এক লপ্তে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন অসম্ভব! বহু দফায় পঞ্চায়েত ভোট চায় বিজেপি - nagariknewz.com

এক লপ্তে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন অসম্ভব! বহু দফায় পঞ্চায়েত ভোট চায় বিজেপি


কলকাতা: পর পর আদালতের গুঁতো খেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তো কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল কিন্তু এক লপ্তে ৮২২ কোম্পানি বাহিনীর মোতায়েন কীভাবে সম্ভব? বাইশ জেলা জুড়ে ৬১ হাজার ৬৩৬টি বুথে পঞ্চায়েত ভোট একদিনে হবে আগামী ৮ জুলাই। কয়েক দফায় ভোটগ্রহণ করা না হলে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। সে’দিন‌ই পঞ্চায়েত ভোট কয়েক দফায় ভাগ করে দেওয়ার দাবি তোলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুক্রবার আরও জোরালো ভাবে এক‌ই দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

পঞ্চায়েত ভোটে সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে এস‌এলপি দায়ের করলেও তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। এর পরেই ২২ জেলার জন্য মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানায় নির্বাচন কমিশন। কমিশন আদালতের নির্দেশ নিয়ে ছেলেখেলা করছে, এই অভিযোগে বিরোধীরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমিশনকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের থেকে বেশি সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে বলে‌ কমিশনকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

দরকার আর‌ও ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী

আদালতের দেওয়া সময়সীমা পেরোনোর আগেই বৃহস্পতিবার আরও ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন বাহিনী চেয়ে আবেদন করার পর পরই বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী বরাদ্দ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আগেই কমিশনের কথা মতো ২২ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল অমিত শাহের দফতর। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর আশ্বাস পাওয়া গেল। বাকি আরও ৪৮৫ কোম্পানি। কিন্তু এই বাহিনী মিলবে কবে?

শুক্রবার বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে আরও একটা চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে একসঙ্গে ৮০০ কোম্পানি বাহিনী বাংলায় পাঠানো যথেষ্ট‌ই চাপের। ৮২২ কোম্পানি মানে ৮২ হাজার ২০০ জ‌ওয়ান। এক সঙ্গে কেন্দ্রের বিভিন্ন বাহিনীর এত বিপুল সংখ্যক জ‌ওয়ান বাংলায় পাঠানো কার্যত অসম্ভব বলেই দিল্লি থেকে খবর পেয়েছেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোট কয়েক দফায় ভাগ করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

দফা বাড়ানো ছাড়া সমাধান দেখছেন না শুভেন্দু

এ’দিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যদি ২০১৩ র মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট করতে হয়। সব গ্রামীণ বুথগুলিকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দিতে হয়, তাহলে দফা বাড়ানো ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার টাকা দিতে হয়েছিল রাজ্যকে। কিন্তু এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে তারাই প্রোভাইড করবে। সমস্যা হল রাজীব সিনহাকে নিয়ে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছে, কথা ও নির্দেশের বাইরে যেতে চাইছেন না।” শুভেন্দু মনে করেন, “কমিশনারকে সরানো বা তার উপর নজরদারি করানোর জন্য স্পেশাল অবজার্ভার নিয়োগ করা ছাড়া উদ্ভূত সমস্যার আর কোনও সমাধান নেই।” শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “কমিশনের লোকেরাই বলছেন তাঁরা কিছু জানেন না। সঞ্জয় বনশাল, রাজীব সিনহা বসে সব ঠিক করছেন।”

আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে পারে কমিশন

রাজ্য সরকারের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোট ৫ দফায় নিয়েছিলেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে। তাই সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে অসুবিধা হয় নি কমিশনের। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন‌ও অনেক আগে থেকেই বিধানসভা-লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। কোথায় কত বাহিনী লাগবে, সেই অনুযায়ী ভোটের দফা আগেই ঠিক করে ফেলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন।‌ ফলে লোকসভা-বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্যে রাজ্যে বাহিনী মোতায়েন করতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে ভোটের ঘোষণা। এক দফায় ভোট। প্রথমে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কোনও ইচ্ছেই ছিল না রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। পরে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ভোট করাতে বাধ্য হচ্ছে কমিশন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রত্যেকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই পরিস্থিতিতে অপ্রতুলতার কারণে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে ব্যর্থ হলে কমিশনকে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে।

Feature Image is reprsentational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *