রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে অনুগত রাজীব‌ই, দায়িত্ব নিয়েই বললেন, 'পঞ্চায়েত ভোট কবে জানি না' - nagariknewz.com

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে অনুগত রাজীব‌ই, দায়িত্ব নিয়েই বললেন, ‘পঞ্চায়েত ভোট কবে জানি না’


কলকাতা: বিতর্ক আর না বাড়িয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজীব সিনহার নামেই অনুমোদন দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন থেকে ছাড়পত্র আসতেই বুধবার দুপুরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন রাজীব। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবেই চেনে আমলামহল। আমলা হিসেবে অবসর নেওয়ার পরেও রাজীব সিনহাকে ছেড়ে দেন নি মমতা। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে দেওয়া হয়। এদিন নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন রাজীব।

গত ২৮ মে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সৌরভ দাসের মেয়াদ শেষ হয়। নবান্ন-রাজভবন টানাপোড়েনের জেরে এতদিন পর্যন্ত অভিভাবকহীন ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সৌরভ দাস কখনও এমন পদক্ষেপ করেন নি, যাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরাগভাজন হতে হয়। তারপরেও সৌরভ দাস পদে থাকতে থাকতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করিয়ে নেয় নি রাজ্য সরকার। মীরা পান্ডের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ নিয়ে অত্যন্ত সাবধানী মমতা। খুব অনুগত আমলা না হলে পদটিতে কাউকে বসান না তিনি। এবার‌‌ও প্রথমে একমাত্র রাজীব সিনহার নাম‌‌ই সুপারিশ করে সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে মাত্র একজনের নাম সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে দেখে সম্মতি দিতে আপত্তি জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এরপর রাজীবের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের নাম‌ও সুপারিশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠায় নবান্ন। কিন্তু নবান্নের কাছে তিনজনের নামের প্যানেল চেয়ে পাঠান সিভি আনন্দ বোস। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সময় তিনজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোই দস্তুর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৃতীয় নাম রাজভবনে পাঠাতে অস্বীকার করে নবান্ন।

নবান্ন ও রাজভবনে এই টানাটানির জেরে দশদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ শূন্য পড়েছিল। রাজ্যে এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন হ‌ওয়ার কথা। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ‌ও খুলেছিলেন মমতা। মমতা বলেছিলেন, তিনি মাথানত করবেন না। অর্থাৎ রাজ্যপালের কথা মতো তৃতীয় কার‌ও নাম সুপারিশ করে পাঠানো হবে না। এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক আর না বাড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার নামেই ছাড়পত্র দেন সিভি আনন্দ বোস।

দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন‌ই রাজীব সিনহা বুঝিয়ে দেন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তাঁর কোন‌ও মাথাব্যথা নেই। সাংবাদিকেরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করলে নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমি কী জানি! সরকার সব জানে।” রাজীব সিনহা বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে, তাদের মতামত জেনে কমিশন একটি তারিখ ঘোষণা করে। তাই পঞ্চায়েত ভোট কবে, তা সরকার‌ই বলতে পারবে। আমি বলতে পারব না।”

সদ্য নিযুক্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কখনোই নবান্নের আজ্ঞার বাইরে যাবেন না রাজীব সিনহা। কাজেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন নতুন অভিভাবক পেলেও রাজ্যে কবে পঞ্চায়েত ভোট, তা নিয়ে এখন‌ই ধোঁয়াশা কাটছে না। পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজীবের মাথাব্যথা নেই, বোঝা গেল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করানো নিয়ে রাজীব আদৌ কোনও তাগিদ অনুভব করছেন তো? মমতা অনুগত বলে পরিচিত এই আমলা মুখে অবশ্য বলেছেন, “আমার কাজ হল নিয়ম মেনে নির্বাচন করানো।” সময়ে বোঝা যাবে তিনি সাংবিধানিক পদের গরিমা না ব্যক্তি বিশেষের মন- কোনটা রক্ষা করেন।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *