারণা। অধ্যক্ষের নির্বাচন নিয়ে টক্কর দিতে তৈরি ছিল বিরোধীরাও। ইন্ডিয়া জোট অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী করে কেরলের মাভেলিকারা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের আটবারের সাংসদ কে সুরেশকে। কে সুরেশের সমর্থনে এগিয়ে আসে তৃণমূল কংগ্রেসও।
তবে শেষ হাসি হাসলেন মোদীই। বুধবার লোকসভায় ভোটাভুটি শেষে কে সুরেশকে হারিয়ে জিতলেন ওম বিড়লা। সকাল ১১টায় ধ্বনিভোট শুরু হয়। সংখ্যার বিচারে রাজস্থানের কোটার সাংসদ ওমের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হতে বিশেষ কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। কারণ লোকসভায় এনডিএ-র শক্তি ২৯৩। চন্দ্রবাবু নায়ডু কিম্বা নীতীশ কুমার- কারোরই ওম বিড়লাকে দ্বিতীয়বারের জন্য অধ্যক্ষ বানানোর ব্যাপারে আপত্তি না থাকায় বিজেপির কাজ সহজ হয়ে যায়। উপরন্তু ওয়াই এস জগনমোহন রেড্ডির দলের চার সাংসদও এনডিএ-র অধ্যক্ষ পদপ্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ওমের জয়ের পথ আরও সুগম হয়।
অধ্যক্ষ পদ নিয়ে এনডিএ শিবিরে কোনও অনৈক্য নেই বুঝতে পেরেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে দোটানায় পড়ে যায় ‘ইন্ডিয়া’ শিবির। ‘ডেপুটি স্পিকারের’ পদ বিরোধীদের ছাড়া হলে তাঁরা এনডিএ-র প্রার্থীকে সমর্থনে রাজি আছেন, খোদ রাহুল গান্ধীর মুখ থেকে এমন কথাও শোনা যায়। কিন্তু এনডিএ-র শরিকদের ভেতর থেকেই কাউকে ডেপুটি স্পিকার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘ডেপুটি স্পিকার’ নিয়ে কোনও আশা নেই বুঝেই হার জেনেও মুখ রক্ষা করতে শেষ মুহূর্তে অধ্যক্ষ পদে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার মাত্র দশ মিনিট আগে জোটের অধ্যক্ষ পদপ্রার্থী কে সুরেশের মনোনয়ন জমা পড়ে। ফলে প্রায় ৪৮ বছর পরে লোকসভার স্পিকার পদ নিয়ে ভোটাভুটির ঘটনা ঘটল বুধবার।
লোকসভায় সৌজন্যের দৃশ্য: হাত মেলালেন মোদী-রাহুল
ধ্বনিভোটে অষ্টাদশ লোকসভার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হওয়া মাত্রই ওম বিড়লাকে অভিনন্দন জানান শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই। ভোটাভুটি পরিচালনা করেন ‘প্রোটেম স্পিকার’ ভর্তৃহরি মহতাব। ভর্তৃহরি অধ্যক্ষের আসন ওমকে ছেড়ে দেন। ওমকে অধ্যক্ষের আসন পর্যন্ত এগিয়ে দেন মোদী ও রাহুল দু’জনেই। এই সময় মোদী ও রাহুলকে করমর্দন করতে দেখা যায়। নব নির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি লোকসভার সকলের তরফে আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। অমৃতকালে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব পেলেন আপনি। আমরা আশা করছি, আপনি আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী পাঁচ বছর আমাদের পথ দেখাবেন।” রসিকতা করে মোদী ওম বিড়লাকে বলেন, “আপনার মুখের মিষ্টি মিষ্টি হাসি গোটা সংসদেরই মন ভাল রাখে।”
ওম বিড়লাকে অভিনন্দন জানিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, “আশা করি আপনি সংবিধান মেনে আপনার দায়িত্ব পালন করবেন। বিরোধীরাই দেশের কন্ঠস্বর। আশা করি, বিরোধীরা সংসদে বলার সুযোগ পাবে।” সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, “আপনাকে অভিনন্দন। আপনার দায়িত্ব অনেক মহান। আশা করব, আপনি লোকসভার গৌরব বজায় রাখবেন ও দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি ন্যায় আচরণ করবেন।”
Feature image: NNDC.