সব বাধাই কাটল, ভারতের কাছে 'এফ-৪১৪' প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাইডেনের সিদ্ধান্তে মার্কিন কংগ্রেসের সম্মতি - nagariknewz.com

সব বাধাই কাটল, ভারতের কাছে ‘এফ-৪১৪’ প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাইডেনের সিদ্ধান্তে মার্কিন কংগ্রেসের সম্মতি


ডেস্ক রিপোর্ট: যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক জেট ইঞ্জিন এফ-৪১৪ ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বানাবে আমেরিকা।‌ জুনে মোদীর আমেরিকা সফরেই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন সংস্থা ‘জিই অ্যারোস্পেস’ ও ‘ভারতের হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর মধ্যে ‘ম‌উ’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বুধবার এই চুক্তিতে সায় দিয়েছে আমেরিকান কংগ্রেস। আমেরিকার আইনসভায় ছাড়পত্র মেলায় সমঝোতা চুক্তি কার্যকর করার পথে আর কোনও বাধা রইল না। এখন থেকে জিই অ্যারোস্পেস-এর সহায়তায় নিজেদের কারখানায় জেট ইঞ্জিন ‘এফ-৪১৪’র উৎপাদন করতে পারবে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা হ্যাল। যা ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাল্কা যুদ্ধবিমান বা লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টে (এলসিএ) এমকে-২ এর উৎকর্ষ সাধনে কাজে লাগবে।

ইতিহাসে প্রথমবার এমন সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান তৈরিতে ভারত এখনও পিছিয়ে।‌ আমেরিকার থেকে আধুনিক জেট ইঞ্জিন ‘এফ-৪১৪’র প্রযুক্তি লাভ ও দেশেই তার উৎপাদন ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের জন্য নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি অন্য দেশের কাছে হস্তান্তরের প্রশ্নে আমেরিকা বরাবরই স্পর্শকাতর।‌ এমনকি মিত্র দেশের কাছেও জেট ইঞ্জিনের প্রযুক্তি সরবরাহ করে না আমেরিকা। ইতিহাসে‌ এই প্রথমবার অপর কোন‌ও দেশের সঙ্গে নিজের যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের প্রযুক্তি শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন প্রশাসন। আমেরিকান কংগ্রেস বেঁকে বসলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাইলেও ভারতের কাছে ‘এফ-৪১৪’র প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারতেন না।‌ কারণ আমেরিকায়, আইনসভার সম্মতি ছাড়া এই ধরণের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে পারেন না খোদ প্রেসিডেন্ট‌ও।

চিনকে রুখতে ভারতকে প্রযুক্তি আমেরিকার

আর দিন কয়েক বাদেই দিল্লিতে বসছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভারতকে ‘এফ-৪১৪’ প্রযুক্তি দেওয়ায় সেনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ কোন‌ও আপত্তি না তোলায় জি-২০ সম্মেলন চলাকালীন‌ই দুই দেশের মধ্যে এই নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হয়ে যাবে বলে মনে করছে প্রতিরক্ষা মহল।

আমেরিকা কেন নিয়ম ভেঙে যুদ্ধ বিমানের প্রযুক্তি ভারতকে দিল? আসলে চিনকে মোকাবিলায় ভারতকে পাশে চাইছে হোয়াইট হাউস। চিনকে রুখতে নিজের আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করা জরুরী ভারতের জন্য‌ও। যুদ্ধবিমান নির্মাণে ভারতের যে দুর্বলতা আছে, ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশ কোনও দিনই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী ও চিনের সমকক্ষ হতে পারবে না।

মোদী সরকারের বড় সাফল্য

কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণ রাখতে চাইলে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে তার দাবি বিবেচনা করতে হবে- ওয়াশিংটন প্রশাসনকে অনেক আগে থেকেই এই বার্তা দিয়ে আসছিল সাউথ ব্লক। শেষে দিল্লির দাবি মেনে নিয়ে ‘এফ-৪১৪’ প্রযুক্তি ভারতের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজি হয়ে যায় আমেরিকা। যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি পারতপক্ষে কেউ কাউকে দেয় না। ‘এফ-৪১৪’ ইঞ্জিন নির্মাণে হ্যালের সঙ্গে আমেরিকার ‘জিই অ্যারোস্পেস’-এর চুক্তি মোদী সরকারের জন্য একটা বড় সাফল্য বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

৮০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে জিই

এখন হ্যালের কারখানায় যে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্টগুলি (Mk2) নির্মিত হচ্ছে তার মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অংশ দেশীয় প্রযুক্তিজাত। আমেরিকার সঙ্গে এফ-৪১৪ চুক্তি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর থেকে হ্যালের তৈরি যুদ্ধবিমানের ৭৫ শতাংশ‌ই হবে দেশীয় প্রযুক্তিজাত। চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকার ‘জিই অ্যারোস্পেস’ ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ‘জেট ইঞ্জিন এফ-৪১৪’র ৮০ শতাংশ প্রযুক্তি ‘হ্যাল’-এর কাছে হস্তান্তর করবে।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *