কলকাতা: কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সাড়া দিলেন না বিচারপতি। শুক্রবার (১২ মে) মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা অভিষেকের আইনজীবীকে সাফ জানিয়ে দেন, “আদালতের দরজা সবসময় খোলা। দরকার পড়লেই আসবেন। কিন্তু কোনও রক্ষাকবচ নয়।” এই মামলা নিয়েই যত কান্ড! মামলাটি ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তলের চিঠি নিয়ে জলঘোলা হতেই মামলা যায় জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তদন্তের স্বার্থে সিবিআই অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে- বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিতেই সুপ্রিম কোর্টে ছোটেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ।
হাকিম বদলে হুকুম আরও কড়া!
এরপরের তোলপাড় করা ঘটনা সবার জানা হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি হাতিয়ার করছিলেন কলকাতার একটি বাংলা টিভি চ্যানেলে দেওয়া জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাতকারকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে যায়। মামলা স্থানান্তরের ফলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বস্তি পাবেন- এমন আশায় বেশ উল্লসিত হয়ে ওঠে তৃণমূল শিবির।
কিন্তু অমৃতা সিনহার বেঞ্চে কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হতেই তৃণমূল নেতাদের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে গত সোমবার (৮ মে) মামলাটির প্রথম শুনানি। সে’দিনই অভিষেককেও মামলার পার্টি করার নির্দেশ দেন বিচারপতি। বিচারপতি অমৃতা সিনহা অভিষেকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “তদন্তকারী সংস্থা যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। তদন্তে সহযোগিতা করতে অসুবিধা কোথায়?” তিনি আরও বলেছিলেন, “তদন্তের সময় একাধিক ব্যক্তির নাম আসতেই পারে। একজনের নাম এলে তিনি ( অভিষেক) সহযোগিতা করবেন না কেন? তিনি (অভিষেক) একটু বেশিই আশঙ্কায় ভুগছেন।”
অভিষেকের আইনজীবীর দুটি আবেদনই খারিজ!
বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবারই কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পার্টি করা হয়। যদিও সে’দিনই এই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহার কাছে আর্জি পেশ করেন অভিষেক। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে মামলাটির শুনানি শুরু হতেই বিচারপতির কাছে অভিষেককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁর আইনজীবী। সিবিআই-এর জেরার হাত থেকে বাঁচতে অভিষেককে অন্তর্বর্তীকালীন রক্ষাকবচ দেওয়ারও আর্জি জানান তিনি। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে সরেন নি বিচারপতি সিনহা। অভিষেকের আইনজীবীর দুটি আবেদনই খারিজ করে দেন বিচারপতি।
অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদে বাধা নেই সিবিআইয়ের
সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি। এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মামলাটির একটি পক্ষ। সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে বাঁচতেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন অভিষেক। সুপ্রিম কোর্ট প্রথমে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিলেও পরে তা তুলে নিয়ে মামলা হাইকোর্টেই ফেরত পাঠায়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ বদলের নির্দেশ দেওয়ায় একটু আশার আলো দেখছিলেন কুণাল ঘোষের মতো অভিষেকপন্থী তৃণমূল নেতারা। কিন্তু বিচারপতি অমৃতা সিনহা শুধু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখলেন না উপরন্তু অভিষেককেও মামলার পার্টি করে দিলেন। শুক্রবার বিচারপতি সিনহা অভিষেককে সিবিআই-এর জেরার উপরে কোনও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশও দেন নি। ফলে তদন্তকারী সংস্থার তরফে যে কোনও মুহূর্তে অভিষেককে তলব করতে বাধা রইল না বলেই মনে করছে আইনজ্ঞ মহল।
কুন্তল পত্রে অভিষেকের ঝামেলা আরও বাড়ল
নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ জেল থেকে হেস্টিংস থানাকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলতে তাঁকে বলপ্রয়োগ করছে ইডি-সিবিআই।” নিম্ন আদালতেও একই অভিযোগে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। কুন্তলের নাম না করে বীরভূমের একটি জনসভায় প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন অভিষেক। কুন্তলের চিঠি ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাপান উতর শুরু হয়। মামলা হাইকোর্টে গেলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, “এই ঘটনায় তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই।” নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে ধৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ অভিষেকের নাম উল্লেখ করে চিঠি লিখে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে আরও বিপাকে ফেলে দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিষেক ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের কোনও প্রভাবশালী নেতার প্ররোচনাতেই কুন্তল ঘোষ পুলিশ ও আদালতকে চিঠি লিখেছিলেন বলে একটি মহলের অনুমান।
Feature image is representational.