ডেস্ক রিপোর্ট: দিল্লি বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিরোধীদের নিশানায় মোদী। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর ‘ডিপার্চার টার্মিনাল’-এর ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। ঘটনার সময় রাজধানীতে প্রবল বৃষ্টি চলছিল। বৃষ্টির চাপে ছাদের একাংশ ভেঙে পড়লে কয়েকজন চাপা পড়েন। কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগান এনডিআরএফ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত কমপক্ষে আটজন।
ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, “কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও লোকসভা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।” উদ্বোধনের তাড়াহুড়োয় কাজে গাফিলতি হয়েছে, তাই ছাদ ভেঙে প্রাণহানি, এমনটাই মনে করছেন বিরোধী নেতারা। দেশে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়েছিল গত ১১ মার্চ। আচরণবিধি চালু হয়ে গেলে কোনও সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করা যায় না। লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগের দিন দিল্লি বিমানবন্দরের নব নির্মিত ১ নম্বর টার্মিনাল উদ্বোধন করেন মোদী।
শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার পর এর দায়ভার একযোগে মোদীর দিকেই ঠেলছেন বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা নিজদের এক্স হ্যান্ডেলে মোদীকে বিঁধে পোস্ট করেছেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের প্রশ্ন, “কেন মোদীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হবে না?” তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে অভিযোগ করা হয়েছে, “দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের ছাদ ধসে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আটজন আহত। কাজ অসমাপ্ত থাকার পরেও কেবলমাত্র ভোটের প্রচারের স্বার্থে তাড়াহুড়োয় এটির উদ্বোধন করেছিলেন মোদীজি। নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আর কত নিরীহ মানুষের প্রাণ নেবেন তিনি?”
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, “১ নম্বর টার্মিনালের যে অংশের ছাদ শুক্রবার সকাল ভেঙে পড়েছে, তা ইউপিএ জামানায় ২০০৯ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী টার্মিনালের যে অংশটি উদ্বোধন করেছিলেন, তা অক্ষত আছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ও ‘ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন’ ঘটনার তদন্ত করবে। দুপুর দুটো পর্যন্ত ১ নম্বর টার্মিনাল থেকে সমস্ত উড়ান বাতিল করা হয়েছিল। যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে ১ নম্বর টার্মিনাল খালি করে দিয়েছে দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞ কমিটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত ১ নম্বর টার্মিনালের পুরো ভবনটিই বন্ধ থাকবে বলে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আহতরা পাবেন ৩ লক্ষ টাকা করে। দিল্লি বিমানবন্দরের দুর্ঘটনার পর দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের পরিকাঠামো পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ দফতর। দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনাল থেকে কেবল ইন্ডিগো ও স্পাইস জেটের অভ্যন্তরীণ উড়ানগুলির কাজ পরিচালিত হয়ে থাকে। এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরও দুটি টার্মিনাল রয়েছে। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলির একটি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে দিনে প্রায় ১,৪০০টি বিমান চলাচল করে এই বিমানবন্দর থেকে।
Feature image credit- X handle.